ধীরে এগোচ্ছে জাপানে জনশক্তি রপ্তানি

  • গত বছর ১৬৩ জন জাপানে পাঠাতে পেরেছে বাংলাদেশ
  • সরকারিভাবে এ বছর জাপানে যেতে পারেন ৪০০ জন
  • আগামী বছর এ সংখ্যা এক হাজার ছাড়াতে পারে
  • দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টায় বাংলাদেশ

পাঁচ বছরে শিল্পকারখানা, নির্মাণকাজ, সেবাদানকারীসহ ১৪টি খাতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ দক্ষ জনশক্তি নেবে জাপান। কিন্তু বিরাট সম্ভাবনাময় এ বাজার ধরতে পারছে না বাংলাদেশ। দক্ষ শ্রমিক তৈরিতে অতি ধীরগতিই এর কারণ।

সরকারি হিসাব বলছে, গত বছর মাত্র ১৬৩ জন জাপানে পাঠাতে পেরেছে বাংলাদেশ। চলতি বছর এ সংখ্যা ৪০০ জনে পৌঁছাতে পারে। তবে এখন দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে গতি বাড়াতে বেসরকারি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুক্ত করতে যাচ্ছে সরকার।

জানা গেছে, জাপানের জনশক্তি নেওয়ার তালিকায় আছে চীন, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, মঙ্গোলিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের নাম। এ তালিকায় না থাকলেও জাপানে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি বাড়াতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে ইন্টারন্যাশনাল ম্যানপাওয়ার ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (আইএম) জাপানের সঙ্গে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের স্বাক্ষরিত একটি সমঝোতা স্মারকের আওতায় সরকারিভাবে বর্তমানে দক্ষ শ্রমিক পাঠানো হচ্ছে সে দেশে।

এ বছরের প্রথম তিন মাসে জাপানে গেছেন ৪০ জন দক্ষ শ্রমিক। হাতে আছেন হাজারখানেক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলার ২৭টি কেন্দ্রে ৪০ জন করে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)। চার মাস মেয়াদি জাপানি ভাষা শেখার এসব প্রশিক্ষণের পর শ্রমিকেরা পরীক্ষায় বসেন। উত্তীর্ণ হলে আইএম জাপানের ব্যবস্থাপনায় আরও চার মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরপর শিক্ষানবিশ হিসেবে তাঁদের জাপানে নিয়ে যাওয়া হয়। আগামী বছর এক হাজার শ্রমিক পাঠানোর আশা করছে বিএমইটি।

বিএমইটির পরিচালক (কর্মসংস্থান) ডি এম আতিকুর রহমান জানান, জাপানি ভাষা প্রশিক্ষণের আওতা বাড়াতে গত ফেব্রুয়ারিতে বেসরকারি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। সরকার প্রণীত নীতিমালার আওতায় ইতিমধ্যেই বেশ কিছু আগ্রহী প্রতিষ্ঠান বিএমইটিতে আবেদন করেছে। এসব আবেদন তদন্ত করে যাচাই-বাছাইয়ের পর মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছে বিএমইটি। মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে। বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করলে প্রশিক্ষিত শ্রমিকের সংখ্যা আরও বাড়বে।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রৌনক জাহান প্রথম আলোকে বলেন, বেসরকারি জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুক্ত করা হচ্ছে। তবে ভালো করে যাচাই-বাছাই করায় একটু সময় লাগছে। এখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। শিগগিরই অনুমোদন দেওয়া হবে।

বিএমইটি সূত্র জানায়, জাপানের মানুষের গড় আয়ু ৮৪ বছর হলেও ১০০ বা তার অধিক বয়সী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। বয়স্ক এসব মানুষের সেবার জন্য দক্ষ জনবল দরকার। নির্মাণশিল্প, প্রযুক্তি, নার্সিং, কৃষি, হোটেল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ট্যুরিজম খাতেও কাজের সুযোগ আছে সেখানে। থাকা-খাওয়া বাদে প্রতি মাসে প্রায় ৮০ হাজার টাকা উপার্জনের সুযোগ পাবেন একজন দক্ষ শ্রমিক। বিদেশি শ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে জাপান বরাবরই রক্ষণশীল। তাই সাবধানতার সঙ্গে এগোচ্ছে সরকার। কোনো অঘটনের কারণে যেন বন্ধ না হয়ে যায় এ বাজার।