ধনীদের আয়বৈষম্যে ত্রাণের সুযোগ কম

ফরাসি অর্থনীতিবিদ টমাস পিকেটির লেখা ৮০০ পৃষ্ঠার ‘ক্যাপিটাল ইন দ্য টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি’ (একুশ শতকে পুঁজি) বইটি ২০১৩ সালে বাজারে আসে। এসেই ব্যাপক আলোড়ন তোলে এটি। এতে তিনি তথ্য–উপাত্ত ব্যবহার করে আয়বৈষম্য নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন। এই তথ্যভান্ডারের বিরাট অংশজুড়ে রয়েছে আয়করবিষয়ক তথ্য-উপাত্ত।

কয়েকটি ধনী দেশের ১০০ বছরের বেশি সময়ের করসংক্রান্ত তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে পিকেটি দেখিয়েছেন, ধনীরা কীভাবে আরও ধনী হচ্ছে আর দুনিয়াজুড়ে আয়বৈষম্য বাড়ছে। বৈষম্য কমানোর জন্য তিনি করব্যবস্থাপনা উন্নততর করার ওপর জোর দিয়েছেন।

বইটির এখন পর্যন্ত ২৫ লাখ কপি বিক্রি হয়েছে। ১৯৭০ সালের পর থেকে পশ্চিমে আয়বৈষম্য যে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়, বইটিতে তা তুলে ধরা হয়। তবে এই দীর্ঘ সময়ে বৈষম্য দূর করতে যে পরিমাণ ‘কল্যাণ ব্যয়’ করা উচিত ছিল, তা হয়নি। তাত্ত্বিক জ্ঞান বলে, ধনী ও দরিদ্রের আয়ের মধ্যে ব্যবধান যত বাড়ে, আয় ও সম্পদের পুনর্বণ্টনও সেই হারে বাড়াতে হয়। তা না হলে ত্রাণেও বৈষম্য বাড়ে এবং তা বণ্টনের সুযোগ কমে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, ১৯৮০ সাল থেকে কল্যাণ ব্যয়ের পুনর্বণ্টনে তেমন কোনো প্রবৃদ্ধি হয়নি। দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।

নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জনাথন চ্যাপম্যান ভিক্টোরিয়া যুগের যুক্তরাজ্যে স্থানীয় পরিচালিত কল্যাণ ব্যবস্থায় বৈষম্য ও দরিদ্র আইনের মধ্যে সম্পর্ক দেখার চেষ্টা করেন। তিনি খেয়াল করেন, যেসব এলাকায় ধনী–দরিদ্রের মধ্যে আয়বৈষম্য বেশি, সেসব জায়গায় দরিদ্রদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণে সেভাবে আইন মানা হয় না। তিনি অবাক হয়ে দেখেন, যেসব এলাকায় অতি ধনী ও সচ্ছলের মধ্যে ব্যবধান বেশি, সেসব এলাকায় কল্যাণ তহবিল ছাড়ে কড়া আইন মানা হয়।

এই অবস্থা যুক্তরাজ্যে এখনো দেখা যায়। ব্রিটেনের উচ্চমধ্যবিত্তরা উত্তরাধিকার কর ঘৃণা করেন। উত্তরাধিকার করের অর্থ হলো উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির ওপরে নির্দিষ্ট হারে কর জমা দিতে হবে। এর ফলে সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ বাড়বে। এই করের আওতায় কল্যাণ ব্যয় হয়। আর তাই এই কর পছন্দ করে না ব্রিটিশ সচ্ছল গোষ্ঠী। তারা বিশ্বাস করে, অতি ধনী ব্যক্তিরা তাদের সমান কর দিচ্ছেন না। ১৯৮০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত গবেষণায় দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে দিন দিন অতি ধনীর সংখ্যা বেড়েছে। সমগ্র বিশ্বের আয়বৈষম্যের চিত্রও হতাশাব্যঞ্জক। বিশ্বের মোট সম্পদের ৫০ শতাংশ মাত্র ১ শতাংশ মানুষের হাতে কুক্ষিগত।

নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক—স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এসব দেশের ক্ষেত্রে আমরা দেখি, সামাজিক বিভিন্ন ধরনের রাজস্ব ব্যবস্থা ও সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বৈষম্যকে অনেক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।