আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়েছি সেটি সফলও হয়েছে: তৌফিক

তৌফিক এম সেরাজ
তৌফিক এম সেরাজ
>

ঢাকায় চারটি কনডোমিনিয়াম প্রকল্প আছে দেশের আবাসন খাতের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান শেল্টেকের। দুটি প্রকল্পের ফ্ল্যাট বিক্রিও করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন এই আধুনিক ব্যবস্থার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন শেল্টেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তৌফিক এম সেরাজ।

প্রথম আলো: বাংলাদেশে কনডোমিনিয়াম প্রকল্পের ধারণাটি এখনো নতুন। তবে আপনারা চার-পাঁচ বছর আগেই এমন প্রকল্প নিয়েছেন। কী চিন্তাভাবনা বা পরিকল্পনা থেকে কনডোমিনিয়াম প্রকল্প শুরু করলেন?

তৌফিক এম  সিরাজ: মিরপুরের মাজার রোডে শেল্‌টেক বীথিকা নামে কনডোমিনিয়াম করেছি। প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী কনডোমিনিয়ামে যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা, সেসব আমাদের প্রকল্পটিতে আছে। বীথিকা প্রকল্পে সুইমিং পুল, হাঁটার জায়গা, অনুষ্ঠানের জন্য কমিউনিটি হল, নিত্যপণ্যের দোকান, নামাজের জায়গা, এটিএম বুথ ইত্যাদি আছে। মিরপুরের মাজার রোডের অনেকগুলো খণ্ড খণ্ড জমি কিনে ৭০ কাঠার ওপর প্রকল্পটি করেছি। এ ধরনের প্রকল্প আমাদের দেশে নতুন হওয়ায় পরিকল্পনা করার সময়ই থাইল্যান্ডের একজন স্থপতির সহযোগিতা নিয়েছিলাম আমরা। বীথিকায় ২০০ ফ্ল্যাটে প্রায় ১ হাজার মানুষের বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা আছে। আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। সেটি সফল হয়েছে।

প্রথম আলো: কনডোমিনিয়াম প্রকল্পের জন্য তো বড় জমি লাগে, যা ঢাকার মতো ঘিঞ্জি শহরে পাওয়া খুব কঠিন। তাহলে ভবিষ্যতে কি আর এমন প্রকল্প করতে পারবেন?

তৌফিক এম সিরাজ: ঢাকায় একসঙ্গে জমি পাওয়াটা খুব কষ্টসাধ্য। তবে ইতিমধ্যে মালিবাগে আমরা ৩৭ কাঠা জমির ওপর আরেকটি কনডোমিনিয়ামের কাজ শুরু করেছি, নাম শেল্‌টেক এনক্লেভ টাওয়ার। সেখানে ১৩৫টি ফ্ল্যাট হবে। বাড্ডায় ৪৮ কাঠার ওপর রেনু কবির টাওয়ার নামের কনডোমিনিয়াম প্রকল্পের কাজ চলছে। আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে কাজ শেষ হবে। সেখানকার ১১৫টি ফ্ল্যাটের বিক্রি ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। চতুর্থ কনডোমিনিয়াম প্রকল্পটি হবে পান্থপথে। সে জন্য জমির মালিকদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে।

প্রথম আলো: কনডোমিনিয়াম প্রকল্পে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা যোগ করতে গিয়ে সাধারণ প্রকল্পের থেকে খরচ কি বেশি হয়?

তৌফিক এম সেরাজ: খরচ বেশি হয় না। সে জন্যই আমরা চ্যালেঞ্জটি নিয়েছি। রাজউকের নিয়মনীতি মেনে নির্মাণকাজ করলে খরচ বেশি হয় না। কারণ, সেখানে কতগুলো ফ্ল্যাট হলে কী কী সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে, সেটি মানলেই অনেক কিছু হয়ে যায়। পাঁচ কাঠা জমির মধ্যে দুই কাঠা জমি ছেড়ে দিলে তো কোনো ক্ষতি নেই। বীথিকা প্রকল্পে আমরা ৩০ কাঠা খালি জায়গা রাখার কারণে হাঁটার জায়গা, ফোয়ারা ইত্যাদি করতে পেরেছি। আসলে বড় প্রকল্পে এসব সম্ভব। কারণ, তখন ব্যবস্থাপনার খরচ কমে যায়। তবে জমি ম্যানেজ করতেই দুই থেকে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। একসঙ্গে অনেকগুলো খণ্ড খণ্ড জমির দরকার হয়। তবে এ ধরনের রিজেনারেশন প্রকল্পে জমির মালিক ও ক্রেতা উভয়েই উপকৃত হয়ে থাকেন।

