খামার গড়ে যা দেখালেন আনিচ মোর্শেদ

নিজের খামারে আনিচ মোর্শেদ। ছবি: ইকবাল হোসেন
নিজের খামারে আনিচ মোর্শেদ। ছবি: ইকবাল হোসেন

স্নাতকে ভর্তি হয়েই চাকরির চিন্তা বাদ দেন আনিচ মোর্শেদ। নিজের চেষ্টায় উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নটা তখন থেকেই দেখা শুরু করেন তিনি। ২০০৭ সালে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় ডিমপাড়া ১০০টি মুরগি নিয়ে শুরু করেন নিজের খামার। সাহস করে পা’টা বাড়িয়েছিলেন, আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এই এক যুগে আনিচ মোর্শেদের উদ্যোগ এখন সাফল্যের গল্প।

এককভাবে শুরু করা ছোট্ট খামারে এখন ১০ হাজার মুরগি রয়েছে। সঙ্গে গরুর খামারসহ যুক্ত হয়েছে ডিম-মুরগির বিক্রয়কেন্দ্র, পশুপাখির ওষুধ, মাছ-মুরগির খাদ্যের পরিবেশকসহ আরও কিছু ব্যবসা। নয়জন কর্মচারীর সঙ্গে আনিচ নিজেও অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে লাভ থাকে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৫ সালে তরুণ উদ্যোক্তা শ্রেণিতে তিনি পেয়েছেন ইয়ংবাংলা সংগঠনের ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড ২০১৫’।

আনিচ এখন এলাকার আদর্শ। তাঁর কাছে পরামর্শ নেন আরও তরুণ। মিরসরাই উপজেলার মঘাদিয়া ইউনিয়নের তিনঘরিয়াটোলা গ্রামে আনিচ মোর্শেদের পাকা বাড়িটি তাঁর নিজের টাকায় তৈরি। সেখানে গিয়েই কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি জানান তাঁর সংগ্রামী জীবনের পেছনের গল্প।

চট্টগ্রাম সিটি কলেজে স্নাতক পড়ার সময় ধারদেনা করে ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করেন আনিচ। ডিমপাড়া ১০০টি মুরগির ছোট একটি খামার দিয়ে শুরু করেন ব্যবসা। ধীরে ধীরে খামার বাড়ল। ২০০৯ সাল থেকে ডিমপাড়া মুরগির সঙ্গে যুক্ত করেন ব্রয়লার মুরগি। এরপর একে একে গড়ে তোলেন ডিম-মুরগি বিক্রয়কেন্দ্র, পশুপাখির ওষুধ, মাছ-মুরগির খাদ্যের পরিবেশক, গরুর খামারসহ আরও কিছু ব্যবসা। খামারের লাভে তিন বিঘা জমি কিনেছেন তিনি। ৫৭ লাখ টাকা ব্যয় করে ওই জমিতে তিনতলা মুরগির শেড তৈরি করা হয়েছে। মালামাল পরিবহনের জন্য কিনেছেন একটি ছোট ট্রাক। গরু ও মুরগির খামারের গোবর আর বিষ্ঠা দিয়ে তৈরি হয় বায়োগ্যাস। নিজের বাড়ি ও খামারের কর্মচারীদের চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের আরও ১৫ পরিবার রান্নার গ্যাস পায় সেখান থেকে।

নিজের চেষ্টায় এখন সফল আনিচ। ছবি: ছবি: ইকবাল হোসেন
নিজের চেষ্টায় এখন সফল আনিচ। ছবি: ছবি: ইকবাল হোসেন

আনিচ বলেন, বিভিন্ন সময় ডিম-মাংসের বাজারে অস্থিতিশীলতা, বাচ্চার মূল্যবৃদ্ধি, মড়কে মুরগি মরে যাওয়াসহ অনেক খারাপ সময় এসেছে। কিন্তু কিছুতে দমে যাননি তিনি।

সামনের স্বপ্ন কী?
জানতে চাইলে আনিচ মোর্শেদ বলেন, একটি পাকা ঘরের স্বপ্ন ছিল। খামারের আয়ে ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে সেই ঘর তৈরি করেছেন। এখন স্বপ্ন আছে নিজে একটি হ্যাচারি তৈরি করার। এর সঙ্গে যত দূর পারা যায় খামার আরও বাড়ানো। বেকার তরুণেরা চাকরির পেছনে না ছুটে খামার করে নিজেরা স্বাবলম্বী হবেন—এমন স্বপ্নও দেখেন তিনি।

আনিচ মোর্শেদের এই সাফল্যের বিষয়ে জানতে চাইলে মিরসরাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শ্যামল চন্দ্র পোদ্দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মনে করি, উদ্যম ও একাগ্রতাই আনিচ মোর্শেদের সাফল্যের মূল কারণ। আমি বেশ কয়েকবার তাঁর খামার পরিদর্শন করেছি। যেকোনো সমস্যায় আমরা তাঁর পাশে থাকি। শৃঙ্খলা ও পরিচ্ছন্নতায় তাঁর খামার অন্য খামারিদের কাছে উদাহরণ হতে পারে। তা ছাড়া তাঁর দেখানো পথে খামার করে এলাকায় অনেক তরুণ এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন।’

নিজের খামারে আনিচ মোর্শেদ। ছবি: ইকবাল হোসেন
নিজের খামারে আনিচ মোর্শেদ। ছবি: ইকবাল হোসেন

আনিচ মোর্শেদের কাছে অনুপ্রেরণা পেয়ে ব্রয়লার মুরগির খামার করেন মিরসরাইয়ের সুফিয়া বাজার এলাকার তরুণ মো. নাছির উদ্দিন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আনিচ আমার বন্ধু। তার সাফল্য দেখে ছয় মাস আগে আমিও মুরগির খামার করেছি। ইতিমধ্যেই খামার লাভজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।’