নতুন করদাতা খোঁজার লক্ষ্য অর্জিত হচ্ছে না

নতুন করদাতা খুঁজে বের করার লক্ষ্য অর্জন কঠিন হয়ে পড়ছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) নতুন করদাতা খুঁজে বের করার যে লক্ষ্য ছিল, তার মাত্র ৩০ শতাংশ অর্জন করতে পেরেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বাড়ি বাড়ি কিংবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে সারা দেশ থেকে গত জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে সোয়া ২ লাখ নতুন করদাতা চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। অথচ সারা বছরে ৭ লাখ ২০ হাজার নতুন করদাতা খুঁজে বের করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর জরিপ অঞ্চল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এই কর জরিপ অঞ্চল সূত্রে আরও জানা গেছে, নতুন করদাতা খুঁজে বের করার কাজে গতি আনতে শিগগিরই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়োজিত করা হবে। তাঁরা বড় শহরের পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নতুন করদাতা খুঁজবেন।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, এনবিআরের ৩১টি কর অঞ্চলেই এই জরিপ কার্যক্রম চলছে। প্রতিটি কর অঞ্চলের জন্য চার থেকে ছয়জনের একটি দল আছে। এই দলটি মাঠপর্যায়ে গিয়ে নতুন করদাতা খুঁজছেন। তাঁরা বিভিন্ন এলাকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ব্যবসার ধরন, বার্ষিক আয়, আয়-ব্যয়, কর্মচারীর বেতন ইত্যাদি খতিয়ে দেখেন। এসব বিবেচনা করে কোনো ব্যক্তি করযোগ্য হলেই তাকে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া চাকরিজীবী, পেশাজীবী, বাড়িসহ গৃহসম্পত্তির মালিকদের কাছে যাচ্ছেন তাঁরা।

সূত্রটি আরও জানায়, বছরের শুরু থেকেই কর জরিপের কাজ শুরুর কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। গত অক্টোবর মাস থেকে এই জরিপ কার্যক্রম শুরু করে কেন্দ্রীয় কর জরিপ অঞ্চল। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় কর জরিপ অঞ্চল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে স্থায়ী সম্পত্তির (বাড়ি) তথ্য নিয়েছে। এ দুটি সিটি করপোরেশনে মোট হোল্ডিং সংখ্যা ৩ লাখ ৯২ হাজার। এর মধ্যে ২ লাখ ৩০ হাজার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীনে এবং ১ লাখ ৬২ হাজার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনে। এনবিআর কর্মকর্তারা মনে করেন, বাড়িওয়ালাদের অনেকেই করযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও টিআইএন নেই। এ ছাড়া সারা দেশে প্রায় ১২-১৩ লাখ করযোগ্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে। অথচ ১ লাখ ৬৩ হাজার ৫৫২টি প্রতিষ্ঠানের ইলেকট্রনিকস ব্যবসায় শনাক্তকরণ নম্বর (ইবিআইএন) আছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, নতুন করদাতার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ানো এনবিআরের বর্তমান জনবল কাঠামো দিয়ে সম্ভব
নয়। আবার নতুন করদাতা নিবন্ধন হওয়ার পর তাঁরা রিটার্ন দিচ্ছেন কি না, তা তদারকি করা হয় না। এ জন্য এনবিআরে দরকার স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনা বা অটোমেশন। স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় চিহ্নিত হবে কারা রিটার্ন দিলেন, কারা দিলেন না। তারপর যাঁরা রিটার্ন দেননি, তাঁদের রিটার্ন দেওয়ার নোটিশ দিতে হবে।

আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, এনবিআর এখনো সনাতনী পদ্ধতিতে চলছে। তারা অটোমেশন ব্যবস্থায় যেতে চায় না। অটোমেশনের জন্য এই পর্যন্ত অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ই-টিআইএনধারীর সংখ্যা ৩৬ লাখের বেশি হলেও নিয়মিত বার্ষিক রিটার্ন দেন মাত্র ১৫ থেকে ১৬ লাখ টিআইএনধারী। তাঁদের মধ্যে ১০ শতাংশ কোনো কর দেন না, তাঁরা ‘জিরো রিটার্ন’ দেন। যত আয়কর আদায় হয়, এর মধ্যে করপোরেট কর ও প্রাতিষ্ঠানিক কর আদায়ের পরিমাণ তিন-চতুর্থাংশ। বাকি এক-চতুর্থাংশ কর আসে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের কাছ থেকে।