পাইকারিতে দাম কমেছে, খুচরায় প্রভাব নেই

>
  • দেশে ধান-চালের অন্যতম বড় মোকাম নওগাঁয়
  • এক সপ্তাহে চালের দাম কেজিতে কমেছে ১-২ টাকা
  • চালের দামের প্রভাবে কমেছে ধানের দামও
  • দাম কমার প্রভাব ঢাকার খুচরা বাজারে পড়েনি

দেশের ধান–চালের বড় মোকাম নওগাঁয় পাইকারিতে চালের দাম কমছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে এক থেকে দুই টাকা পর্যন্ত কমেছে। এতে ধানের দামও কিছুটা পড়েছে। তবে পাইকারিতে দাম কমার কোনো প্রভাব রাজধানীর খুচরা বাজারে পড়েনি। মূলত আমনের ধান-চালের জোগান বেড়ে যাওয়ায় দাম কমেছে বলে নওগাঁ ও ঢাকার ব্যবসায়ীদের সূত্র জানায়। কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে চালের দাম স্থিতিশীল, তবে নতুন ধানের দাম কম।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত এক সপ্তাহে সব ধরনের চালের দাম স্থিতিশীল আছে। তবে এক মাসের ব্যবধানকে হিসাবে নিলে সরু ও মাঝারি চালের দাম বেড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেশির ভাগ বাজারে মোটা চাল ৩৮ থেকে ৪২ টাকা, মাঝারি চাল ৪৬ থেকে ৫৪ ও সরু চাল ৫৪ থেকে ৬৪ টাকায় বিক্রি হয়।

নওগাঁর পাইকারি বাজারে চাল ও ধানের দামের হঠাৎ পতনে সেখানকার ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা বিপদে পড়েছেন। তাঁরা বলছেন, প্রতি মণ ধানে ৫০ থেকে ১০০ টাকা এবং প্রতি কেজি চালে দুই থেকে তিন টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। মোকাম ও হাটগুলোতে ধান-চালের বিক্রিও কমে গেছে। তাঁরা বলছেন, এ বছর উৎপাদন খুব ভালো হয়েছে। সেই সঙ্গে এর আগে আমদানি করা ভারতীয় চালও রয়ে গেছে। ফলে সব মিলিয়ে দাম পড়ে গেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, নওগাঁর চালকলগুলোর গুদামে এবং চাল আড়তদারের মোকামে প্রচুর চাল মজুত আছে। চালের দাম কমে যাওয়ায় মিলমালিকেরা ধান কিনছেন না। ফলে ধানের দামও কমে গেছে। আর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্যশস্য প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকাল প্রতি কেজি মোটা চাল পাইকারিতে ৩০ থেকে ৩১ ও খুচরায় ৩৫ থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সদর বাজারের ধানের আড়তদার আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ধানের দাম কমছে। স্বর্ণা ধানের দাম মণপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা কমে এখন ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জিরাশাইল জাতের ধানের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা কমে প্রতি মণ ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নওগাঁ ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরোধ বরণ সাহা বলেন, অন্য বছরগুলোতে এই সময়ে ধানের সরবরাহ কম থাকে বলে চালের দাম কিছুটা বাড়ে। অথচ এ বছর উল্টো চিত্র, দাম কমছে। এতে যেসব ব্যবসায়ী বেশি করে চাল মজুত রেখেছিলেন, তাঁদের অবস্থা খারাপ। মোকামগুলোতে প্রচুর চালের মজুত। অথচ বাজারে পাইকারি ক্রেতা নেই।

নওগাঁর মোকাম এবং খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক-দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সরু চালের দাম প্রতি বস্তায় (৫০ কেজির বস্তা) ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। আগে যে পাইজাম প্রতি বস্তা বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৫০০ টাকায়, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩৫০ টাকায়। মিনিকেট চালের দাম কেজিতে ২–৩ টাকা কমে ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ টাকায়। মোটা চালের (স্বর্ণা-৫, গুটি স্বর্ণা, হাইব্রিড স্বর্ণা) দাম বস্তায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমে ১ হাজার ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে চলতি মাসে চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান বলেন, চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। নতুন ধানের চাল কেউ কিনছে না। কিন্তু নতুন ধানের দাম কমে গেছে।