চীন কেন চাপে?

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খুব দ্রুত একটা বাণিজ্য চুক্তিতে যাওয়ার চেষ্টা করছে চীন। গত ডিসেম্বরে নিজেদের মধ্যে কিছুদিনের জন্য শুল্ক-বাণ ছোড়াছুড়ি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় দুই দেশ। আর্জেন্টিনায় অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলন শেষে রাজধানী বুয়েনস এইরেসে এক বৈঠকে বসে ১ জানুয়ারি থেকে তিন মাস নতুন করে কোনো বাণিজ্য শুল্ক আরোপ না করার প্রস্তাবে সম্মত হন দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। গত বছর বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এটিই ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সি চিন পিংয়ের প্রথম বৈঠক।

তিন মাসের সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে কিছু একটা করতে চায় চীন। এ ব্যাপারে বিশেষ করে চীন একধরনের তাড়া অনুভব করছে। কারণ, ফের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হলে তা যে চীনের অর্থনীতির জন্য মোটেই ভালো হবে না, তা বেশ বুঝতে পারছে বেইজিং। চীন কেন এতটা উদ্বিগ্ন?

আজ রোববার বিবিসি অনলাইনের এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে বলা হয়, আসলে বাণিজ্যযুদ্ধের জন্যই চীনের অর্থনীতি শ্লথ হচ্ছে—এখনই এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। তবে এটা অবশ্যই দেশটির সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

গত সপ্তাহে যে প্রবৃদ্ধির তথ্য প্রকাশ করেছে চীন, তাতে দেখা গেছে, ১৯৯০ সালের পর সবচেয়ে ধীরগতিতে চলছে দেশটির অর্থনীতি। সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ভোক্তার অনুভূতি ও খুচরা ক্রয়ে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলোও সংকটে পড়েছে।

অর্থনীতি দুর্বল হওয়ার জন্য চাপে আছে চীন সরকার। তবে দেশটির হর্তাকর্তারা তা প্রকাশ্যে স্বীকার করেননি। কিন্তু তাদের তৎপরতায় চাপটা বেশ বোঝা যায়। চীনা নেতৃত্ব দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি আগেই দিয়ে রেখেছে। এখন অর্থনীতি উল্টো পথে চললে সরকারের ওপর চাপ আসাটাই স্বাভাবিক।

ইতিমধ্যে বিদেশি কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসা বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে চীনের বাইরে নজর দিচ্ছে। তবে তারা পুরোপুরি চীন থেকে সরে যায়নি।

সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১০০টি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩০ শতাংশ তাদের ব্যবসা চীন থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় নিয়ে নিয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে কর্মসংস্থান নিয়ে চীন বিপদে পড়বে। দেশটিতে বেকারত্বের সমস্যা প্রকট হবে।

এদিকে হুয়াওয়ে নিয়েও বিপাকে আছে চীন। এই চীনা জায়ান্ট বিশ্বের বৃহৎ টেলিকম নেটওয়ার্ক সরঞ্জামের নির্মাতা। আর তারা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন নির্মাতা। ব্যবসায় হুয়াওয়ের প্রবৃদ্ধি লক্ষণীয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা ঘিরে পশ্চিমাদের সন্দেহ এখন আরও ঘনীভূত হয়েছে। পশ্চিমাদের অভিযোগ, হুয়াওয়ে তাদের টেলিকম ব্যবসার মাধ্যমে গ্রাহকের তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে। এই তথ্য তারা চীন সরকারের কাছে হস্তান্তর করছে।

শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র এমন সন্দেহ প্রকাশ করে হুয়াওয়ের টেলিকম সরঞ্জাম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ফাইভজি নেটওয়ার্ক অবকাঠামো নির্মাণে হুয়াওয়ের পণ্য বর্জনের ঘোষণাও দেয় দেশটি। যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদেশগুলোকে হুয়াওয়ের পণ্য বর্জনের পরামর্শ দিচ্ছে। এ কারণে চাপে আছে হুয়াওয়ে, তথা চীন।

চাপে কেবল একা চীন নেই, যুক্তরাষ্ট্রও আছে। চীনে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো অভিযোগ করেছে, তাদের ব্যবসার ওপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্কের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তারা চায় যুক্তরাষ্ট্র একটি ভালো চুক্তিতে যাক। ট্রাম্প প্রশাসনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য ভালো নেই—এমনটা মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় ১ মার্চের আগে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে হবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রকে। আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটনে এসব বিষয় নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।