চলতি বছর বৈশ্বিক বাণিজ্য কমবে

২০১৮ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে বৈশ্বিক বাণিজ্য শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে। এ বছর বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধির হার কমে ২ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে, যদিও বিশ্লেষকেরা ধারণা করেছিলেন, চলতি বছর বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছে। ২০১৮ সালে এই প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৩ শতাংশ।

বার্ষিক পূর্বাভাসে ডব্লিউটিও বলেছে, বিভিন্ন দেশে নতুন নতুন শুল্ক ও প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থার কারণে বৈশ্বিক বাণিজ্য কমে যাচ্ছে। এর সঙ্গে আছে দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক বাজারের টালমাটাল অবস্থা ও উন্নত দেশগুলোর সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি। সংস্থাটি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বলেছিল, সে বছর বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২০১৭ সালে ছিল ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। তবে সেপ্টেম্বরে ডব্লিউটিওর সেই পূর্বাভাসও খাটেনি।

সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক রবার্তো আজেভেদো বলেন, পূর্বাভাস কম করে দেখানোর মধ্যে বিস্ময়ের কিছু নেই, বিশেষ করে মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে। সংস্থাটির প্রধান অর্থনীতিবিদ রবার্ট কুপম্যান বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে গাড়ি আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।

রবার্ট কুপম্যান আরও বলেন, ‘মার্কিন-চীন বাণিজ্য বৈশ্বিক বাণিজ্যের ৩ শতাংশ। আর বৈশ্বিক বাণিজ্যের ৮ শতাংশজুড়ে আছে গাড়ির বাণিজ্য। স্পষ্টত, গাড়ির ওপর শুল্ক আরোপিত হলে তার প্রভাব সামগ্রিকভাবে মার্কিন-চীন বাণিজ্য সংঘাতের চেয়ে বেশি অনুভূত হবে। বৈশ্বিক বাণিজ্যে এর বড় ধাক্কা লাগবে।’

ব্রেক্সিট প্রসঙ্গে রবার্ট কুপম্যান বলেন, ডব্লিউটিওর এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পূর্বাভাস না থাকলেও বলা যায়, চলতি বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হারের যে সীমা সংস্থাটি নির্ধারণ করেছে (১ দশমিক ৩-৪%), পরিস্থিতি খুব খারাপ হলে বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রবৃদ্ধির হার ১ শতাংশের কাছাকাছি নেমে যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘ব্রিটেনের নিজের বিশ্লেষণ হলো, চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট হলে ব্রিটিশ জিডিপির ৭ দশমিক ৬ শতাংশ কমে যেতে পারে। পরিসংখ্যানের হিসাবে এটি অনেক বড়। সেটা হলে বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রবৃদ্ধির হার সীমার সর্বনিম্ন বিন্দুতে চলে যেতে পারে।’

২০১৮ সালে বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধির হার খুব বেশি না হলেও তেলের দাম ২০ শতাংশ বাড়ায় ডলারের দাম ১০ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে এশিয়ার আমদানি বাড়ায় বাণিজ্যবিষয়ক সেবার বাণিজ্য ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলারে।

অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পণ্য বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি আরও বেশি হতে পারে। এসব দেশে রপ্তানি বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ আর উন্নত দেশগুলোতে তার হার দাঁড়াতে পারে ২ দশমিক ১ শতাংশে।

বাণিজ্যযুদ্ধে কোন পক্ষ জিততে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে ডব্লিউটিওর মহাপরিচালক রবার্তো আজেভেদো সংবাদ সম্মেলনে বলেন, কে জিতবে বলা মুশকিল, তবে এতে অনেক পক্ষই হারবে। সে জন্য উভয় পক্ষের উত্তেজনা দ্রুত প্রশমন করে ফেলা দরকার বলে মত দেন তিনি।

এদিকে মার্কিন-চীন পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ আপাতত বন্ধ থাকলেও তাদের মধ্যে কবে আবার চুক্তি হতে পারে, তা কেউ জানে না। সে জন্য এক ধরনের অনিশ্চয়তা রয়েই যাচ্ছে।