চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটেও সিংহভাগ পণ্য শুল্কমুক্ত থাকবে

যুক্তরাজ্য সরকার ঘোষণা দিয়েছে, নতুন চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট হলেও বেশির ভাগ পণ্যে তারা শুল্ক আরোপ করবে না। এক সাময়িক ব্যবস্থার অধীনে যুক্তরাজ্যের ৮৭ শতাংশ আমদানি করা পণ্য বিনা শুল্কে দেশটির বাজারে প্রবেশ করবে। আর এ মুহূর্তে দেশটির ৮০ শতাংশ আমদানি করা পণ্যই বিনা শুল্কে বাজারে ঢুকছে।

তবে দেশটির সরকার এ–ও বলেছে, কিছু শিল্পের সুরক্ষার জন্য শুল্ক থাকবেই, যেমন কৃষি। এ ছাড়া গরুর মাংস, ভেড়া, হাঁস-মুরগি ও কিছু দুগ্ধজাত পণ্যেও সুরক্ষা দেওয়া হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে যেসব পণ্য বেচাকেনা হয়, আমদানিকারক দেশগুলো সেই সব পণ্যেই শুল্ক আরোপ করে। আবার রপ্তানি পণ্যেও অনেক সময় শুল্ক আরোপিত হয়।

যুক্তরাজ্যের এই নতুন শুল্ক জমানায় ইউরোপের বাইরের দেশগুলোর পণ্যেই বেশি ছাড় দেওয়া হবে। অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর সব পণ্যই আগে যেখানে শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করত, সেখানে এখন তাদের ৮২ শতাংশ পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হবে। ইউরোপের বাইরের দেশগুলোর ৯২ শতাংশ পণ্য এখন শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করবে, আগে তা ছিল ৫৬ শতাংশ।

এই পরিকল্পনার অধীনে যুক্তরাজ্যের গাড়িশিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া হবে। অন্যদিকে আমদানি করা গাড়িতে শুল্ক আরোপ করা হবে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের গাড়ির যন্ত্রাংশ শুল্কমুক্ত প্রবেশের সুবিধা পাবে। এতে অনেক কোম্পানি যুক্তরাজ্যে কারখানা করতে উৎসাহিত হবে। পাশাপাশি সিরামিক শিল্পকেও সুরক্ষা দেওয়া হবে।

যুক্তরাজ্য সরকার ১ হাজার ৪৭৭ পৃষ্ঠার ব্রেক্সিট পরিকল্পনা করেছে। যেসব শিল্প এই সুরক্ষামূলক শুল্কের কারণে উপকৃত হবে, রপ্তানি শুল্কের খাঁড়া তাদের ওপর ঝুলবে কি না, সেটা তাদের বুঝতে হবে। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের গাড়িতে ১০ দশমিক ৬ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হবে। এতে সাধারণ একটি পারিবারিক কাজে ব্যবহৃত গাড়ির দাম ১ হাজার ৫০০ পাউন্ড বেড়ে যাবে। ভক্সওয়াগন ইতিমধ্যে বলেছে, এই ব্যয়ভার ভোক্তার ওপর চাপানো হবে।

যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যনীতিবিষয়ক মন্ত্রী জর্জ হুলিংব্রে বলেছেন, ‘আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একটি চুক্তি করাতেই অগ্রাধিকার দিচ্ছি। সেটা করা গেলে আমাদের বৈশ্বিক বাণিজ্য সম্পর্ক বিঘ্নিত হবে না। তবে আমাদের সব পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে শুল্ক ব্যবস্থাকে কিঞ্চিৎ উদার করা। ভারসাম্যপূর্ণ মনোভঙ্গি থাকলে যেমন ব্রিটিশদের চাকরি বাঁচানো যাবে, তেমনি মূল্যস্ফীতিও এড়ানো যাবে বলে তিনি মনে করেন।

অন্যদিকে চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট হলে আয়ারল্যান্ড থেকে উত্তর আয়ারল্যান্ড সীমান্তে পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে না বা ঘোষণার প্রয়োজন পড়বে না বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। মূলত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমান্তে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যেন ইউনিয়নের সংঘাত না হয়, সে জন্য যুক্তরাজ্য এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এই ব্যবস্থা সাময়িক। দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা প্রণয়নের জন্য আলোচনা চলছে। তবে যুক্তরাজ্য সরকার বলেছে, উত্তর আয়ারল্যান্ড হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের ক্ষেত্রে শুল্ক আরোপিত হবে।

আবার আইরিশ সীমান্তে শুল্ক আরোপ না করাটা দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয় বলে মনে করে যুক্তরাজ্য সরকার। এটি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নিয়মের লঙ্ঘন। কারণ, ডব্লিউটিওর নিয়ম অনুসারে সব বাণিজ্য অংশীদারকে সমানভাবে দেখতে হবে।

সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যালান উইন্টার্স বিবিসিকে বলেন, ‘ব্যাপারটা সাময়িক পদক্ষেপ হওয়ায় আমি মনে করি না, তা ডব্লিউটিওর জন্য খুব গুরুতর হবে।