বাজেট নিয়ে সচেতন করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের: আতিউর

রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আজ ‘শান্তি ও সমতার জন্য বাজেট’ শীর্ষক দিনব্যাপী জন-বাজেট সংসদ ২০১৯ বিকল্প বাজেট অধিবেশনে এর প্রথম অধিবেশনে বক্তারা। ছবি: প্রথম আলো
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আজ ‘শান্তি ও সমতার জন্য বাজেট’ শীর্ষক দিনব্যাপী জন-বাজেট সংসদ ২০১৯ বিকল্প বাজেট অধিবেশনে এর প্রথম অধিবেশনে বক্তারা। ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব রয়েছে বাজেট সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তোলার। এর পাশাপাশি তরুণদের অনেক বেশি বাজেট সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। তাদের মধ্য থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হলে সরকারও বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে সচেতন হবে। বিষয়টিকে আন্দোলনে রূপ দিতে হবে।

‘শান্তি ও সমতার জন্য বাজেট: জন-বাজেট সংসদ ২০১৯ বিকল্প বাজেট’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন আতিউর রহমান। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আজ রোববার দিনব্যাপী এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আতিউর রহমান বাজেট ঘোষণার পর সাত দিন বাজেট অধিবেশন মুলতবি রেখে সেটি সংসদীয় কমিটির কাছে আলোচনার জন্য পাঠানোর সুপারিশ করেন। এতে করে সংসদীয় কমিটিগুলো বাজেট নিয়ে সংশ্লিষ্ট সেক্টরগুলোর মতামত নিতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।

অনুষ্ঠানের সভাপ্রধানের বক্তব্যে জাতীয় পরিকল্পনা ও বাজেট সম্পর্কিত সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক ফজলে হোসেন বাদশা বলেছেন, প্রান্তিক অঞ্চলের কথা মাথায় রেখেই বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। এর জন্য জেলা বাজেটের বিকল্প নেই। প্রবৃদ্ধি বাড়ার পাশাপাশি সামাজিক বৈষম্যও বেড়েছে। শহরের সঙ্গে গ্রামের বৈষম্য কমাতে জেলা বাজেটের বিষয়টি এবারের বাজেট আলোচনায় উত্থাপন করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, খাত ধরে ধরে বাজেট প্রণয়নের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হয়নি। ফলে বাজেটের সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো যায়নি। জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে বাজেট কাঠামোরই আমূল পরিবর্তন দরকার বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, ধনী-গরিব বৈষম্য আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে, ফলে বিষয়টি মাথায় রেখেই আগামীর বাজেটটি প্রণয়ন করতে হবে। যদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা না যায়, তাহলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা হুমকির মধ্যে পড়বে বলে অনেকে মতামত দিয়েছেন। অধিকাংশ সাংসদ ব্যবসায়ী হওয়ায় বাজেট জনবান্ধব না হয়ে অনেকে ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীবান্ধবও হয়ে উঠছে। তবে নিজ নিজ জায়গা থেকে আন্দোলন গড়ে তুললে একটি গণতান্ত্রিক বাজেট আদায় করা সম্ভব।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, সরকারের কাছে কোনো খাতই কম বা বেশি গুরুত্ব নয়। সরকার সব খাতকে সমান গুরুত্ব দিয়েই বাজেট প্রণয়ন করে। শুধু বাজেট নয়, বিদ্যমান যে শ্রম আইন আছে, সেটি যদি প্রতিষ্ঠানগুলো মেনে চলে তাহলে দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব।

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেছেন, ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক বাজেট প্রত্যাশা করা যায় না। তবে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি ও শক্তিশালী বাজেট আন্দোলন গড়ে তুললে গণমুখী বাজেট প্রণয়ন সম্ভব। তবে বাজেটের আকার বাড়লেও প্রবাসী, আদিবাসী, কৃষক, শ্রমিক, প্রতিবন্ধীসহ সব ধরনের নাগরিকের জন্য কল্যাণকর বাজেট এখনো প্রণয়ন হয় না বলে তিনি মত দেন। তিনি বলেন, আমলা দ্বারা প্রণীত ও ব্যবসায়ী দ্বারা পরিচালিত বাজেট জনগণের কথা বাজেটে ফুটিয়ে তুলতে ব্যর্থ হচ্ছে।

প্রথম অধিবেশনে আরও উপস্থিত ছিলেন মাটি ও মানুষের পরিচালক রেজাউল করিম রানা ও বিএনকেএসের নির্বাহী পরিচালক হালা সিঙ নু। বিকেলে দ্বিতীয় অধিবেশনে বাজেটে জন-অংশগ্রহণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে আলোচনা করেন ফজলে হোসেন বাদশা, শিরীন আখতার, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব দ্রং, সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মারুফ ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। জন-বাজেট ২০১৯-এর আয়োজক ছিল জাতীয় পরিকল্পনা ও বাজেট সম্পর্কিত সংসদীয় ককাস, সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অ্যাকশন এইড ও গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন। অনুষ্ঠানে ঢাকাসহ সারা দেশের ৫০টি জেলা থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মোট ৬০০ জন অংশ নেন।