অর্ধেকেরই ভ্যাট নিবন্ধন নেই

>

• শত শত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবসা শনাক্তকরণ নম্বর নেই
• পুরান ঢাকা ও এর আশপাশের প্রায় ৪৯ শতাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কোনো বিআইএন নেই
• এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা ভ্যাট দেন না

শত শত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবসা শনাক্তকরণ নম্বর (বিআইএন) নেই। শুল্ক-কর দেওয়ার মতো ব্যবসা-বাণিজ্য থাকলেও এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা তা দেন না। বছরের পর বছর পার পেয়ে যাচ্ছেন। সবই পুরোনো কথা। কিন্তু এক জরিপে উঠে এসেছে, পুরান ঢাকা ও এর আশপাশের প্রায় ৪৯ শতাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কোনো বিআইএন নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট দেন না।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ঢাকা দক্ষিণ কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট এই জরিপ করেছে। গত বছর থেকে এই জরিপ শুরু হয়। সম্প্রতি জরিপের হালনাগাদ ফলাফল এনবিআরে পাঠানো হয়েছে। জরিপটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।

ঢাকা দক্ষিণ কমিশনারেটের আওতায় পুরান ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় ৬৯টি ছোট-বড় বিপণিবিতান ও শপিং মলে এই জরিপ হয়। যেসব এলাকায় জরিপ হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ইসলামপুর, চকবাজার, নবাবপুর, লালবাগ ও বায়তুল মোকাররম এলাকা।

পুরান ঢাকা ও আশপাশের এলাকার ৮ হাজার ৭৫২টি প্রতিষ্ঠানের ওপর এই জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে ৪ হাজার ২৭৩টি প্রতিষ্ঠানের কোনো বিআইএন নেই। তার মানে হলো, ওই অঞ্চলের ৪৯ শতাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ভ্যাট আদায়ের নিবন্ধন নেই। অন্যদিকে বিআইএন আছে, এমন প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেছে ৪ হাজার ৪৭৯টি। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪ শতাংশ হারে ভ্যাট দেয় ৫৭৫টি প্রতিষ্ঠান। আর প্যাকেজ ভ্যাট দেয় ৬৫১টি প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে মোট ১ হাজার ২২৬টি প্রতিষ্ঠান ভ্যাট দেয়। বাকি ৩ হাজার ২০৯টি প্রতিষ্ঠান বিআইএন নিলেও নিয়মিত ভ্যাট দেয় না।

সমীক্ষাটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের সাবেক কমিশনার কাজী মোস্তাফিজুর রহমান। সম্প্রতি তিনি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে বদলি হয়েছেন। যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠানের বিআইএন নিবন্ধন নেই, তাদের নিবন্ধন নেওয়ার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে নিবন্ধন নিয়েছে। মূলত ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধির জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, ভ্যাটযোগ্য হলেও অবশ্যই নিবন্ধন নেওয়া উচিত।

আগামী জুলাই মাস থেকে নতুন ভ্যাট আইন চালু করার কথা রয়েছে। নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ইতিমধ্যে আগামী অর্থবছর থেকে ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন। নতুন আইন বাস্তায়নের পর ভ্যাটের সব কার্যক্রমই অনলাইনে হবে। এ জন্য ইলেকট্রনিক বিআইএন বা ইবিআইএন নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত সারা দেশে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭০৫টি প্রতিষ্ঠান ইবিআইএন নিয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৯৪টি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নিয়মিত ভ্যাট হার প্রযোজ্য হবে। বাকি ৫ হাজার ১১টি প্রতিষ্ঠান টার্নওভার কর দেওয়ার জন্য ইবিআইএন নিয়েছে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, সাড়ে ৮ লাখের বেশি প্রতিষ্ঠান সনাতনি পদ্ধতিতে বিআইএন নিয়েছে। এর মধ্যে নিয়মিত ৫০ থেকে ৫৫ হাজার প্রতিষ্ঠান ভ্যাট রিটার্ন দিত। এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলো এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। আবার অনেকে প্রয়োজনে বিআইএন নিয়ে এখন আর ব্যবহার করেন না।

জানতে চাইলে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ প্রথম আলোকে বলেন, ইলেকট্রনিক বিআইএন ছাড়া নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা কঠিন হবে। কিন্তু এখনো অনেক প্রতিষ্ঠান ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে ইবিআইএন নিচ্ছে। এ কারণে বাস্তবে সেই ঠিকানায় গিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। তাই এনবিআরের মাঠপর্যায়ের কার্যালয়গুলোকে এলাকাভিত্তিক এসব প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব আছে কি না—তা দেখভাল করা উচিত। নজরদারি বৃদ্ধি করলে কার্যকরভাবেই করের জাল বাড়বে।

আবদুল মজিদ,  সাবেক চেয়ারম্যান, এনবিআর
আবদুল মজিদ, সাবেক চেয়ারম্যান, এনবিআর



এনবিআর–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, গত বছরের জুন মাস থেকে পুরোনো বিআইএন ব্যবহার করার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখন আর পুরোনো বিআইএন ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তবে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা (সফটওয়্যার) চালু না হওয়া পর্যন্ত পুরোনো পদ্ধতিতেই রিটার্ন জমা ও কর পরিশোধ করতে হবে। শুধু নতুন ইবিআইএনের নম্বরটি ব্যবহার করতে হবে।

যখন পুরোপুরি অনলাইন ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে, তখন ইবিআইএন দিয়ে মূসক কার্যালয়ে না গিয়ে ঘরে বসেই ভ্যাট রিটার্ন, কর পরিশোধসহ যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে।

শিগগিরই বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) পাইলটভিত্তিক অনলাইন কার্যক্রম শুরু করা হবে। এখানে দেশের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো নিবন্ধিত। এসব প্রতিষ্ঠানের হিসাব ব্যবস্থাপনাও বেশ ভালো। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হিসাব–নিকাশ করে এসব প্রতিষ্ঠান। তাই প্রথমেই ভ্যাটের অনলাইন কার্যক্রম বড় প্রতিষ্ঠানগুলো দিয়েই শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব ভ্যাট কমিশনারেটে এই ব্যবস্থা চালু করা হবে।