ভোটারের দুয়ারে দুয়ারে প্রার্থীরা

চার দিন পর তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট গ্রহণ। সংগঠনের ঢাকা অঞ্চলের ২৬ পরিচালক পদের বিপরীতে লড়ছেন দুই প্যানেলের ৪৪ জন প্রার্থী। তাঁরা ভোট চাইতে এখন সাধারণ সদস্যদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতিও।

বিজিএমইএর নির্বাচনকেন্দ্রিক বড় দুই জোট সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম সমঝোতার মাধ্যমে একটি প্যানেল দিয়েছে। তার বিপরীতে নতুন জোট স্বাধীনতা পরিষদ খণ্ডিত প্যানেল দেওয়ায় সংগঠনটির নেতৃত্ব নির্বাচনে ৬ বছর পর ভোট হচ্ছে। তবে স্বাধীনতা পরিষদ চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রার্থী না দেওয়ায় সেখানে সম্মিলিত–ফোরামের ৯ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। তাতে সভাপতি ও ৭ সহসভাপতি পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে সম্মিলিত-ফোরাম।

বিজিএমইএর পরিচালক পদের সংখ্যা ৩৫। তবে আগামী শনিবার ঢাকা অঞ্চলের ২৬ পরিচালক পদের জন্য ভোট গ্রহণ হবে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিজিএমইএর কার্যালয়ে সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট হবে। মোট ভোটার ১ হাজার ৯৫৬ জন। তার মধ্যে ঢাকার ১ হাজার ৫৯৭ এবং ৩৫৯ জন চট্টগ্রামের।

জানা যায়, নির্বাচনে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে সম্মিলিত-ফোরাম ও স্বাধীনতা পরিষদ জোটগতভাবে পৃথক ইশতেহার দিয়েছে। গত সপ্তাহে চট্টগ্রামের র‍্যাডিসন ব্লু হোটেলে প্রার্থী পরিচিতি সভা করেছে সম্মিলিত-ফোরাম। আগামীকাল বুধবার ঢাকায় একই ধরনের সভা করবে তারা। ওই দিকে চট্টগ্রামের র‍্যাডিসন ব্লু হোটেল গতকাল সভা করেছে স্বাধীনতা পরিষদ। সশরীর ভোটারদের কাছে যাওয়ার পাশাপাশি উভয় প্যানেলের প্রার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।

সম্মিলিত-ফোরাম তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে পোশাকশিল্পের ভাবমূর্তি, দাম ও বাজার, দক্ষতা ও মজুরি, টেকসই শিল্প, নিরাপত্তা ও নীতি সহায়তা এবং প্রযুক্তি—এই ছয়টি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছে। বিজিএমইএর কার্যক্রমে আস্থা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা, ক্রেতাদের সঙ্গে ন্যায্য দর-কষাকষির জন্য কারখানার মালিকদের সচেতনতা বৃদ্ধি, নতুন বাজার সন্ধান, শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়াতে দক্ষ পোশাকশিল্প প্রকৌশল বিভাগ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গঠন, শ্রমবান্ধব কর্মপরিবেশ তৈরি, পোশাক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, নতুন পণ্য উন্নয়নে পরামর্শক ও বিশেষজ্ঞ নিয়োগ, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে তাল মেলাতে পোশাকশিল্পকে প্রস্তুত করা, অটোমেশনের মাধ্যমে শ্রমিকের দক্ষতা বাড়িয়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে এই জোট।

সম্মিলিত-ফোরামের প্যানেল লিডার হলেন মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক। জানতে চাইলে বিজিএমইএর এই সভাপতি প্রার্থী গতকাল বলেন, ‘ভোটারদের কাছে আমরা যাচ্ছি। তাঁদের কাছ থেকে আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। অনেক সাধারণ ভোটার আমাদের সঙ্গে প্রচারণায়ও নেমেছেন।’

এদিকে স্বাধীনতা পরিষদ তাদের ইশতেহারে পোশাকশিল্পের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে সঠিকভাবে তুলে ধরা, ইউডি ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, বন্ড, ফায়ার, ইআরসি ও আইআরসি লাইসেন্সের মেয়াদ ন্যূনতম তিন বছর করার চেষ্টা, পোশাকশিল্পকে সরাসরি ১০ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো, বিজিএমইএর সব স্ট্যান্ডিং কমিটিকে কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

জানতে চাইলে স্বাধীনতা পরিষদের আহ্বায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকার উত্তরা, গুলশান ও মিরপুরে ভোটারদের সঙ্গে বসেছি। আর গতকাল সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসেছি। ভোটারদের আমরা নির্ভয়ে ভোট দিতে আসার আহ্বান জানিয়েছি।’

সম্মিলিত-ফোরামের প্রার্থীরা হলেন রুবানা হক, এস এম মান্নান, ফয়সাল সামাদ, মোহাম্মদ নাছির, আসিফ ইব্রাহিম, আরশাদ জামাল, এম এ রহিম, কে এম রফিকুল ইসলাম, মো. শহীদুল হক, মশিউল আজম, ইনামুল হক খান, মাসুদ কাদের, ইকবাল হামিদ কোরাইশী, নাছির উদ্দিন, কামাল উদ্দিন, সাজ্জাদুর রহমান মৃধা, রেজওয়ান সেলিম, মুনির হোসেন, এ কে এম বদিউল আলম, মিরান আলী, মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, মোশারফ হোসেন ঢালী, শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী, মহিউদ্দিন রুবেল, শরীফ জহির ও নজরুল ইসলাম। চট্টগ্রাম অঞ্চলে এই প্যানেলের বিজয়ীরা হলেন মোহাম্মদ আব্দুস সালাম, এ এম চৌধুরী, এ এম মাহবুব চৌধুরী, এনামুল আজিজ চৌধুরী, মোহাম্মদ আতিক, খন্দকার বেলায়েত হোসেন, অঞ্জন শেখর দাশ, মোহাম্মদ মুছা ও মোহাম্মদ মেরাজ-ই-মোস্তফা।

অন্যদিকে স্বাধীনতা পরিষদের প্রার্থীরা হলেন জাহাঙ্গীর আলম, দেলোয়ার হোসেন, হুমায়ুন রশিদ, রফিক হাসান, সাইফুল ইসলাম, শওকত হোসেন, খন্দকার ফরিদুল আকবর, জাহাঙ্গীর কবির, জাহিদ হাসান, শরিফুল আলম চৌধুরী, কাজী আবদুস সোবহান, জহিরুল ইসলাম, কাজী মাহয্যাবিন মমতাজ, মাহমুদ হোসাইন, হোসেন সাব্বির মাহমুদ, আয়েশা আক্তার, মো. ওয়ালীউল্লাহ এবং ওমর নাজিম হেকমত।