সিমেন্ট ব্যবহারে বিশ্বে ২০তম বাংলাদেশ

নির্মাণ উপকরণ সিমেন্ট ব্যবহারে বাংলাদেশের অবস্থান ক্রমেই উন্নীত হচ্ছে। বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বের ২০তম। দুই বছরের ব্যবধানে তিন ধাপ এগিয়ে এই অবস্থায় উন্নীত হয়েছে। 

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিমেন্ট খাতের পোর্টাল সেমনেট ডটকম প্রকাশিত ‘গ্লোবাল সিমেন্ট রিপোর্ট’–এর সর্বশেষ সংস্করণে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতি দুই বছর পর পর বিশ্বের সিমেন্ট খাতের তথ্য–উপাত্ত নিয়ে এই সমীক্ষা প্রকাশ করে তারা। ২০১৭ সালে সর্বশেষ প্রকাশনা বের করে ওয়েব পোর্টালটি।
ওই প্রকাশনায় বলা হয়, দেশভিত্তিক সিমেন্ট ব্যবহারে শীর্ষে রয়েছে চীন। এরপরের অবস্থান ভারতের। ২০১৬ সালে চীনে সিমেন্ট ব্যবহার হয় ২৩৯ কোটি টন। ভারতে ব্যবহার হয় প্রায় ২৯ কোটি টন। ওই বছর ২০তম অবস্থানে থাকা বাংলাদেশে ব্যবহার হয় ২ কোটি ৩০ লাখ টন। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ২৩তম। বিশ্বের ১৫৯টি দেশে সিমেন্ট উৎপাদিত হয়।
দেশভিত্তিক সিমেন্ট ব্যবহারে চীন ও ভারতের পরের অবস্থান হলো যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, মিসর ও ব্রাজিল। বাংলাদেশের ঠিক ওপরে রয়েছে ফিলিপাইন, আলজেরিয়া, জার্মানি, থাইল্যান্ড ও পাকিস্তান।
সিমেন্ট ব্যবহারে শীর্ষ ২০–এর তালিকায় থাকলেও জনপ্রতি সিমেন্ট ব্যবহারে শীর্ষ তালিকায় নেই বাংলাদেশের নাম। জনপ্রতি সিমেন্ট ব্যবহারে শীর্ষ দেশ হলো মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার। কাতারে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে সিমেন্টের ব্যবহার বেশি হচ্ছে। ২০১৬ সালে কাতারে জনপ্রতি ২ হাজার ৯৫০ কেজি সিমেন্ট ব্যবহার হয়। পরের অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সৌদি আরবের। সেখানে সিমেন্টের জনপ্রতি ব্যবহার ১ হাজার ৯২২ কেজি। জনপ্রতি ১ হাজার ৭০২ কেজি সিমেন্ট ব্যবহার করে শীর্ষ তিনে রয়েছে চীন। জনপ্রতি সিমেন্ট ব্যবহারে শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যেই সাতটিই মধ্যপ্রাচ্যে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালের হিসাবে বিশ্বে সিমেন্টের গড় ব্যবহার জনপ্রতি ৫৬৩ কেজি। ওই বছর বাংলাদেশে জনপ্রতি সিমেন্ট ব্যবহার হয়েছিল ১৪১ কেজি। তবে বাংলাদেশে জনপ্রতি সিমেন্টের ব্যবহার বাড়ছে।
ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের সম্প্রতি প্রকাশিত সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশে জনপ্রতি সিমেন্টের ব্যবহার ছিল ১৮৪ কেজি। সাত বছর আগে ২০১১ সালে তা ছিল ৯৪ কেজি। এ হিসাবে সাত বছরের ব্যবধানে জনপ্রতি সিমেন্টের ব্যবহার দ্বিগুণ বেড়েছে। অবশ্য সিমেন্ট প্রস্তুতকারক সমিতির হিসেবে দেশে জনপ্রতি সিমেন্টের ব্যবহার এখন ১৯০ কেজি।
বছরে মোট সিমেন্ট ব্যবহারের পরিমাণকে জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে জনপ্রতি সিমেন্ট ব্যবহারের হিসাব করা হয়। বাংলাদেশে সিমেন্ট ব্যবহার তিনটি খাত হলো সরকারি অবকাঠামো, গৃহনির্মাণ ও বেসরকারি আবাসন খাত। সিমেন্ট খাতের উদ্যোক্তারা জানান, অবকাঠামো খাতে কয়েক বছর ধরে বিনিয়োগ বাড়ছে। নতুন নতুন অবকাঠামো নির্মাণ অব্যাহত থাকায় সিমেন্টের ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে।
বাংলাদেশ সিমেন্ট প্রস্তুতকারক সমিতির সহসভাপতি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, দেশভিত্তিক সিমেন্ট ব্যবহারে বাংলাদেশের অবস্থান আগামী দিনেও বাড়বে। গত বছর ২ কোটি ১৩ লাখ টন সিমেন্ট উৎপাদন হয়েছে। জনপ্রতি ব্যবহার হয়েছে গড়ে ১৯০ কেজি। অবকাঠামো খাতে উন্নয়ন অব্যাহত থাকায় আগামী পাঁচ বছরে তা জনপ্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ কেজিতে উন্নীত হতে পারে। আগামী ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে সিমেন্টের ব্যবহার স্বাভাবিকভাবে বাড়বেই।
বাংলাদেশ সিমেন্ট প্রস্তুতকারক সমিতির হিসেবে দেশে এখন ৩১টি কোম্পানির সিমেন্ট কারখানা রয়েছে ৪০টি।