উন্মুক্ত দরপত্রের পক্ষে অর্থমন্ত্রী

আ হ ম মুস্তফা কামাল
আ হ ম মুস্তফা কামাল

সরকারি কেনাকাটায় সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (ডিটিএম) চান না অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। কেনাকাটায় স্বচ্ছতার স্বার্থে তিনি চান যথাসম্ভব উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি (ওটিএম)। অর্থমন্ত্রী বলেন, পণ্য বা সেবা কেনাকাটা ওটিএমে হলে তা ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক হয়।

সচিবালয়ে গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন। বৈঠকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্প ডিপিএমে বাস্তবায়নের নীতিগত অনুমোদন চাওয়া হলেও তা ফেরত পাঠানো হয় বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

টানা তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারের এ দফার প্রথম অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক গতকাল অনুষ্ঠিত হয়। অর্থমন্ত্রী হিসেবে মুস্তফা কামালও গতকাল এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের চর-বাগাদী পাম্পহাউস ও হাজিমারা রেগুলেটর পুনর্বাসন’ শীর্ষক প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন পায় কয়েক মাস আগে। প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) বলা ছিল, এটি বাস্তবায়িত হবে ওটিএমে। গতকালের বৈঠকে প্রকল্পের ভৌত কাজ ওটিএমের পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনের কথা বলে ডিটিএমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অনুমোদন চাওয়া হয়।

অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পটি যখন পরিকল্পনা কমিশনে আসে, তখন বলা ছিল যে এটি ওটিএমে সম্পন্ন করতে হবে। যেহেতু মোটর, পাম্পহাউস, সাবস্টেশনের মতো ছোট ছোট কাজ; ওটিএমে করলে বেশি সময় লাগতে পারে মনে করে বাস্তবায়নকারী সংস্থা ডিটিএমে যেতে পারে। কিন্তু আমাদের সিদ্ধান্ত স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি হচ্ছে কোথাও কোনো অনিয়ম, ব্যত্যয়, ত্রুটি ও বিচ্যুতি তিনি দেখতে চাচ্ছেন না।

ঠিক দামে, ঠিক কাজটি করার কথা বলে মুস্তফা কামাল বলেন, জনগণের জন্য উপযুক্ত দামে কোনো পণ্য কিনতে বা কোনো সেবা দিতে ব্যর্থ হলে সরকারকে অনেক মূল্য (কস্ট) দিতে হবে। মূল্য এখানে অর্থে নয়, অপচয় অর্থে। অপচয় রোধ করার জন্য স্বচ্ছতার নিরিখে বা স্বচ্ছতার তাগিদে চেষ্টা করা হবে প্রতিটি সরকারি কেনাকাটা কার্যক্রম ওটিএমে করতে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘যদি ওটিএমে যাওয়া যায়, তাহলে সবার জন্য প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। তখন বুঝতে পারব যে দাম দেওয়া হচ্ছে, তা যথাযথ। সে কারণেই ফেরত পাঠিয়েছি। বলেছি, প্রকল্পটি একনেক যেভাবে অনুমোদন করেছিল, সেভাবেই তা করতে হবে।’

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, একনেক থেকে ওটিএমে প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে অনেকেই পরে কেনাকাটার সময় ডিটিএমে চলে যায়। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় দীর্ঘ বছর থেকে এ কাজ বেশি করে আসছে। বিষয়টি সদ্য সাবেক অর্থমন্ত্রীর নজরে এলেও তিনি তা ঠেকাতে পারেননি।

ক্রয় কমিটি

অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পাশাপাশি গতকাল সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে ৯টি প্রস্তাব উপস্থাপিত হলেও অনুমোদিত হয় ৫টি।

এর মধ্যে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছাকাছি গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল রেললাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। ৩৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ের এ কাজ পেয়েছে ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্টস।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পরামর্শক নিয়োগ করতে দেরি হয়ে গেছে। আমাদের মূল সমস্যা ছিল ভূমি অধিগ্রহণ। এখন আর সেই সমস্যা নেই। আশা করছি নির্ধারিত সময় ২০২২ সালের মধ্যেই প্রকল্পটি শেষ হবে।’

এদিকে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন, কুয়েত ও ফিলিপাইন থেকে ১৪ লাখ ২০ হাজার টন জ্বালানি তেল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করেছে ক্রয় কমিটি। এতে ৬ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে সাংবাদিকদের জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোসাম্মাৎ নাসিমা বেগম।

‘বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নাধীন প্রি–পেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট ফর ডিস্ট্রিবিউশন কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ জোন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ৫০ হাজার ৫৭৫টি প্রি–পেমেন্ট মিটার এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ সেবাসহ যন্ত্রাংশ ক্রয়ের প্রস্তাবও অনুমোদিত হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের আওতায় চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারায় গ্যাস এবং আরএলএনজিভিত্তিক ৫৯০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের একটি প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। এ ছাড়া ‘এলেঙ্গা–জামালপুর জাতীয় মহাসড়ক প্রশস্তকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের ক্রয়প্রস্তাবও অনুমোদিত হয়। এতে ব্যয় হবে ১০১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।