সদস্যপদ নিয়ে টানাটানি?

>
  • বিজিএমইএর নির্বাচন
  • তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন জাহাঙ্গীর আলমের সদস্যপদ বাতিল করার উদ্যোগ নিয়েছে
  • তিনি স্বাধীনতা পরিষদের আহ্বায়ক

সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগ এনে ডিজাইন অ্যান্ড সোর্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের সদস্যপদ বাতিল করার উদ্যোগ নিয়েছে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। আগামী ৪ মার্চ সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদের সভায় উপস্থিত হয়ে তাঁর সদস্যপদ কেন বাতিল করা হবে না, সে বিষয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে।

জাহাঙ্গীর আলম বিজিএমইএর নির্বাচন সামনে রেখে গঠিত স্বাধীনতা পরিষদের আহ্বায়ক। সংগঠনটি গত মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দেয়। জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করে বলেন, ‘নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্যই আমার সদস্যপদ বাতিল করার অপচেষ্টা চলছে। কারণ সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি করতে চাইছে। আমি নির্বাচনে অংশ নিলে তাদের সেই চেষ্টা হয়তো সফল হবে না।’

অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বিজিএমইএর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘প্যানেল দিয়ে বা এককভাবে যে কেউ নির্বাচন করতে পারে। নির্বাচন করার বিষয়টি উন্মুক্ত। নির্বাচনের সঙ্গে সদস্যপদ বাতিল করার কোনো সম্পর্ক নেই। ভোটার তালিকায় তাঁর নাম আছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে গত ২০ জানুয়ারি সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে স্বাধীনতা পরিষদ। সেদিন নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন সংগঠনের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম এবং পরদিন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে তা ছাপা হয়। দুটি দৈনিকে জাহাঙ্গীর আলমের বরাতে ছাপা হয়, ‘ঘুষ ছাড়া বিজিএমইএ থেকে ইউডি ইস্যু হয় না। বিজিএমইএতে আর্থিক স্বচ্ছতা নেই।’ ওই দুটি পত্রিকার কথা উল্লেখ করে ২৩ জানুয়ারি বিজিএমইএর সভাপতি লিখিতভাবে জাহাঙ্গীর আলমের কাছে সাত দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেন।  

সভাপতির চিঠির জবাবে ৩০ জানুয়ারি জাহাঙ্গীর আলম লিখিতভাবে বলেন, ‘বিজিএমইএর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার মতো কোনো বক্তব্য আমি দিইনি।’ ইউডি নিতে ঘুষ দেওয়ার বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতেও অনুরোধ করেন তিনি। অবশ্য তার আগের দিনই জাহাঙ্গীর আলমকে আরেকটি চিঠি দেন বিজিএমইএর সভাপতি। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘ঢাকা ক্লাবের মতবিনিময় সভায় আপনি উল্লেখ করেন, বিজিএমইএতে বার্ষিক ১০০ কোটি টাকা আয় হয়, অথচ খরচ ১০ কোটি টাকাও হয় না। এই অর্থ কীভাবে খরচ করা হয়, তার কোনো স্বচ্ছতা নেই।’ ৩ ফেব্রুয়ারি আবার জাহাঙ্গীর আলম জবাব পাঠান, ‘বিজিএমইএর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে আমি কোনো বক্তব্য রাখিনি।’

সর্বশেষ ১৭ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় দফায় জাহাঙ্গীর আলমকে চিঠি পাঠান বিজিএমইএর সভাপতি। সেখানে বিজিএমইএর সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করায় ৪ মার্চ সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদের সভায় উপস্থিত হয়ে জাহাঙ্গীর আলমকে সদস্যপদ কেন বাতিল করা হবে না, সে বিষয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে। প্রথম দুই চিঠিতে তাঁর কারখানা ডিজাইন অ্যান্ড সোর্সের নাম উল্লেখ করা হলেও শেষ চিঠিতে আরও তিনটি কারখানার নাম উল্লেখ করা হয়। তার মধ্যে দুটি কারখানা তাঁর স্ত্রী ও বোনের নামে।

জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে। এমনকি সেই অভিযোগে আমার স্ত্রী ও বোনের কারখানার সদস্যপদও বাতিল করার চেষ্টা চলছে। নির্বাচনের আগে এ ধরনের কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণভাবে বেআইনি।’

এ বিষয়ে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভিত্তিহীন তথ্যের ভিত্তিতে জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, আমরা প্রতিবছর ১০০ কোটি টাকা আয় করছি। ব্যয় করছি ১০ কোটি টাকা। তাঁর কথা পূর্ববর্তী সভাপতিদের বেলায়ও প্রযোজ্য হয়। তাহলে তো গত ১৫ বছরে হাজার কোটি টাকা জমা থাকার কথা। সেই টাকা গেল কোথায়? আমরা যদি এখন তাঁর কাছে জবাব না চাই, তাহলে তো কাল অন্য সদস্যদের কী জবাব দেব?’ তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, জাহাঙ্গীর আলম তাঁর বক্তব্যের পক্ষে প্রমাণ দিতে পারবেন না।’

বিজিএমইএর প্রতিবাদ

প্রথম আলোর অর্থ ও বাণিজ্য পাতায় গতকাল প্রকাশিত সমঝোতার পথে বিজিএমইএ! শীর্ষক প্রতিবেদনের দুটি বাক্যের প্রতিবাদ করেছে বিজিএমইএ। বাক্য দুটি হচ্ছে: ‘বর্তমান সভাপতি তিন দফায় ১৯ মাস সময় বাড়িয়ে নেন। শেষ দফায় গত ডিসেম্বরে এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ে দৌড়ঝাঁপ করেন সিদ্দিকুর রহমান।’

সংগঠনের সচিব এ কে এম ফজলুর রহমান স্বাক্ষরিত সেই প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, বিজিএমইএর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান কখনোই ব্যক্তিগতভাবে বোর্ডের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য কোথাও বা কারও কাছে যাননি। তার আগে বোর্ডের যে মেয়াদগুলো বেড়েছে তা শিল্পের প্রয়োজনে, বাস্তবতার নিরিখে ও বাণিজ্যমন্ত্রীর সম্মতিতে হয়েছে। বিশেষ করে বিজিএমইএ ভবন স্থানান্তর ও পোশাকশিল্পে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের বিষয়টি যাতে যথাযথভাবে করা হয়, সে জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীর সম্মতিতে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল।