বিশ্ববাজারে দাম পড়ছে ছোলা-ডালের

>

• আমদানিনির্ভর পণ্য
• বিশ্ববাজারে দাম কম
• বিশ্ববাজারে পড়তির দিকে থাকলে কেউ পণ্য ধরে রাখতে চায় না

প্রতিবছর রোজার আগে বিশ্ববাজারে ছোলার দাম বেড়ে যায়। আর বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারতসহ কয়েকটি দেশে ছোলার চাহিদা বাড়ার সুযোগটি নেয় প্রধান রপ্তানিকারক দেশ অস্ট্রেলিয়া। ভারত কার্যত আমদানি না করায় এবার রোজার এক থেকে দুই মাস আগে বৈশ্বিক বাজারে ছোলার দর পড়ে গেছে। টনপ্রতি ছোলা ৮০ থেকে ১০০ ডলার কমে ৬৫০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে।

ছোলার মতো রোজার সময় বেশি চলে—এমন সব পণ্যের দামই এখন বিশ্ববাজারে কম। এই তালিকায় আছে মটর, মসুর, সয়াবিন, পাম তেল ও চিনি। খেজুরের দাম না কমলেও গত বছরের মতোই স্থিতিশীল আছে। বিশ্ববাজারে পণ্যের দামে সুখবর থাকার আমদানিনির্ভর রোজার পণ্যে সুফল পাচ্ছেন ক্রেতারা। ঠিক এমন সময় এই সুখবর পাওয়া গেছে, যখন রোজা শুরুর তিন সপ্তাহ বাকি।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোজার আগে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমে গেছে। স্থানীয় বাজারে আমদানি দরের চেয়ে কমে বিক্রি হচ্ছে পণ্য। এর কারণ হলো, বিশ্ববাজারে পড়তির দিকে থাকলে কেউ পণ্য ধরে রাখতে চায় না। এরপরও কেউ যাতে অযৌক্তিকভাবে দাম বাড়ানোর সুযোগ নিতে না পারে, সে জন্য সজাগ দৃষ্টি রাখতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানাই।’

রোজার পণ্যের সিংহভাগ আমদানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। এ বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত গত তিন মাসে চাহিদা অনুযায়ী রোজার পণ্য এনেছেন ব্যবসায়ীরা। চলতি মাসে বন্দর দিয়ে খালাস হচ্ছে রোজার পণ্য, আবার পাইকারি বাজারেও বেচাকেনা শুরু হয়েছে।

রোজায় সবচেয়ে বেশি চলে ছোলা। রোজায় ৮০ থেকে ৯০ হাজার টন ছোলার চাহিদা আছে। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ছোলা আমদানি হয়েছে ৯৪ হাজার টন ছোলা। ব্যবসায়ীরা জানান, প্রধান রপ্তানিকারক দেশ অস্ট্রেলিয়ায় ছোলা উৎপাদন ৬৬ শতাংশ কমে ৩ লাখ ৭০ হাজার টনে নেমেছে। রপ্তানিও শুরু হয় টনপ্রতি ৭৫০ ডলারে। তবে ভারত কার্যত আমদানি না করায় দাম কমে ছোলা এখন ৬৫০ ডলারের নিচে বিক্রি হচ্ছে।

শীর্ষস্থানীয় আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, চাহিদানুযায়ী আমদানি হওয়ায় বাজারে দাম বাড়ারও শঙ্কা নেই। স্থানীয় বাজারে গত বছরের চেয়ে কম দরে ছোলা বিক্রি হচ্ছে।

গত মঙ্গলবার খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে দেখা যায়, আমদানিকারকেরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে যে দরে ছোলা বিক্রি করছেন, তাতে কেজিতে দাম পড়ছে মানভেদে ৬২ থেকে ৬৫ টাকা। গত বছর এ সময়ে দাম ছিল ৬৭ থেকে ৭২ টাকা।

ছোলার মতো রোজায় মটর ও মসুর ডালের ব্যবহার বেশি। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে মটর ডাল আমদানি হয় ১ লাখ ৭৭ হাজার টন। মসুর ডাল আমদানি হয় ৭৫ হাজার টন। এই দুটি পণ্যের বৈশ্বিক বাজারও গত বছরের তুলনায় কম। ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানিকারকেরা পাইকারি বাজারেও কেজিপ্রতি মটর ডাল ২৯ টাকা বিক্রি করছেন, যা গত বছরের চেয়ে কেজিপ্রতি পাঁচ-ছয় টাকা কম। পাইকারি বাজারে আমদানি করা কেজিপ্রতি মসুর ডাল ৪৬ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চট্টগ্রাম ডাল মিল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সঞ্জয় দেব প্রথম আলোকে বলেন, রোজার আগেই ডালজাতীয় পণ্যের বাজার পড়তির দিকে। বিশ্ববাজারে দর পড়ে যাওয়ায় এখন ব্যবসায়ীরা দ্রুত বিক্রি করে বাজার থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছেন।