রোজার আগে বাজারে অস্বস্তি

>
  • আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে পবিত্র রমজান শুরু হবে
  • পাইকারি বাজারে এখন রোজার কেনাবেচা চলছে
  • বেড়েছে চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও ডালের দর
  • চড়া সবজি–মাছের দাম, কমেছে ডিম–মুরগির দাম

পবিত্র রমজান মাস ঘনিয়ে আসতেই বাজারে যেন দাম বাড়ার মিছিল শুরু হয়েছে। চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও ডালের দর বেড়েছে। কয়েক সপ্তাহ ধরেই ব্যাপক চড়া সবজি ও মাছের দাম। সব মিলিয়ে স্বস্তি নেই রোজার বাজারে।

রমজান মাসে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির চাহিদা কমে যায়। বাজারে এ দুটি পণ্যের দাম কমেছে। ১০৫ টাকা ডজনের ডিম এখন ৯০ টাকা ও ১৬৫ টাকা কেজির ব্রয়লার মুরগি ১৪০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস আগের মতোই ৫৫০ টাকা কেজি।

আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে পবিত্র রমজান মাস শুরু হবে। পাইকারি বাজারে এখন রোজার কেনাবেচা চলছে। চলতি মাস শেষে চাকরিজীবীরা বেতন পাওয়ার পর রোজার কেনাকাটা করবেন।

চিনির দাম বেড়েছে কেজিতে প্রায় ৪ টাকা। চলতি মাসের শুরুতেও পাইকারি বাজারে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চিনির দাম ছিল ২ হাজার ৪০০ টাকার মতো। এখন সেটা ২০০ টাকা বাড়তি। ফলে খুচরা দোকানে কেজিতে ৫০-৫২ টাকার চিনি ৫৪-৫৬ টাকায় উঠেছে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় মার্চ মাসে বিশ্ববাজারে চিনির দর টনপ্রতি ১০ ডলার কমে ২৮০ ডলারে নেমেছে। দেশে দাম কেন বাড়ল, জানতে চাইলে পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আবুল হাশেম বলেন, বাড়তি চাহিদার কারণে মিলগুলোতে চিনি সরবরাহে সময় বেশি লাগছে। ট্রাক তালিকাভুক্ত করার পর সেটা সাত দিন পরে চিনি পাচ্ছে। এতে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এটাই মূল কারণ।

দেশে এখন পেঁয়াজের ভরা মৌসুম। কিছুদিন আগেও পেঁয়াজের কেজিপ্রতি দর ২৫ টাকার মধ্যে ছিল। এতে কৃষকেরা দাম পাচ্ছিলেন না বলে অভিযোগ ছিল। এখন দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৩৫ টাকা, হাইব্রিড পেঁয়াজ ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে পেঁয়াজের দর কেজিতে ১০ টাকার মতো বাড়তি। চীনা আদা ও রসুনের দরও কেজিতে ১০ টাকার মতো বেড়েছে। চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১২০ টাকা দরে। কেজিপ্রতি চীনা আদা ১২০-১৩০ টাকা ও দেশি আদা ১৪০-১৫০ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা।

কারওয়ান বাজারের হাজী মিজান স্টোরের বিক্রেতা জাকির হোসেন বলেন, প্রতি কেজি ছোলার দাম ৩-৪ টাকা বেড়েছে। অন্যদিকে সরু দানার মসুর ডাল ও খেসারি ডালের দাম কেজিতে ৪-৫ টাকা বাড়তি। তাঁর দোকানে ছোলা ৮০ টাকা, সরু মসুর ডাল ৯০ টাকা ও খেসারির ডাল ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

সবজি ও মাছের দামই মানুষকে ভোগাচ্ছে বেশি। কাজীপাড়া, তেজগাঁও কলমিলতা ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, কাঁকরোল—এই তিন সবজি বিক্রেতারা ৮০ টাকা কেজি চাচ্ছেন। ঢ্যাঁড়স, লতি, বেগুন, পটোল, ধুন্দল, বরবটি ইত্যাদি সবজির দর কেজিপ্রতি ৫০-৬০ টাকা। কাঁচা মরিচের দর এখনো কম, কেজিপ্রতি ৬০-৮০ টাকা।

মাছের বাজারে নদী বা বিলের ভালো কোনো মাছ কিনতে গেলেই কেজিপ্রতি দর হাজার টাকার আশপাশে। বড় বেলে, আইড় ও নদীর চিংড়ির কেজিপ্রতি দর ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা হাঁকছেন বিক্রেতারা। বোয়াল, পাবদা, চাষের মাঝারি চিংড়ি, ট্যাংরা, সরপুঁটি ইত্যাদি মাছের কেজিপ্রতি দর ৫০০-৭০০ টাকা। কেজিপ্রতি বড় রুই ও কাতলার দাম ৩৫০-৪০০ টাকা। সাধারণ তেলাপিয়া ও চাষের কই মাছের দরও কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেশি। বড় তাজা তেলাপিয়া ২৫০ টাকা কেজির নিচে বিক্রিতে নারাজ বিক্রেতারা।

কারওয়ান বাজারে কেনাকাটা করতে যাওয়া আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ছোলার দাম যদি কেজিতে ৫ টাকা বাড়ে, তাহলে রোজার মাসে আমার ১০ টাকা বাড়তি খরচ হয়। কারণ দুই কেজি ছোলায় মাস চলে যায়। কিন্তু এক কেজি সবজি কিনতে এখন ৩০ টাকা বেশি লাগছে। যে চিংড়ি ৫৫০ টাকা ছিল, সেটা এখন ৭০০ টাকা চাইছে।’