স্মার্টফোনই এখন নতুন কারখানা

চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম আয়োজিত সংলাপে অংশ নিয়ে কর্মসংস্থান ও ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়ে বক্তব্য দেন প্যানেল আলোচকেরা। গতকাল রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে।  ছবি: প্রথম আলো
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম আয়োজিত সংলাপে অংশ নিয়ে কর্মসংস্থান ও ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়ে বক্তব্য দেন প্যানেল আলোচকেরা। গতকাল রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে। ছবি: প্রথম আলো

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়নে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে। তাতে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি শ্রমনিবিড় শিল্পে কর্মরত অনেকেই চাকরি হারাবেন। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যথাযথ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তরুণ সমাজকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। সরকারের একার পক্ষে কাজটি করা সম্ভব নয়। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত, উন্নয়ন সংস্থা ও আন্তর্জাতিক মহলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নিয়ে আয়োজিত সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে সংলাপটির আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। সংলাপে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় শিল্পবিপ্লব কারখানা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ে হয়েছিল। আর চতুর্থ শিল্পবিপ্লব হবে মুঠোফোনে। স্মার্টফোনের মাধ্যমেই বিরাট সম্ভাবনার সংযোগ ঘটবে। তবে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারে তরুণদের পিছিয়ে থাকাটা একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। মূল প্রবন্ধে এমনটাই বলেছেন ভারতের অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) সভাপতি সমীর সরণ। তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে মোবাইল ও ইন্টারনেট হচ্ছে নতুন কারখানা। তবে এটি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই কাঠামোগত ও সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে।

সমীর সরণ আরও বলেন, বাংলাদেশে ছয় কোটি তরুণ আছেন। শিক্ষা ও দক্ষতায় উন্নয়ন করতে পারলে তাঁদের দিয়ে বছরে ছয় হাজার কোটি ডলার আয় সম্ভব, যা মোট জিডিপির ২৫ শতাংশের কাছাকাছি। তবে শিক্ষা ও দক্ষতা বিষয়টি নিশ্চিত করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সে জন্য নতুন মডেল তৈরি করতে হবে। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে বছরে ছয় হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ৫৯ শতাংশ মানুষের বয়স ২৫ বছরের নিচে। তা ছাড়া এক-তৃতীয়াংশ মানুষের বয়স ১৮-৩৪ বছর। এই জনসংখ্যার সুবিধা নিতে হলে তাঁদের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা, যথাযথ প্রশিক্ষণ ও লাভজনক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের নির্বাহী সভাপতি ক্লাউস সোয়াবের বরাত দিয়ে আব্দুল মোমেন বলেন, আগামী বছরের মধ্যে ৫০ লাখ মানুষ চাকরি হারাবে। ১৯৯০ সালে তিনটি বড় গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ২৫ হাজার কোটি ডলার আয় করেছিল এবং কর্মসংস্থান হয়েছিল ১২ লাখ মানুষের। আর ২০১৪ সালে সিলিকন ভ্যালির তিনটি বড় প্রতিষ্ঠান একই পরিমাণ আয় করেছে মাত্র ১ লাখ ৩৭ হাজার কর্মী দিয়ে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান এস তানজিব ইসলামের সঞ্চালনায় প্রথম প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক বলেন, ‘শিক্ষিত ছেলেমেয়ে যখন চাকরির জন্য আসে, তখন আমাদের প্রয়োজনের সঙ্গে তাদের মেলাতে পারি না। এটিই বাংলাদেশের বাস্তবতা। ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কারখানার প্রয়োজন অনুসারে তরুণদের প্রস্তুত হতে হবে।’

বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল কাদীর বলেন, ২০-৩০ বছর আগে বিনিয়োগকারীরা জমি এবং সহজে গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ খুঁজতেন। আর আজকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের কী পড়ানো হচ্ছে? তারা কী শিখে বের হচ্ছে? নীতিনির্ধারকদের বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা দরকার।

শ্রীলঙ্কায় নিয়োজিত বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহর সঞ্চালনায় সংলাপের দ্বিতীয় প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ম্যাথ অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান তরুণদের উদ্দেশে বলেন, সমস্যা খুঁজতে হবে। তারপর সমাধান। মিলিয়ন ডলারের সমস্যা খুঁজে বের করলে মিলিয়ন ডলার আয় হবে। ঢাকায় বহু বছর আগে থেকে রিকশা ভাগাভাগি করে চলাচল করছে মানুষ। তবে গাড়ি শেয়ারের চিন্তাটা করেছে আমেরিকা।

উৎসাহ ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তরুণদের যোগ্য করে গড়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করেন মুনির হাসান। অবশ্য তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘প্রশিক্ষণের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা আছে। কেন, সেটি আমার জানা নেই।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আরশাদ মোমেন ও হাসিনা খান, প্যাসিফিক জিনসের এস এম তানভীর, পাঠাওয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ ফাহাদ প্রমুখ। সমাপনী বক্তব্য দেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক।