দুই দিনের মধ্যে মামলা

>

• রিজার্ভের অর্থ চুরি
• বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের একটি আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান কাল মামলা করবে
• না হলে পরদিন মামলাটি হবে

রিজার্ভ চুরির অর্থ ফিরিয়ে আনতে ও দোষীদের বিচারে অবশেষে মামলা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামীকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে এ দেওয়ানি মামলা হবে। কোনো কারণে কাল না হলে বৃহস্পতিবার মামলাটি হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের একটি আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান এ মামলা করবে।

মামলাটি করা হচ্ছে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) থেকে ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার বা ৫৫৭ কোটি টাকা আদায়ে। এ মামলায় সম্ভাব্য আসামি হিসেবে যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে, তারা হলো আরসিবিসি ও তাদের কয়েকজন কর্মকর্তা, অর্থ স্থানান্তরকারী কোম্পানি ফিলরেম ও তার কর্মকর্তা, ক্যাসিনো মালিক ও সুবিধাভোগী বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এ মামলায় পূর্ণ সহায়তা দেবে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক (ফেড)। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ফেডের একটি চুক্তিও স্বাক্ষর হবে। এর সবই হবে আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে।

মামলা দায়েরের বিষয়টি তদারকির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তিন সদস্যের একটি দল গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রে গেছে। মামলা দায়ের শেষে ১ ফেব্রুয়ারি তাদের দেশে ফেরার কথা রয়েছে। মামলায় সহায়তা করতে তাদের সঙ্গে যোগ দেবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি।

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে ফেডে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া ২ কোটি ডলার ফেরত আসে। আর ফিলিপাইনে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে এখনো উদ্ধার হয়নি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ৫৫৭ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘চলতি সপ্তাহেই মামলা দায়ের করা হবে। এ জন্য আমাদের প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। মামলায় কাদের আসামি করা হবে, তা দায়েরের পরই বোঝা যাবে।’

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ছিল বৃহস্পতিবার। পরের দুই দিন সরকারি ছুটি হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব থেকে অর্থ বের করতে সেদিন রাতকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল। ওই রাতেই ১৯৩ কোটি ডলার বের করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে সব আদেশ কার্যকর না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত চুরি হয় ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার।

অর্থ স্থানান্তরের বার্তা আদান-প্রদানকারী আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সেবাদাতা সংস্থা সুইফটকে (সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টার ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন) হ্যাক করেই এ অর্থ চুরি করা হয়। সুইফটের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তরের কোনো আদেশ দেওয়া হলে তার একটি কপি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আদেশদাতা প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রিন্ট হওয়ার কথা থাকলেও এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। ফলে ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি এসব অর্থ পরিশোধের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জানতে চায় ফেড। এরপরই বিষয়টি জানতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। তার আগেই অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার স্থানান্তর হয়ে যায়।

অর্থ স্থানান্তর হয়ে যাওয়ার পর ১১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে ফোন করে টাকা উদ্ধারের বিষয়ে সহায়তা চান। ১৪ ফেব্রুয়ারি ফিলিপাইনে যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধিদল। এরপর দফায় দফায় সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, গভর্নরসহ আরও অনেকে টাকা উদ্ধার নিয়ে ফিলিপাইন, সুইফট কর্তৃপক্ষ ও ফেডের সঙ্গে সভা করে। ঘটনার তিন বছরের মাথায় এখন মামলা করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অর্থ চুরির ঘটনা ঘটলেও তা প্রকাশ পায় মার্চ মাসে। এ ঘটনায় পদত্যাগ করতে হয় তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমানকে। দুই ডেপুটি গভর্নরকেও সরিয়ে দেয় সরকার। ঘটনা তদন্তে সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে কমিটি করে সরকার। বারবার আশ্বাস দিলেও সেই প্রতিবেদন প্রকাশ করেননি সদ্য বিদায়ী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

এদিকে এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে মতিঝিল থানায় করা মামলার তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। দায়িত্ব পাওয়ার পর সিআইডি বারবার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদালতের কাছ থেকে সময় চেয়ে নিয়েছে।