ভারতে ১০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি সৌদি যুবরাজের

ভারত সফরে এসে দেশটির রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল সৌদি যুবরাজ। নয়াদিল্লি, ভারত, ২০ ফেব্রুয়ারি, ছবি: রয়টার্স
ভারত সফরে এসে দেশটির রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল সৌদি যুবরাজ। নয়াদিল্লি, ভারত, ২০ ফেব্রুয়ারি, ছবি: রয়টার্স

পাকিস্তানের মাটিতে পা রেখে ২ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এরপর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারতে এসে সৌদি যুবরাজের বার্তা, দুই বছরে ভারতে অন্তত ১০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন তিনি। বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সূত্রে এ খবর জানা গেছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘোষণা অপ্রত্যাশিত নয়। কারণ, তেল-গ্যাসের চাহিদা বৃদ্ধির হারের দিক থেকে ভারত এখন বিশ্বের প্রথম, চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে তারা। তাই এমন বাজারের দেশে নিজের প্রথম সরকারি সফরে সৌদি যুবরাজ যে এ কথা বলবেন, তা স্বাভাবিক বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষত, যেখানে এ দেশের তেল শোধন, পেট্রোপণ্যে বিনিয়োগের কথা আগেই জানিয়েছে রিয়াদ। এখানে পেট্রলপাম্প খুলতে তাদের আগ্রহের কথা স্পষ্ট বলেছে রিয়াদ।

ভারতের বাজারের বড় অংশে ভাগ বসানোই যে তাঁদের লক্ষ্য, সেই ইঙ্গিত দিয়ে সৌদি তেলমন্ত্রী খালিদ আল-ফালিরও বার্তা, অ্যারামকো বা স্যাবিকের মতো সৌদি সংস্থাগুলোর লক্ষ্য এ দেশের ঘরে ঘরে পরিচিত হয়ে ওঠা।

সৌদির বিনিয়োগ-আগ্রহ শুধু তেল, পেট্রোপণ্যে আটকে থাকেনি, সৌদি আরব কৃষি, পরিকাঠামো ইত্যাদি খাতেও বিনিয়োগের কথা বলেছে। ফালি ভারতের বাজার খুলে দেওয়া নিয়ে তাঁদের উৎসাহের কথা জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘তেল সৌদি ও ভারতের মধ্যে বন্ধন হিসেবে কাজ করবে ঠিকই। (তবে) ...আমরা শুধু বিক্রেতা বা ক্রেতা নই; আমরা বিনিয়োগকারী।’ এদিন টিসিএস, উইপ্রো, গ্লেনমার্কসহ ১৫টি ভারতীয় সংস্থাও সৌদিতে বিনিয়োগ চুক্তি করেছে।

সৌদি অ্যারামকোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমিন নাসের ভারতের সম্ভাবনার প্রসঙ্গে বলেন, ২০৫০ সালের মধ্যে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হতে যাচ্ছে। তখন তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও ছাড়িয়ে যাবে। ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদনের ১৫ শতাংশই ভারতে উৎপাদিত হবে। আর অর্থনৈতিক শক্তি পশ্চিম থেকে পূর্বে স্থানান্তরিত হবে। তিনি আরও জানান, বর্তমানে ভারত সৌদি আরবের কাছ থেকে দিনে প্রায় আট লাখ ব্যারেল তেল কেনে।

আমিন নাসের মনে করেন, ভারতে পেট্রোকেমিক্যালের চাহিদা ব্যাপক হারে বাড়বে। বর্তমানে ভারতে বছরে মাথাপিছু পেট্রোকেমিক্যাল ব্যবহারের পরিমাণ ৯ কেজি, যা যুক্তরাষ্ট্রে ১০৯ কেজি। বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রচলন হতে আরও অনেক সময় লাগবে বলে মনে করেন আমিন নাসের। সে জন্য সৌদি আরব আরও অনেক দিন তেল অনুসন্ধানে বিনিয়োগ করবে।

বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সূত্রে জানা গেছে, সৌদি পুঁজির গন্তব্য হিসেবে এক নম্বর পছন্দ এখন ভারত। তেল শোধন, পেট্রোকেম প্রকল্প, সার তৈরি, কৃষি, পরিকাঠামো, বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ইত্যাদি খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা আছে সৌদি আরবের।

সফরে দুই দেশের পর্যটন, আবাসন, পরিকাঠামো খাতে বিনিয়োগের চুক্তি হয়েছে। বিনিয়োগ নিয়ে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজসহ কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে কথা বলছে বিশ্বের বৃহত্তম তেল-গ্যাস সংস্থা সৌদি অ্যারামকো। ভারতে ব্যবসা বাড়াতে আগ্রহী সৌদি পেট্রোকেম সংস্থা স্যাবিকও।