ব্রণের চিকিৎসা করে শীর্ষ ধনী

ক্যাটি রোডান ও ক্যাথি ফিল্ডস
ক্যাটি রোডান ও ক্যাথি ফিল্ডস
>

• কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়েছিলেন তাঁরা
• রোডান+ফিল্ডস কোম্পানি কিশোর-কিশোরীদের ব্রণের চিকিৎসায় বাজারে আসছে
• সপ্তাহে দুই দিন ত্বকবিশারদ হিসেবে কাজ করেন তাঁরা

বছর বিশেক আগে ত্বকবিশারদ ক্যাটি রোডান ও ক্যাথি ফিল্ডস তিন স্তরের ব্রণের চিকিৎসাপদ্ধতি প্রো–অ্যাকটিভ তৈরি করে পরিচিতি পান। মূলত কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়েছিলেন তাঁরা। এরপর তাঁরা প্রো–অ্যাকটিভের স্বত্ব বিক্রি করে ত্বকের যত্নে মনোযোগ দিতে রোডান+ফিল্ডস কোম্পানি গঠন করেন। এবার তার ফল আসতে শুরু করেছে। সম্প্রতি তাঁরা ঘোষণা দিয়েছেন, এই কোম্পানি কিশোর-কিশোরীদের ব্রণের চিকিৎসায় বাজারে আসছে।

ক্যাটি রোডান ও ক্যাথি ফিল্ডস দুজনেই স্ট্যানফোর্ড মেডিকেল স্কুলে পড়ান। সপ্তাহে দুই দিন ত্বকবিশারদ হিসেবে কাজ করেন তাঁরা। নতুন পণ্য তৈরির উৎসাহ কোথায় পেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে ফোর্বসকে তাঁরা বলেন, মানুষকে জীবন বদলে দেওয়া ত্বক দেওয়ার ইচ্ছা থেকেই এই উদ্যোগ। রোডান বলেন, ‘কিশোরী বয়সে আমারও ব্রণ ছিল। মনে আছে, তখন ব্রণ নিয়ে খুবই অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতা হয়েছিল।’ তাঁর সঙ্গে ফিল্ডস যোগ করেন, এখন ৬০ বছর বয়সেও মাঝেমধ্যে ব্রণ হয়।

এই দুই ত্বকবিশারদের কল্যাণে রোডান+ফিল্ডস উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে। বেসরকারি ইক্যুইটি ফার্ম টিপিজি ক্যাপিটাল গত মে মাসে কোম্পানির ২৫ শতাংশ অংশীদারির জন্য ১০০ কোটি ডলার দিয়েছে। এতে রোডান ও ফিল্ডস উভয়েরই সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৫০ কোটি ডলার।

২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত রোডান+ফিল্ডস বয়স ধরে রাখার ক্রিম দিয়ে যাত্রা শুরু করে। তবে ব্যবসায়িকভাবে সফল মডেল দাঁড় করাতে কিছুটা সময় লেগে যায় তাদের। প্রথম দিকে তারা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে পণ্য বিক্রির চেষ্টা করে। ২০০৩ সালে তারা ইসটি লডারের কাছে কোম্পানি বিক্রি করে দেয়, যদিও ২০০৭ সালে তারা কোম্পানিটি আবার কিনে নেয়। এরপর রোডান+ফিল্ডস যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় ৩ লাখ স্বাধীন বিক্রয় প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়, যাঁদের হাত ধরেই কোম্পানির অগ্রযাত্রা।

বিক্রয় প্রতিনিধিদের কাছে কোম্পানি ব্যাপারটা এমনভাবে উপস্থাপন করে যে তারা নারীদের উদ্যোক্তা হওয়ার মতো স্বাবলম্বী করে থাকে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, খুব অল্প কিছুসংখ্যক বিক্রয় প্রতিনিধি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন। ২০১৭ সালে কোম্পানির কর্মীদের আয়ের বিবরণীতে দেখা যায়, বিক্রয় প্রতিনিধিদের মধ্যে মাত্র ৩৩ শতাংশ বছরে ১ হাজার ডলারের নিচে আয় করে, ৪৪ শতাংশ কোনো আয় করেনি আর ২২ শতাংশের আয় ১ হাজার থেকে ২৫ হাজার ডলারের মধ্যে। শুধু ১ শতাংশ শীর্ষ বেতনভোগী বিক্রয় প্রতিনিধি বছরে ৩০ হাজার ডলারের বেশি আয় করেন।

এক বিবৃতিতে রোডান+ফিল্ডস জানায়, ‘সমাজের সব স্তর থেকে বিক্রয় প্রতিনিধিরা বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করতে আসেন। অনেকে দপ্তরে না এসে কাজ করার স্বাধীনতা উপভোগ করতে চান। অনেকে আবার এই সুযোগে নিজের ব্যবসা ও দল গুছিয়ে নিতে চান। তাঁরা আমাদের কাজে কতটা সময় ও শ্রম দেবেন, সেটা নিজেরাই ঠিক করেন।’

তবে এই আর্থিক পরিসংখ্যানে রোডান+ফিল্ডসের তেমন কিছু এসে–যায় না। কারণ, তাদের বিক্রয় প্রতিনিধির সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সঙ্গে বিক্রিও বাড়ছে। ২০০৮ সালে কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি ছিলেন ১ হাজার ৩৫০ জন, যা ২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে এসে দাঁড়ায় দেড় লাখে। আজ সেই সংখ্যাটা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। রাজস্বও সেই হারে বেড়েছে, ২০১০ সালে যা ছিল ২ কোটি ৪০ লাখ ডলার, তা ২০১৫ সালে এসে দাঁড়ায় ৬২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ২০১৭ সালে তা দাঁড়ায় ১৫০ কোটি ডলার।

রোডান+ফিল্ডসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডিয়ানে ডিয়েৎজ ও প্রতিষ্ঠাতা দুই ত্বকবিশারদ বলেন, যে বাজারে সাধারণত অন্যরা ঢুকছে না, সেখানেই প্রবৃদ্ধির মূল সম্ভাবনা: কিশোর-কিশোরী ও ব্রণ। ডিয়ানে ডিয়েৎজ বলেন, বয়সরোধী ক্রিমের কাটতিই সবচেয়ে বেশি সন্দেহ নেই, কিন্তু ব্রণের চিকিৎসার চাহিদাও কম নয়। সে কারণেই তাঁরা ৮৯ ডলারের ব্রণের ক্রিম বাজারে এনেছেন। তবে এটাই শেষ নয়, কম বয়সী মানুষের জন্য তাঁরা আরও পণ্য নিয়ে আসছেন।

তবে ক্যাটি রোডান ও ক্যাথি ফিল্ডস বলেন, ‘আমাদের পণ্যের কার্যকারিতার ওপরই বিক্রি নির্ভর করবে। আমরা শেষবিচারে ব্যবসায়ী নই, আমরা একটি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করি।’