পূর্ণাঙ্গ কর্মসংস্থান নীতিমালা দরকার

রিজওয়ানুল ইসলাম
রিজওয়ানুল ইসলাম

বিপুল কর্মসংস্থানের লক্ষ্য অর্জনে সরকারের উচিত একটি পূর্ণাঙ্গ কর্মসংস্থান নীতিমালা তৈরি করা। এর পাশাপাশি কর্মসংস্থানে কিছু বিশেষ কর্মসূচিও নেওয়া উচিত। বিচ্ছিন্নভাবে খাতওয়ারি পরিকল্পনা না করে একসঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়াই ঠিক হবে। নতুন সরকার কর্মসংস্থানের বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আছে। তাই এখনই এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার উপযুক্ত সময়।

আগামী পাঁচ বছরে দেড় কোটি লোকের কর্মসংস্থানকে আপাতদৃষ্টিতে উচ্চাভিলাষী মনে হতে পারে। কিন্তু লক্ষ্য বড় হলে তা অর্জনে কিছুটা ঘাটতি থাকলেও দেশের জন্য মঙ্গলজনক।

ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগে কিছুটা শ্লথগতি আছে, এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু আমি জোরের সঙ্গে বলতে পারি, বিনিয়োগ ও উৎপাদন বাড়লেই কর্মসংস্থান বাড়বে—এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। কেননা, এ দেশে কয়েক বছর ধরেই মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বেশ ভালো, কিন্তু কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার বাড়েনি, বরং কমেছে। অনেক দেশেই এমন হয়। বিনিয়োগ কোথায় হচ্ছে, সেটাই মূল বিষয়। শিল্প খাতকে অবহেলা করলে চলবে না। আমাদের অর্থনীতির এই পর্যায়ে উচ্চ শ্রমঘন শিল্পায়নের বিকল্প নেই। যেমন তৈরি পোশাক খাতে অনেক বছর ধরে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। তৈরি পোশাক খাত ছাড়া অন্য শ্রমঘন শিল্প খাতের বিকাশ কেন হচ্ছে না, এটি বড় প্রশ্ন। দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, এমনকি ভিয়েতনামেও একসঙ্গে বেশ কয়েকটি শ্রমঘন শিল্পের বিকাশ হয়েছে।

শ্রমবাজারে যে ধরনের দক্ষতা ও চাহিদা আছে, সেই ধরনের মানবসম্পদ তৈরি হচ্ছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। দুই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে চাহিদামতো দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা যেতে পারে। প্রথমত, সাধারণ শিক্ষার মাধ্যমে শ্রমবাজারের জন্য প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ সৃষ্টি করা যায়। দ্বিতীয়ত, এমন একটি সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করা হবে, যা দিয়ে যেকোনো চাকরির জন্য উপযুক্ত হবেন তরুণেরা। যেমন ইতিহাসের স্নাতক ডিগ্রিধারী হয়েও বিনিয়োগ ব্যাংকে কাজ করতে পারবেন। তবে আমি মনে করি, আমাদের অর্থনীতিতে এ ধরনের বিলাসিতা করতে পারব না। উন্নয়নের এই পর্যায়ে শিক্ষা যেন শ্রমবাজারের উপযোগী দক্ষতা সৃষ্টি করতে পারে, সেটাই অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিতে হবে।

অন্যদিকে একটি বড় সমস্যা হলো, আমরা ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ পেশা সম্পর্কে পরামর্শ দিই না। আমরা যদি শিক্ষার্থীদের ১০ বছর পরের শ্রমবাজার সম্পর্কে ধারণা দিতে পারি, তবে তাঁরা কোন বিষয়ে পড়াশোনা করবেন, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া তাঁদের জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে। 

 রিজওয়ানুল ইসলাম, সাবেক বিশেষ উপদেষ্টা, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)