জমি কিনে বাড়ি করতে ঋণ

জীবন বীমা করপোরেশন
জীবন বীমা করপোরেশন

জীবন বীমা করপোরেশনের (জেবিসি) কর্মচারীরা জমি কেনার জন্যও ঋণ পাবেন। তবে ধানি জমি কেনার জন্য নয়। ঋণ নিয়ে কেনা জমিতে বাড়ি তৈরি করতে হবে। ঢাকাসহ বড় শহর তো বটেই, এমনকি উপজেলা শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে বাড়ি করতে চাইলেও পাওয়া যাবে ১২০ মাসের মূল বেতনের সমান ঋণ।

সুদসহ এই ঋণ তাঁরা ফেরত দিতে পারবেন সর্বোচ্চ ২০০টি মাসিক কিস্তিতে। এই কিস্তি পরিশোধ করতে সময় লাগবে ১৬ থেকে ১৭ বছর। নিজের কর্মচারীদের বাড়ি তৈরির ব্যাপারে সহযোগিতা করতে সংস্থাটি যে প্রবিধানমালা তৈরি করেছে, তাতে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। ‘জীবন বীমা করপোরেশন গৃহনির্মাণ অগ্রিম প্রবিধানমালা–২০১৯’ নামক প্রবিধানমালা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয় গত সোমবার।

সরকারি কর্মচারীদের জন্য স্বল্প সুদে গৃহনির্মাণ ঋণের যে সুযোগ সরকার চালু করেছে, তার সঙ্গে এই প্রবিধানমালার কোনো সম্পর্ক নেই। সরকারি কর্মচারীরা ঋণ পাচ্ছেন ৫ শতাংশ সুদে। গৃহঋণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যে সুদের হার, তা থেকে ৫ শতাংশের বেশি অংশের সুদ সরকারি কর্মচারীদের জন্য সরকার ভর্তুকি হিসেবে দিচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো গৃহঋণে সবার জন্য যে সুদ নিয়ে থাকে, জেবিসির কর্মচারীদের সেই সুদই দিতে হবে।

জেবিসির প্রবিধানমালায় বলা হয়, গৃহঋণ পাবেন জেবিসির স্থায়ী কর্মচারীরা। তা–ও আবার সংস্থাটিতে পাঁচ বছর চাকরি করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে তাঁদের। এ ছাড়া ঋণ নেওয়ার সময় পিআরএলসহ চাকরির বয়স বাকি থাকতে হবে ১০ বছর। জেবিসিতে প্রেষণে নিয়োজিত কর্মচারী এবং সম্পূর্ণ অস্থায়ী, দৈনিকভিত্তিক, চুক্তিভিত্তিক বা খণ্ডকালীন নিয়োজিত কর্মচারীরা এ ঋণ পাবেন না। চারটি ক্ষেত্রে ঋণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে প্রবিধানমালায়। এগুলো হচ্ছে জমি কেনা ও ওই জমিতে বাড়ি তৈরি, তৈরি করা বাড়ি কেনা, নিজস্ব মালিকানাধীন জমিতে বাড়ি তৈরি এবং নিজস্ব মালিকানাধীন জমিতে বাড়ি সংস্কার, বর্ধিতকরণ, মেরামতকরণ ও পুনর্নির্মাণ।

জেবিসির কোনো কর্মচারী কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ইতিমধ্যে গৃহঋণ নিয়ে থাকলে, ওই ঋণ পরিশোধের জন্যও জেবিসি থেকে ঋণ নিতে পারবেন। ঋণ দেওয়া হবে মেট্রোপলিটন এলাকা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা এলাকা বা উপজেলা সদরের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে বাড়ি তৈরির জন্য। স্বামী-স্ত্রী উভয়েই জেবিসিতে চাকরিরত থাকলে ঋণ পাবেন শুধু একজন এবং একবারের বেশি কেউ ঋণ পাবেন না।

প্রবিধানমালায় ঋণ দেওয়ার পদ্ধতির বিষয়ে বলা হয়েছে, ঋণ দেওয়া হবে চারটি কিস্তিতে এবং প্রথম কিস্তির পরিমাণ অনুমোদিত মোট ঋণের ২৫ শতাংশের বেশি হবে না। সর্বশেষ কিস্তি দেওয়া হবে বাড়ির ছাদ তৈরির সময়।

বিদ্যমান জাতীয় বেতন কাঠামো অনুযায়ী নবম গ্রেড ও তা থেকে ওপরের গ্রেডের কর্মচারীদের জমি কেনার জন্য দেওয়া হবে মোট ঋণের ৩০ শতাংশ। আর অন্যদের দেওয়া হবে মোট ঋণের ৫০ শতাংশ। তৈরি ফ্ল্যাট বা বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে বায়নানামা করার সময় বিক্রেতাকে দেওয়ার জন্য পাওয়া যাবে মোট ঋণের ১০ শতাংশ। বাকি টাকা পাওয়া যাবে নিবন্ধনের সময়। প্রথম কিস্তির টাকা নেওয়ার এক বছর পর থেকে টাকা ফেরত দেওয়ার কিস্তি শুরু হবে। ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে তা শুরু হবে ছয় মাস পর থেকে।

জেবিসি সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটির অনুমোদিত জনবল ২ হাজার ৭০ থাকলেও বর্তমানে আছে তার অর্ধেকের মতো। সংস্থাটিতে পেনশনধারী রয়েছেন ১ হাজার ৫২২ জন। এ ছাড়া রয়েছেন এজেন্ট ৩৪ হাজার, উন্নয়ন কর্মকর্তা ১২ হাজার ৭২৩ এবং উন্নয়ন ব্যবস্থাপক ৭৭৭ জন। জেবিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী নূর বলেন, ‘স্বল্প সুদে সরকারি কর্মচারীদের জন্য যে গৃহঋণের ব্যবস্থা রয়েছে, জেবিসি তার বাইরে। এ জন্যই নতুন প্রবিধানমালা করা হয়েছে। তবে আশা করছি, জেবিসিসহ সব সরকারি সংস্থার জন্যই স্বল্প সুদের সুযোগটি থাকবে।’