আবারও টাকা চায় রাকাব

>

• ব্যাংকটি সাত মাস আগে একবার সরকার থেকে ২০০ কোটি পেয়েছে
• আবার নতুন করে টাকা চাইছে
• একদিকে বাড়ছে খেলাপি, অন্যদিকে মূলধনের সংকট

মূলধন ঘাটতি পূরণে সরকারের কাছে ৭৭৫ কোটি টাকা চেয়েছে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি ও কৃষিভিত্তিক শিল্প উন্নয়নে ঋণদানকারী রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। ব্যাংকটি সাত মাস আগে একবার সরকার থেকে ২০০ কোটি পেয়েছে। তাতে সংকট কাটাতে না পেরে এখন নতুন করে আবার টাকা চেয়েছে ব্যাংকটি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে ৭৭৫ কোটি টাকা চেয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি চিঠি পাঠিয়েছে রাকাব। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামের কাছে পাঠানো দুই পৃষ্ঠার চিঠিতে রাকাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী আলমগীর সংক্ষিপ্ত আকারে ব্যাংকটির সার্বিক পরিস্থিতিও তুলে ধরেন।

ব্যাংকটি মূলধন ঘাটতি মেটাতে একদিকে সরকারের কাছে অর্থ-সহায়তা চাইছে, অন্যদিকে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। ব্যাংকটির দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, বিতরণ করা মোট ৫ হাজার ৫৪৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা ঋণের মধ্যে ২৩ দশমিক ৫৬ শতাংশই খেলাপি। ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত রাকাবের খেলাপি ঋণ ছিল ১ হাজার ২০২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের ৩০ জুনে তা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩০৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। অবশ্য খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ হিসেবে চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশের উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় ফসলহানি ও বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে ঋণ আদায় বিঘ্নিত হয়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের নিরীক্ষিত খসড়া আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী রাকাবের মোট সম্পদ ৭ হাজার ৪৫৯ কোটি ২২ লাখ টাকা, আর মোট দায়ের পরিমাণ ৭ হাজার ৬৭০ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে ব্যাংকটিতে সম্পদের চেয়ে ২১০ কোটি ৯৬ লাখ টাকার বেশি দায় রয়েছে।

মূলধন ঘাটতি বাবদ কেন টাকা দরকার—এ বিষয়ে চিঠিতে রাকাবের এমডি বলেন, ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়নে  মূলধন দরকার হবে।

ব্যাসেল-৩ হচ্ছে ব্যাংক খাতের মূলধন পর্যাপ্ততা ও তারল্য ঝুঁকি নিরসনে একটি বৈশ্বিক কাঠামো। এর আগে মূলধন ঘাটতি ও সুদ ভর্তুকি বাবদ ব্যাংকটিকে গত বছরের ২৭ জুন প্রায় ২০০ কোটি টাকা দিয়েছিল সরকার।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে কাজী আলমগীর আরও জানান, রাকাবকে কম সুদে কৃষিঋণ দিতে হচ্ছে বলে ব্যাংকের আয় কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে জাতীয় বেতনকাঠামো বাস্তবায়নে ব্যাংকটিকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বাড়তি খরচ বহন করতে হচ্ছে। তবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্যাংকটির লাভ-লোকসান সমান (ব্রেক ইভেন-পয়েন্ট) করা বা সামান্য মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। কিন্তু এই মুনাফা দিয়ে ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণ করা সময়সাপেক্ষ ও দুরূহ ব্যাপার।

চিঠিতে বলা হয়, সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে প্রতিবছর ১ শতাংশ করে রাকাবকে কৃষিঋণের সুদ কমাতে হয়েছে। এতে প্রতি অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের তুলনায় সুদ আয় কম হয়েছে ১২০ কোটি টাকা করে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে অর্থাৎ গত বছরের অক্টোবর থেকে সব ধরনের কৃষিঋণ ৯ শতাংশ নির্ধারণ করায় ব্যাংকের মুনাফা অর্জনের সক্ষমতা নেতিবাচক হয়ে যায়। তাই এখন রাকাব দাবি করছে, পুনর্মূলধনীকরণ হলেই আগের অর্থবছরগুলোর মতো রাকাবের মুনাফার ধারা অব্যাহত রাখা যাবে এবং সরকারের কৃষিঋণ কার্যক্রমও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা সহজ হবে।

চিঠিতে রাকাবের কয়েক অর্থবছরের মুনাফার চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪ কোটি ৩ লাখ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১০ কোটি ১২ লাখ এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা (সাময়িক) নিট মুনাফা করেছে রাকাব।

শতভাগ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংক হিসেবে ১৯৮৬ সালে রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের আদেশবলে গঠিত হয় রাকাব, যার কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮৭ সালের ১৫ মার্চ। বর্তমানে রাকাবের শাখা ৩৭৯টি।

জানতে চাইলে রাকাবের এমডি কাজী আলমগীর গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা টাকা চেয়েছি, আবার খেলাপি ঋণ কমানোর উদ্যোগও নিয়েছি। খেলাপি আদায়ে ব্যাংকের কর্মীরা মাঠপর্যায়ে ব্যাপক কাজ করছে।’

ব্যাংকটিকে মুনাফার ধারায় কীভাবে নিয়ে যাবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী আলমগীর বলেন, ‘সম্ভব। সামনে ভালো দিন দেখতে পাচ্ছি।’ ভালো দিনের অবশ্য কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তিনি।