চাঁদাবাজি একটা বড় মাথাব্যথা : বাণিজ্যমন্ত্রী

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ফাইল ছবি
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ফাইল ছবি

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে চাঁদাবাজি একটা বড় মাথাব্যথা বলে মনে করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তবে এবার এই চাঁদাবাজি শক্ত হাতে দমন করবেন বলে ব্যবসায়ীদের আশ্বাস দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উৎপাদন, আমদানি, মজুত অবস্থা ও মূল্য পরিস্থিতি’ শীর্ষক পর্যালোচনা বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ের সময় এসব কথা বলেন। সচিবালয়ে আজ বুধবার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাণিজ্যসচিব মো. মফিজুল ইসলাম থেকে শুরু করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সব ধরনের কর্মচারী ও ব্যবসায়ী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
তবে ব্রিফিংয়ের আগে এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, দেশের ভোজ্যতেল ও চিনির অন্যতম দুই ব্যবসায়ী সিটিগ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালসহ অন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান জ্যোতির্ময় দত্ত, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম লস্কর এবং এনবিআর, কৃষি মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ প্রশাসনের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন বাজার কমিটির নেতারাও ছিলেন বৈঠকে। ১০ বছর ধরে রমজানের আগেই এ ধরনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এবং এসব বৈঠক কভার করার জন্য এগুলোতে সাংবাদিকেরাও উপস্থিত থাকতেন। আজই ব্যতিক্রম দেখা গেছে যে মন্ত্রী-সচিব মিলে সরকারি পক্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আগে বৈঠক করেন এবং পরে মন্ত্রী ব্রিফ করেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেখা যায়, বগুড়া বা রংপুরে যে সবজি ১০ থেকে ১২ টাকায় কেনাবেচা হয়, ঢাকায় এসে তার দাম হয়ে যায় ৪০ টাকা। যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, এত টাকা কেন হয়? তখন তাঁরা বলেন, পথে পথে চাঁদা দিতে হয়। শ্রমিকেরা টাকা খান, পুলিশ টাকা খায়, অমুক টাকা খায়, তমুক টাকা খায়, বাজার সমিতি টাকা খায়—এসব কথা শুনতে হয়। এগুলো পণ্যমূল্যের ওপর গিয়ে পড়ছে।’
চাঁদাবাজি ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতিবাচক আছে এবং একটা তদারক দল গঠন করা হবে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী

টিপু মুনশি বলেন, ‘এবার আমরা শক্ত হাতে দমন করব। সব জায়গায় তদারকি পয়েন্ট করা হবে। প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। কোনো অবস্থাতেই চাঁদাবাজি বরদাশত করা হবে না।’
পবিত্র রমজান মাসে ব্যবসায়ীদের সততার সঙ্গে এবং ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রয় নিশ্চিত করার আহ্বান জানান মন্ত্রী। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় মূল্যবোধ যদি থাকে এবং আমরা যদি মনে করি এই সময়টাতে সুযোগ নেওয়া ঠিক না, আল্লাহ খুশি হবেন।’

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত, সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রয়েছে। ব্যবসায়ীরা আশ্বাস দিয়েছেন যে কেজি বা লিটারে আট আনা থেকে এক টাকা লাভ করলেই যথেষ্ট। মূল্যবৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। বরং গত বছরের তুলনায় বর্তমানে অনেক পণ্যের দাম কমও রয়েছে। ব্যবসায়ীরা আরও বলেছেন, আসন্ন রমজান মাসে কোনো পণ্যের দাম বাড়বে না, সরবরাহেও ঘাটতি থাকবে না।
পণ্যের উৎপাদনকারী ও আমদানিকারকদের পণ্য বিক্রয়ের সময় রসিদ ব্যবহারেরও তাগিদ দেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা সে অনুযায়ী যৌক্তিক দামে পণ্য বিক্রি করবেন। কৃত্রিম উপায়ে কোনো ধরনের সংকট সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বৈঠকে উপস্থাপিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেলের তথ্য অনুযায়ী দেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা ১৮ লাখ টন হলেও পবিত্র রমজান মাসে এ চাহিদা দাঁড়ায় তিন লাখ টন। চলতি অর্থবছরের ৯ মার্চ পর্যন্ত ১৪ লাখ ৬৯ হাজার টন ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে, আর এই সময়ে ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে ১৭ লাখ ৬৬ হাজার টনের। চিনির বার্ষিক চাহিদাও ১৮ লাখ টন এবং রমজানে ৩ লাখ টন। ৯ মার্চ পর্যন্ত চিনি আমদানি হয়েছে ১০ লাখ ৭৩ হাজার টন এবং এই সময়ে এলসি খোলা হয়েছে ১২ লাখ ৪৭ হাজার টন চিনির। পেঁয়াজ, ছোলা, মসুর ডাল, খেজুর—এসব পণ্যেরও চাহিদার তুলনায় মজুত ভালো রয়েছে বলে বৈঠকে জানানো হয়।