প্রথম আলো: সেই সুবিধা কি সাধারণ ক্রেতারা পাচ্ছেন?

তৌফিক এম সেরাজ: অবশ্যই ক্রেতারা সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই। ২০১০ সালে মিরপুরে প্রতি বর্গফুট সাড়ে ৭ হাজার টাকায় আমরা ফ্ল্যাট বিক্রি করেছি। আর বর্তমানে অনেক সুযোগ-সুবিধাসহ ৬ হাজার ৫০০ টাকা বর্গফুটে ফ্ল্যাট দিচ্ছি বীথিকায়। অন্যদিকে কনডোমিনিয়াম প্রকল্পকে পরিকল্পিত আবাসন বলা যায়। আমরা এ ধরনের প্রকল্প করে অনেক জায়গা খালি করে দিচ্ছি। যেমন রামপুরার ছয়টি ছোট ভবনকে একত্র করে আমরা একটি কনডোমিনিয়াম প্রকল্প করছি, যার অর্ধেক জায়গা খালি থাকবে।

প্রথম আলো: আমাদের দেশে কোনো প্রকল্প ব্যবসা সফল হলে সব ব্যবসায়ী সেদিকে ঝোঁকেন। এতে ক্রেতারা প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। এটি বন্ধ করার উপায় কী?

তৌফিক এম সেরাজ: ক্রেতারা সচেতন না হলে প্রতারণা বন্ধ হবে না। আমরা প্রায়ই শুনি, ক্রেতারা প্রতারিত হয়েছেন। কেন এটি হবে? আমার কথা হচ্ছে, কোনো কোম্পানির ফ্ল্যাট কেনার আগে তাদের একটি প্রকল্প দেখবেন না? কাউকে জিজ্ঞেস করবেন না? কেউ আপনাকে সস্তায় দিল কিংবা জমির মালিক হিসেবে আপনাকে বেশি সুবিধা দিল, আর আপনি তার দিকে চলে গেলেন। তাহলে তো ঠকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ক্রেতারা সচেতন হলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যাবে।

প্রথম আলো: উন্নত বিশ্বের কনডোমিনিয়ামের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রকল্পগুলোর কোনো তফাত আছে কি?

তৌফিক এম সেরাজ: মান নিয়ে কথা বলাটা ঠিক হবে না। প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডে কনডোমিনিয়াম আরেকটু উঁচু ভবনে হয়। ওখানে একটি থেকে তিনটি শয়নকক্ষ বা লাক্সারি ইউনিট তো আছেই। আমরা যে প্রকল্প করছি তার সঙ্গে বাহ্যিক কাঠামোতে কোনো তারতম্য নেই। এখন কোন ক্রেতাগোষ্ঠীকে আপনি লক্ষ্য করে প্রকল্প বানাবেন, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। গুলশানেও কিন্তু এক বিঘা জমির ওপর অভিজাত কনডোমিনিয়াম বানানো সম্ভব। অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সেটি করা যাবে। তাতে প্রতি বর্গফুটের দাম ২৫-৩০ হাজার টাকা হয়ে যাবে। কনডোমিনিয়াম যেমন নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে আছে, তেমনি এশিয়ার অনেক শহরেও আছে। দামেও অনেক তফাত। হংকং বা সিঙ্গাপুরে অভিজাত কনডোমিনিয়াম খুবই ব্যয়বহুল। আমাদের দেশেও অভিজাত কনডোমিনিয়াম বানালে দাম অনেক বেশি হবে। তবে আমরা যেগুলো বানাচ্ছি, সেগুলো মধ্যবিত্তকে টার্গেট করে।