ডেটিং অ্যাপ বানিয়ে শীর্ষ ধনীর কাতারে

আন্দ্রে আনদ্রিভ
আন্দ্রে আনদ্রিভ
>

• ডেটিং অ্যাপ বানিয়ে বিপুল সম্পদের মালিক আন্দ্রে আনদ্রিভ
• ২০১৮ সালে তাঁর সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৫০ কোটি ডলার
• তিনি রুশ উদ্যোক্তা

রাশিয়ান বা রুশ উদ্যোক্তা আন্দ্রে আনদ্রিভ। জন্মসূত্রে রাশিয়ান হলেও বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যের নাগরিক। অনেকেই তাঁকে এ যুগের কিউপিড (গ্রিক ভালোবাসার দেবতা) হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। তবে এই যুগে মানুষের হৃদয়ে ভালোবাসার অনুভূতি সৃষ্টিতে তিনি কিউপিডের মতো তির ছোড়েন না, বরং ডেটিং অ্যাপ বানিয়ে মানুষকে কাছাকাছি আসার সুযোগ করে দিয়েছেন। তাঁর তৈরি করা ডেটিং অ্যাপে যেমন ব্যবহারকারীদের ভৌগোলিক অবস্থান জানার সুযোগ আছে, তেমনি মুখ চিহ্নিত করার ব্যবস্থাও রয়েছে। আর এ ডেটিং অ্যাপ বানিয়েই আন্দ্রে আনদ্রিভ এখন পৃথিবীর শীর্ষ ধনীদের কাতারে চলে এসেছেন।

পৃথিবীর বৃহত্তম ডেটিং অ্যাপ বাডুসহ মোট পাঁচটি ডেটিং অ্যাপ তৈরি করেছেন আন্দ্রে আনদ্রিভ। বাডু আবার যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় ডেটিং অ্যাপ বাম্বলের ৭৯ শতাংশ মালিকানা কিনে নিয়েছে। ডেটিং অ্যাপ বানিয়েই ৪৫ বছর বয়সী আন্দ্রে বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী ফোর্বস ম্যাগাজিনের হিসাবে, ২০১৮ সালে তাঁর সম্পদের পরিমাণ ছিল ১৫০ কোটি ডলার। যার ভিত্তিতে বিশ্বের সেরা ধনীদের তালিকায় ১ হাজার ৫৬১তম অবস্থানে ছিলেন আন্দ্রে।

 বিপুল সম্পদশালী আন্দ্রে আনদ্রিভ দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর আড়ালেই ছিলেন। গণমাধ্যমেও তাঁকে নিয়ে তেমন একটা লেখালেখি হয়নি। ফোর্বস রাশিয়া একবার তাঁকে ‘পশ্চিমের সবচেয়ে রহস্যময় ব্যবসায়ী’ আখ্যা দিয়েছিল, যদিও তিনি এই অভিধা গ্রহণ করেননি। এ ব্যাপারে তিনি ফোর্বস ম্যাগাজিনকে বলেন ‘কোনো রুশ দেশের বাইরে কিছু করলেই তা অনেক বড় ব্যাপার। সে জন্যই লোকে আমাকে রহস্যজনক মনে করে। আমি রহস্যজনক নই, আমি লন্ডনে থাকি, আর মানুষও আমাকে প্রতিদিনই দেখে—এতে রহস্যের কিছু নেই।’

মস্কোতে জন্ম নেওয়া আন্দ্রের বাবা-মা উভয়েই ছিলেন বিজ্ঞানী। রাশিয়ায় জন্ম নিলেও বর্তমানে আন্দ্রে যুক্তরাজ্যের নাগরিক। ফোর্বস-এর হিসাবে, যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে কম বয়সী ধনীদের মধ্যে আন্দ্রের অবস্থান দ্বিতীয়। নিজের কাজ সম্পর্কে আন্দ্রে বলেন, ‘জন্মের পর প্রথম দিন থেকেই প্রযুক্তির প্রতি আমার প্রবল অনুরাগ তৈরি হয়। আমার বাবা প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, তাই মস্কোর ফ্ল্যাটে আমি প্রচুর খেলনা নিয়ে বসে থাকতাম।’

অন্য অনেক সফল মানুষের মতো তিনিও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া ছাত্র ছিলেন। মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন পড়ার পর ১৯৯২ সালে ১৮ বছর বয়সে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়েন। মূলত স্পেনে চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়েন। আন্দ্রে বলেন, ‘ভ্রমণ করে আমি পৃথিবীটা দেখতে চেয়েছিলাম। তাই ইউরোপ ভ্রমণের খরচ মেটানোর জন্য বাবা-মায়ের কাছ থেকে ঋণও করেছি।’ আন্দ্রের ব্যবসার হাতেখড়ি ১৯৯৫ সালে। ওই বছর তিনি রাশিয়ায় অনলাইনে কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক উপকরণ বিক্রির দোকান ‘ভাইরাস’ চালু করেন। অনলাইনের এ ব্যবসা চালুর দুই বছর না যেতেই ১৯৯৭ সালে কয়েক লাখ ডলারে তিনি দোকানটি বিক্রি করে দেন। দোকানটি বিক্রি করে তিনি যে অর্থ পেয়েছেন, তা দিয়ে মা-বাবার কাছ থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করার পরও হাতে আরও কিছু অর্থ থেকে যায় তাঁর।

নিজের সেই অর্থে ১৯৯৯ সালে স্পাইলগ নামের একটি সফটওয়্যার তৈরি করেন। সফটওয়্যারটি ছিল ওয়েবসাইটে প্রবেশকারীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার।  সেই স্পাইলগ সফটওয়্যারটিও ২০০১ সালে বিক্রি করে দেন তিনি। তবে সেটি বিক্রি করে কত অর্থ পেয়েছিলেন, তা তিনি প্রকাশ করেননি।

সফটওয়্যার ব্যবসা ছেড়ে ২০০২ সালে যুক্ত হন বিজ্ঞাপনের ব্যবসায়। চালু করেন ‘বেগান’ নামে একটি বিজ্ঞাপনী কোম্পানি। ২০০৮ সালে রাশিয়ার বিনিয়োগ কোম্পানি ফিনান হোল্ডিংস এই বিজ্ঞাপনী কোম্পানিতে বড় অংশীদার ছিল।  

সারা পৃথিবীর প্রেমিক-প্রেমিকাদের ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে কাছাকাছি আনলেও আন্দ্রের সঙ্গে তাঁর বান্ধবীর দেখা বা যোগাযোগ কোনো অ্যাপসের মাধ্যমে হয়নি। ফোর্বস-এর তথ্য বলছে, আন্দ্রের তৈরি ডেটিং অ্যাপ এখন পৃথিবীর ১৯০টি দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশ্বের ৪৭টি ভাষায় এ অ্যাপ ব্যবহার করা যায়। বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় ৩৮ কোটি নারী-পুরুষ এ অ্যাপ ব্যবহার করছে। মাধ্যমে নিজের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কেও তিনি ফোর্বসকে কিছু বলতে রাজি হননি। তবে এটুকু বলেছেন, যা-ই হোক না কেন, তাতে মানুষের যোগাযোগ আরও বাড়বে।