এক মাসেই বাজার মূলধন কমেছে ১৮ হাজার কোটি টাকা

>

• গতকাল এক দিনে বাজার মূলধন ৬ হাজার কোটি টাকা কমে
• গতকাল ঢাকার বাজারে সূচকেরও বড় ধরনের পতন ঘটে
• টানা দরপতনের প্রতিবাদে গতকালও বিক্ষোভ হয়েছে
• উদ্যোগ নেওয়া না হলে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা

টানা দরপতনে মাত্র এক মাসের ব্যবধানে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা কমে গেছে। অর্থাৎ এ সময়ে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের বিপুল পরিমাণ মূল্য হারিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বড় মূলধনি কিছু কোম্পানির অস্বাভাবিক দরপতনে বাজারও বড় অঙ্কের মূলধন হারিয়েছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার এক দিনেই বাজার মূলধন প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা কমে গেছে। এর পেছনে বড় কারণ ছিল গ্রামীণফোন, ইউনাইটেড পাওয়ার, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর মতো মৌল ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির অস্বাভাবিক দরপতন।

বাজার মূলধনের পাশাপাশি গতকাল ঢাকার বাজারে সূচকেরও বড় ধরনের পতন ঘটে। ডিএসইএক্স সূচক ৫৩ পয়েন্ট বা প্রায় ১ শতাংশ কমে গেছে। তাতে দিন শেষে সূচকটি নেমে এসেছে ৫ হাজার ৩১৯ পয়েন্টে। লেনদেনও আগের দিনের চেয়ে ৫২ কোটি টাকা কমেছে। টানা পতনের ফলে ডিএসইর এই সূচক তিন মাস আগের অবস্থানে ফিরে গেছে।

বাজারের টানা দরপতনের প্রতিবাদে গতকালও বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে বিক্ষোভ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। দুপুরে লেনদেন শেষে মতিঝিলে ডিএসইর সামনে এ বিক্ষোভ করেন বিনিয়োগকারীরা। এ সময় তাঁরা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নীরব ভূমিকার সমালোচনা করেন এবং পতন ঠেকাতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া না হলে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।

 বাজারের টানা পতনের জন্য আস্থার সংকটকে দায়ী করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে আস্থার সংকটের কথা জানান ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাকিল রিজভী। এ সময় বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। বাজারে মানসম্মত কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও না আসা, ব্যাংকের সুদের হার বেড়ে যাওয়া, সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বেশি থাকা ও লভ্যাংশ হিসেবে অতিমাত্রায় বোনাস শেয়ার প্রদান বাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

এদিকে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল বাজারসংশ্লিষ্টদের নিয়ে জরুরি সভা করেছে বিএসইসি। আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় দুই স্টক এক্সচেঞ্জ, ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন, মার্চেন্ট ব্যাংক, রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন।

ডিএসই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বৈঠকে ব্রোকারেজ হাউসের সেবা বুথ ও শাখা খোলা, ‘স্ক্রিপ্ট নেটিং’ সুবিধা চালু, গ্রামীণফোনের কাছ থেকে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা পাওনা চেয়ে বিটিআরসির দেওয়া চিঠির প্রভাব, বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইউনাইটেড পাওয়ারের শেয়ার বিক্রির উদ্যোগের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। পরে বিএসইসির চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেন স্ক্রিপ্ট নেটিং সুবিধা চালুর জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নিশ্চয়তা দেন। বাজার–সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্ক্রিপ্ট নেটিং সুবিধা চালু হলে তাতে বাজারে লেনদেনের পরিমাণ বাড়বে। গ্রাহকের বিও (বেনিফিশারি ওনার্স) হিসাবে থাকা বিক্রয়যোগ্য শেয়ার বিক্রি করে পুনরায় শেয়ার কেনার সুযোগ মিলবে। এ জন্য লেনদেন নিষ্পত্তির নির্ধারিত সময়ের অপেক্ষা করতে হবে না।

তবে গতকালের বৈঠক ও বাজারের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে বিএসইসির দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

মার্চেন্ট ব্যাংক আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকালের বাজারে সূচকে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ইউনাইটেড পাওয়ার ও গ্রামীণফোন। এর মধ্যে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর শেয়ারের দাম গতকাল এক দিনেই ১০৫ টাকা বা সোয়া ৬ শতাংশ, ইউনাইটেড পাওয়ারের দাম ৩৩ টাকা বা পৌনে ৯ শতাংশ এবং গ্রামীণফোনের দাম ১০ টাকা বা ৩ শতাংশ কমেছে। এদের মধ্যে আবার ইউনাইটেড পাওয়ার ও গ্রামীণফোনের শেয়ারের দাম কয়েক দিন ধরে অস্বাভাবিকভাবে কমছে। বড় মূলধনি কোম্পানি হওয়ায় এসব শেয়ারের দরপতনের বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সূচকে।