নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের ঘাটতি ১৫ ব্যাংকে

দেশের রাষ্ট্রমালিকানাধীন ও বেসরকারি ১৫ ব্যাংক গত বছর শেষে চাহিদা অনুযায়ী নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশনিং) সংরক্ষণ করতে পারেনি। এসব ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের বড় অংশের মান খারাপ হওয়ায় ব্যাংকগুলোর সঞ্চিতি ঘাটতি দেখা দিয়েছে। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এসব ব্যাংকের মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের মুনাফায় টান লাগত যদি চাহিদা অনুযায়ী সঞ্চিতি জমা রাখতে হতো। তাই মুনাফা কমে যাওয়ার ভয়ে অনেকে প্রয়োজন অনুযায়ী সঞ্চিতি সংরক্ষণ করেনি।

আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী, ব্যাংকের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে ঋণের মান বিবেচনায় নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকগুলো তার মুনাফা থেকে চাহিদামতো সঞ্চিতি সংরক্ষণ করে থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সাল শেষে যে ১৫টি ব্যাংক সঞ্চিতি সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও বেসিক ব্যাংক। বেসরকারি খাতের ভালো ব্যাংক হিসেবে পরিচিত ঢাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ও ট্রাস্ট ব্যাংক। আবার আগের মতো বাংলাদেশ কমার্স, এবি, ন্যাশনাল, প্রিমিয়ার, শাহ্‌জালাল, সোস্যাল ইসলামী, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকও নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে পারেনি। এদিকে ২০১৩ সালে কার্যক্রমে আসা সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকও এবার চাহিদা অনুযায়ী নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে পারেনি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, যেসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে কিন্তু মুনাফা সে অনুযায়ী বাড়েনি, সেসব ব্যাংকই চাহিদামতো নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে পারেনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রমালিকানাধীন কয়েকটি ব্যাংক বছরের পর বছর চাহিদামতো নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে পারছে না। সেই সঙ্গে গত তিন বছরে বেসরকারি খাতের কয়েকটি ব্যাংকও একই সমস্যায় পড়েছে। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট সঞ্চিতি ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬১৪ কোটি টাকায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর ৫৭ হাজার ৪৩ কোটি টাকা নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল। তবে ওই সময়ে ব্যাংকগুলো ৫০ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা সংরক্ষণ করতে পেরেছে। গত ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা, কমার্স ব্যাংকের ৫৯৩ কোটি টাকা, ঢাকা ব্যাংকের ৭২০ কোটি টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্টের ৭০৫ কোটি টাকা ও ন্যাশনাল ব্যাংকের ২ হাজার ২০৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রিমিয়ার ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৬১৯ কোটি টাকা, শাহ্‌জালাল ইসলামী ব্যাংকের ১ হাজার ২১ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ৭৯৩ কোটি টাকা, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের ৮০ কোটি টাকা ও ট্রাস্ট ব্যাংকের ১ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা।