বিশ্বব্যাংকের প্রধানই বিশ্বায়নবিরোধী

বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস। ছবি: এএফপি
বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস। ছবি: এএফপি

বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুগত ও দীর্ঘদিনের রিপাবলিকান সমর্থক ডেভিড ম্যালপাস। ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি ট্রাম্পের জ্যেষ্ঠ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন। বিবিসি সূত্রে এ খবর পাওয়া গেছে।

ম্যালপাসের নিয়োগ নিয়ে ইতিমধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বলছেন, ম্যালপাস যেহেতু আগে থেকেই বিশ্বব্যাংকের সমালোচক ছিলেন, সেহেতু তিনি বিশ্বব্যাংকের ভূমিকা সংকুচিত করতে পারেন। সেই সঙ্গে ট্রাম্পের মতো বিশ্বায়ন-বিরোধিতার ইতিহাস তাঁরও আছে।

অন্যদিকে ডেভিড ম্যালপাস বলেছেন, এই নিয়োগ পেয়ে তিনি ‘সম্মানিত’ বোধ করছেন। বিবিসিকে তিনি বলেছেন, ‘চরম দারিদ্র্য হ্রাস এবং অভিন্ন সমৃদ্ধি অর্জনের যে দ্বিমুখী লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বব্যাংক কাজ করে, তা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি প্রাসঙ্গিক।’ যদিও এর আগে তিনি বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতো বহুপক্ষীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘অনাহূত প্রবেশকারী’ আখ্যা দিয়ে সমালোচনা করেছেন।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ডেভিড ম্যালপাসকে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাংকের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট পদের জন্য মনোনীত করবে। বিশ্বব্যাংকের ২৫ সদস্যের নির্বাহী পর্ষদে যুক্তরাষ্ট্রে ভোট ১৬ শতাংশ। বলা বাহুল্য, বিশ্বব্যাংকে যুক্তরাষ্ট্র মনোনীত ব্যক্তিরাই প্রেসিডেন্ট হবেন—এই রীতি অনেক দিন ধরেই চলে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বব্যাংকের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শেয়ারধারী হচ্ছে জাপান এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ শেয়ারধারী দেশ হচ্ছে চীন।

ডেভিড ম্যালপাসকে নিজের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে হবে। কিন্তু অতীতের কিছু মন্তব্যের কারণে তাঁর ভূমিকা নিয়ে সমালোচকদের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। অতীতে তিনি বিশ্বব্যাংককে অনেক বড় প্রতিষ্ঠান আখ্যা দিয়েছিলেন। তিনি চীনের মতো মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে বেশি ঋণ দেওয়ার পক্ষপাতী নন। তাঁর মতে, চীন এমনিতেই যথেষ্ট শক্তিশালী। তিনি বিশ্বব্যবস্থাকেও চ্যালেঞ্জ করেছেন। ২০১৭ সালে কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘বহুপক্ষীয় ব্যবস্থা অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে। ব্যাপারটা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে তা যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বের প্রবৃদ্ধি ব্যাহত করছে।’

ম্যালপাসের নেতৃত্বে বিশ্বব্যাংক দরিদ্রতম দেশগুলোকে ঋণ দিতে বেশি আগ্রহী হতে পারে। বাংলাদেশের মতো দেশের ওপর এর প্রভাব পড়বে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, এতে বাংলাদেশের ওপর গুরুতর প্রভাব পড়বে না। কারণ, বিশ্বব্যাংককে ঋণ প্রদান কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের নীতি রাতারাতি পাল্টানো যাবে না। এর জন্য সময় ও সবার সমর্থন লাগবে। তবে চীন ও ভারতের মতো দেশের ঋণ প্রাপ্তি কিছুটা কমতে পারে। তবে চীন তো আর এই ঋণের ওপর নির্ভরশীল নয়। আর বাংলাদেশের উচিত প্রাপ্ত ঋণের সদ্ব্যবহার করা।