ফাইভ-জি বদলে দেবে জীবনধারা

ফাইভ-জি
ফাইভ-জি

বিশ্বে তৃতীয় প্রজন্ম (থ্রি-জি) ও ফোর-জির (চতুর্থ প্রজন্ম) ইন্টারনেট সেবার চেয়ে দ্রুতগতিতে বাড়বে ফাইভ-জির (পঞ্চম প্রজন্ম) ব্যবহার। ২০২৫ সাল নাগাদ পৃথিবীতে ফাইভ-জির গ্রাহক দাঁড়াবে ২৮০ কোটি। যেসব দেশে ফাইভ-জি চালু হবে, সেখানে মানুষের জীবনধারা পাল্টে যাবে।

চীনের টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের বিশ্লেষক সম্মেলন-২০১৯-এ এসব কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। হুয়াওয়ের তিন দিনের বিশ্লেষক সম্মেলনটি গতকাল মঙ্গলবার চীনের শেনজেন শহরের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে শুরু হয়েছে।

২০০৪ সাল থেকে প্রতিবছর হুয়াওয়ে এই সম্মেলন আয়োজন করে আসছে। এবারের সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের ৭৫০ জনের বেশি প্রযুক্তি-বিশ্লেষক, আর্থিক বিশ্লেষক, টেলিযোগাযোগ খাতের প্রতিনিধি ও সংবাদকর্মীরা যোগ দিয়েছেন।

সম্মেলনের প্রথম দিন হুয়াওয়ে তথ্যপ্রযুক্তির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিজেদের প্রক্ষেপণ, নতুন প্রযুক্তি ও ব্যবসায়িক সাফল্য তুলে ধরে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উঠে আসে হুয়াওয়ের ব্যবসা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বাধার বিষয়টিও।

শুরুতে ‘ফুললি কানেকটেড ইন্টেলিজেন্ট ওয়ার্ল্ড’ (পুরোপুরি সংযুক্ত ও বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন বিশ্ব) শীর্ষক অধিবেশনে হুয়াওয়ের ডেপুটি চেয়ারম্যান কেন হু বলেন, ‘যতটা আমরা ধারণা করেছিলাম, ফাইভ-জি তার চেয়ে দ্রুতগতিতে আসছে। ফাইভ-জি প্রযুক্তির প্রথম এক বছরেই চারটি চিপসেট এসে গেছে, ফোর-জিতে একটাও ছিল না। ১ লাখের বেশি বেজস্টেশন বসেছে, যা ফোর-জিতে ছিল ৪০০টি। ৪০টির বেশি ফাইভ-জি মোবাইল সেট এসে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাকে যদি কেউ প্রশ্ন করেন, ফোর-জিতে তো ভালো গতি মেলে। তাহলে ফাইভ-জি আবার কেন? আমি বলব, ফাইভ-জি শুধু গতি নয়, এটা একটা বিপ্লব। এটা বাধাহীন গতি দেবে। জীবনধারা বদলে দেবে।’

অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, বিশ্বের পাঁচটি কোম্পানি ফাইভ-জি প্রযুক্তি তৈরি ও সরবরাহ করে, যাদের মধ্যে হুয়াওয়ে সবার ওপরে। এ ছাড়া রয়েছে জেডটিই, নকিয়া, স্যামসাং ও এরিকসন। গত ১৯ মার্চ দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রথম ফাইভ-জি চালু হয়। আরও কয়েকটি দেশে ফাইভ-জি পরীক্ষা হচ্ছে।

এ দেশে ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ফাইভ-জি চালু হবে বলে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার একাধিকবার বলেছেন, দেশে ২০২১ সালে ফাইভ-জি চালু করা হবে।

প্রযুক্তি সেবাদাতারা বলছে, ফাইভ-জি চালু হলে কয়েক সেকেন্ডে একটি উচ্চমানের বা হাইডেফিনেশন (এইচডি) ভিডিওর সিনেমা ডাউনলোড করা যাবে, যেটা ফোর-জিতে কয়েক ঘণ্টা লাগে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন, কারখানার উৎপাদনব্যবস্থায় বিপুল পরিবর্তন আসবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই) ও যন্ত্রের সঙ্গে যন্ত্রের যোগাযোগ বা আইওটির (ইন্টারনেট অব থিংস) ব্যবহার বাড়বে।

ফাইভ-জি চালু হলে মানুষ ঘরে বসেই ভিআর (ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি বা ভিআর) ব্যবহার করে মাঠে রিয়েল টাইমে খেলা দেখার অনুভূতি পাবে। ভিআর ব্যবহার করে দূরে বসে শিক্ষা নেওয়া যাবে, যাতে মনে হবে শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে বসে আছেন। শিল্পকারখানায় এআই ব্যবহার করার ফলে একদিকে উৎপাদনশীলতা বাড়বে, অন্যদিকে ঝুঁকি অনেক কমানো যাবে। সেই সঙ্গে উৎপাদন খরচ অনেক কমবে। উন্নত বিশ্বে চালকবিহীন গাড়ি, ড্রোনে করে খাবার পৌঁছে দেওয়া ত্বরান্বিত করবে ফাইভ-জি।

সম্মেলনে এআই ব্যবহারের একটা উদাহরণ তুলে ধরেন হুয়াওয়ের ডেপুটি চেয়ারম্যান কেন হু। তিনি বলেন, ‘ইদানীং শেনজেন শহরে যানজট অনেক কমে গেছে। এর কারণ আমরা এআই ব্যবহার করে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নতি করেছি।’

সম্মেলনে হুয়াওয়ে ভবিষ্যতে কী কী প্রযুক্তি আনতে চায়, তা-ও তুলে ধরেন কেন হু। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে মোটামুটি সব যন্ত্র হবে মোবাইলের সঙ্গে সংযুক্ত। এআই দিয়ে আমরা বুঝতে পারব মানুষ কী চায়, সে অনুযায়ী আমরা তাকে সেটা দেব। মানুষকে অনেক যন্ত্র, অনেক অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে না।’ মুঠোফোনও একসময় বাটনমুক্ত হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।