সুরাহা হবে, আশা গ্রামীণফোনের

গ্রামীণফোন
গ্রামীণফোন

বাজারে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করার বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতা বা সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার (এসএমপি) প্রবিধানমালার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে মনে করে দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এসএমপি ঘোষণা নিয়ে তাদের দ্বিমত নেই। তবে তারা চায়, প্রতিযোগিতার পরিবেশ ক্ষুণ্ন করলেই কেবল তাদের ওপর সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ১০ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণফোনকে এসএমপি অপারেটর হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর গত সোমবার সংস্থাটি গ্রামীণফোনের ওপর চারটি বিধিনিষেধ জারি করে। গতকাল গ্রামীণফোনের কর্মকর্তারা রাজধানীর গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসএমপির নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন।

শুরুতে গ্রামীণফোনের হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেইন সাদাত বলেন, এসএমপির মূল উদ্দেশ্য প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা। কাউকে না কাউকে এসএমপি অপারেটর হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। তার ওপর নজরদারি বাড়বে, যাতে সে প্রতিযোগিতা ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো কাজ না করে। তিনি বলেন, ‘এসএমপির মানে এই নয়, একজনের ব্যবসা সরিয়ে নিয়ে অন্যকে পুনর্বাসন করতে হবে। পৃথিবীর কোথাও এসএমপিতে বলা নেই যে এসএমপি বলে কেউ আর বড় হতে পারবে না।’

বিধিনিষেধ ঘোষণার পরপরই গ্রামীণফোন বিটিআরসির সঙ্গে বৈঠকে বসেছে। হোসেইন সাদাত বলেন, সেখানে বিটিআরসির কর্মকর্তারা গ্রামীণফোন কোথাও প্রতিযোগিতার পরিবেশ ক্ষুণ্ন করছে বলে দেখাতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘বিটিআরসির সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। আমরা আশা করি, ১ মার্চের আগেই আমরা একটা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব।’

গ্রামীণফোনের রেগুলেটরি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. তামজীদ সিরাজ বলেন, বিটিআরসির প্রবিধানমালা অনুযায়ী গ্রামীণফোন কোথায় প্রতিযোগিতায় বাধা তৈরি করছে, তা জানিয়ে বিধিনিষেধ আরোপের কথা ছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বিধিনিষেধের সঙ্গে তেমন কিছু নেই।

প্রবিধানমালা অনুযায়ী, কোনো অপারেটরকে এসএমপি ঘোষণা করা হলে তার ক্ষেত্রে করণীয়–বর্জনীয় ঠিক করে দিতে পারে বিটিআরসি। সংস্থাটির নির্দেশনায় গ্রামীণফোনের ক্ষেত্রে অপারেটর বদলানোর সেবা বা মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটির (এমএনপি) ‘লক ইন পিরিয়ড’ বেঁধে দেওয়া হয়েছে ৩০ দিন। কলড্রপের হার ২ শতাংশে নামিয়ে আনতে বলেছে সংস্থাটি। গ্রামীণফোন অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে স্বতন্ত্র ও একক স্বত্বাধিকার চুক্তি করতে পারবে না এবং দেশব্যাপী কোনো মাধ্যমে মার্কেট কমিউনিকেশন বা বাজার প্রচারাভিযান করতে পারবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি।

হোসেইন সাদাত বলেন, গ্রামীণফোন নতুন কী পণ্য আনছে, কী সেবা দিচ্ছে তা জানা গ্রাহকের অধিকার। স্বতন্ত্র চুক্তির বিধিনিষেধের বিষয়টি পরিষ্কার নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিটিআরসি ভবিষ্যতে যেসব বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, তা নিয়েও কথা বলেন হোসেইন সাদাত। তিনি বলেন, বিটিআরসির পক্ষ থেকে তাঁদের মোট ২০টি ক্ষেত্রের কথা জানানো হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলে গ্রামীণফোনকে বাড়তি হারে অর্থ জমা দিতে হবে। এর সঙ্গে প্রতিযোগিতার ও অন্য অপারেটরদের সুবিধা পাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

হোসেইন সাদাত বলেন, ‘আমরা ২২ বছর ধরে বিনিয়োগ করে এবং দক্ষতা অর্জন করে আজকের অবস্থানে এসেছি। গ্রামীণফোনের সেবার মান ভালো। সেবার মূল্য অন্যদের চেয়ে কিছুটা বেশি। কম দামে সেবা বিক্রি করে গ্রামীণফোন অন্যদের বাজারে আসার ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করে না।’হোসেইন সাদাত বলেন, ‘আমাদের মনে হচ্ছে, এসএমপির মূল লক্ষ্য বাজারে প্রতিযোগিতা তৈরি করা নয়। আমরা বড় বলে আমাদের শাস্তি দেওয়া।’ এটি বিনিয়োগ ও পুঁজিবাজারে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসএমপির মূল লক্ষ্য প্রতিযোগিতা হলে তাঁদের সমস্যা হবে না। তবে উদ্দেশ্য যদি আটকে দেওয়া হয়, তাহলে তার প্রভাব পড়বে।

বিটিআরসির জরিপ অনুযায়ী গ্রামীণফোনের কলড্রপের হার ৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ। গ্রামীণফোনের সার্ভিস অ্যাসুরেন্স বিভাগের প্রধান ইমরানুল আবেদিন বলেন, ‘বিটিআরসির জরিপকে আমরা সম্মান করি। তবে পদ্ধতি ও সেবার মান যাচাইয়ের ব্যবস্থা ব্যবহারের পার্থক্যের কারণে ভিন্ন ফল আসতে পারে। আমাদের কলড্রপ সীমার মধ্যেই আছে।’

বিটিআরসি গত নভেম্বরে তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতা প্রবিধানমালা জারি করে। এতে কোনো মোবাইল অপারেটর গ্রাহকসংখ্যা, রাজস্ব অথবা তরঙ্গ—এ তিন ক্ষেত্রের একটিতে ৪০ শতাংশের বেশি বাজার হিস্যাধারী হলে এসএমপি অপারেটর হিসেবে ঘোষণার ক্ষমতা দেওয়া হয় বিটিআরসিকে। যার আওতায় পড়েছে গ্রামীণফোন।