অর্থ খরচ করতে না পারায় পদ্মা সেতুতে বরাদ্দ কমছে

জাজিরায় পদ্মাসেতুর সপ্তম স্প্যান বসানোর আগমুহূর্তে। মাওয়া ঘাট এলাকা, ২৩ জানুয়ারি। ছবি: কমল জোহা খান
জাজিরায় পদ্মাসেতুর সপ্তম স্প্যান বসানোর আগমুহূর্তে। মাওয়া ঘাট এলাকা, ২৩ জানুয়ারি। ছবি: কমল জোহা খান
>
  • সংশোধিত এডিপি
  • এডিপিতে ৪ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে
  • সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কমানো হচ্ছে ১ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা

চলতি ২০১৮–১৯ অর্থবছরে পদ্মা সেতুতে বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) পদ্মা সেতুর জন্য ৪ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। কিন্তু সেতু নির্মাণের কাজে অগ্রগতি সন্তোষজনক না হওয়ায় এখন সেই বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে সেতু বিভাগ থেকে ১ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দ কমানোর কথা বলা হয়েছে। সংশোধিত এডিপিতে পদ্মা সেতুতে ২ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব করেছে সেতু বিভাগ।

চলতি জানুয়ারি মাসের শুরুতে সংশোধিত এডিপি প্রণয়নের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সব মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে বরাদ্দ সংশোধনের প্রস্তাব আহ্বান করে। সেখানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোন কোন প্রকল্পে বরাদ্দ কমানো বা বৃদ্ধি করতে হবে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি সেতু বিভাগ থেকে পদ্মা সেতুতে বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব করেছে। শিগগিরই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংশোধিত বরাদ্দ চূড়ান্ত করতে বৈঠক করবেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই সংশোধিত এডিপি চূড়ান্ত হবে। সেখানে পদ্মা সেতুতে সংশোধিত বরাদ্দও চূড়ান্ত করা হবে। যেহেতু প্রকল্পটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত, তাই অর্থবছরের শেষের দিকে যদি আরও অর্থের প্রয়োজন হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অন্য প্রকল্প থেকে সেই অর্থ সমন্বয় করতে পারবে।

পদ্মা সেতু হলো বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার প্রকল্প। এই প্রকল্পের কাজ সবচেয়ে বেশি এগিয়েছে। ইতিমধ্যে সেতুর ছয়টি স্প্যান সংযোজন করা হয়েছে। এক কিলোমিটারের মতো সেতু দৃশ্যমান হয়েছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রায় ৬০ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। খরচ হয়েছে ১৭ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা। কয়েক দফায় খরচ বাড়িয়ে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।

প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর মাসে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজের সন্তোষজনক অগ্রগতি না হওয়ায় আরও এক বছর সময় বাড়ানো হয়েছে। সেই হিসাবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো সেতু নির্মাণ কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

চলতি অর্থবছরে এই সেতুর জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ৪ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। সেখানে অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে অর্থাৎ জুলাই–ডিসেম্বর সময়ে ১ হাজার ১০৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তাই সেতু বিভাগ এখন বরাদ্দ কমিয়ে ২ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করেছে। সেই হিসাবে সংশোধিত এডিপির পুরোটা খরচ হলেও আগামী জুন মাস পর্যন্ত ১৯ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হবে না। আর নির্ধারিত সময়ে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করতে হলে বাকি ছয় মাসে ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করতে হবে।

২০০৭ সালে প্রথম পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। তখন এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে সেতুতে রেলপথ সংযুক্ত করে। এরপর কয়েক দফা খরচ বৃদ্ধি করে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকায়।

এই প্রকল্পের সিংহভাগ টাকা বিশ্বব্যাংকের দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০১২ সালে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায়। এরপর সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।