কর্ণফুলী টানেল নিয়ে বিতর্কে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও পরিকল্পনামন্ত্রী

অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুল মান্নান
অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুল মান্নান

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন টানেলের আদৌ প্রয়োজন আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুল মান্নান বলেছেন, সেতুর চেয়ে টানেল বেশি পরিবেশসম্মত। মন্ত্রীর আরও যুক্তি, এসব বড় প্রকল্পের ফলে তরুণেরা উদ্দীপ্ত হন। আর সেই জন্যই এর নির্মাণ।

টানেল নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও মন্ত্রীর এই বাদানুবাদ হয় বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক অনুষ্ঠানে। আজ রোববার বিআইডিএসের ‘ক্রিটিক্যাল কনভারসেশনস ২০১৯’ শীর্ষক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয় রাজধানীর একটি হোটেলে।

অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহি সম্পর্কে বলতে গিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর তলদেশ নাকি বুড়িগঙ্গার তলদেশ দিয়ে টানেল হবে, আদৌ এই ধরনের টানেলের প্রয়োজন আছে কি না, নাকি এসব না করে অন্য বড় অবকাঠামো প্রকল্প নেওয়া হবে, তা যাচাইবাছাই করার সুযোগ আছে।’

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের প্রথম সুড়ঙ্গপথ ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’-এর খননকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকায় ৩ হাজার ৫ মিটার দীর্ঘ এ টানেল নির্মিত হচ্ছে। টানেলটি নেভাল একাডেমি পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে কাফকো ও সিইউএফএল পয়েন্টের মাঝখান দিয়ে অপর প্রান্তে যাবে। নদীর তলদেশে সর্বনিম্ন ৩৬ ফুট থেকে সর্বোচ্চ ১০৮ ফুট গভীরে স্থাপন করা হবে দুটি টিউব। ২০২২ সালের মধ্যে এ টানেলটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা।

অর্থনীতিবিদ মাহমুদ আজকের সম্মেলনে বলেন, ‘বড় প্রকল্পের অর্থনৈতিক যৌক্তিকতা, ব্যয়ের সাশ্রয় ও অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার—এসব নির্ণয় করা উচিত। আমরা এখন বড় প্রকল্পে সরবরাহকারী ঋণের প্রস্তাব পেলেই নিয়ে ফেলছি।’ বক্তব্যে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন তিনি।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহি আনা উচিত। রাজনৈতিক বিষয়ে সম্পৃক্ত না হয়ে শুধু অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে জবাবদিহি আনা সম্ভব। পৃথিবীর বহু দেশে এমন নজির আছে।

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, ‘আমরা এখন এমন একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্তে এসেছি, যেখানে এক দলের প্রাধান্যে শাসনব্যবস্থা। এই ধরনের শাসনব্যবস্থায় জবাবদিহির কাঠামো কেমন হবে, তা বলা উচিত। সর্বস্তরে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।’

আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘সেতু তৈরির চেয়ে টানেল নির্মাণ করা পরিবেশগতভাবে টেকসই। এ ছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ—এই ধরনের প্রকল্পে এ দেশের তরুণেরা উজ্জীবিত হয়। এই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে রাজনৈতিক নেতৃত্ব হিসেবে আমাদের এক ধরনের আনন্দ আছে।’ আর্থিক খাত নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে চিন্তাভাবনা চলছে বলে তিনি জানান। 
শিক্ষিত বেকার প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রীর মন্তব্য, ‘উচ্চশিক্ষিতরা তাদের মতো চাকরি চায়। ধামরাই, ময়মনসিংহ যাবে না, সবাই ঢাকায় থাকতে চায়। এই ধরনের চাকরি কীভাবে দেব? কৃষক, শ্রমিক কেউ বেকার নেই।’ শিক্ষাব্যবস্থা এখন বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা কম বলে তিনি মনে করেন। 
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলম, বিআইডিএসের মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদ প্রমুখ।