এফবিসিসিআইয়ের সদস্য পদ পাবে করপোরেটরাও

মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সভাপতি, এফবিসিসিআই
মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সভাপতি, এফবিসিসিআই
>

• বাণিজ্য সংগঠন
• বিধিমালা সংশোধন
• এবারের পর্ষদে সহসভাপতি পদ বেড়ে সাতটি হচ্ছে
• সভাপতি পদে একক প্রার্থী
• অনেকেই সহসভাপতি হতে দৌড়ঝাঁপ করছেন

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সদস্য পদ পাবে দেশের করপোরেটরাও। প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনে সমিতির পাশাপাশি করপোরেটদেরও সদস্য পদ দেওয়া হয়। বাংলাদেশেও এবার সেটা চালু হচ্ছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২৫ এপ্রিলের তারিখ দিয়ে বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালার সংশোধন করেছে। এতে এফবিসিসিআইতে কিছু পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, একটি হলো করপোরেটদের সদস্য পদ দেওয়া।

এ ছাড়া প্রজ্ঞাপনে এফবিসিসিআইতে সহসভাপতি পদ সাতটি করা ও সহযোগী সদস্য পদের সুযোগও দেওয়া হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সহসভাপতিদের দায়িত্ব ফেডারেশনের পরিচালনা পর্ষদ দ্বারা নির্ধারিত হবে। আর করপোরেট ও সহযোগী সদস্য পদের শর্ত ফেডারেশনের সংঘবিধি দ্বারা নির্ধারিত হবে। পরিবর্তিত নিয়ম অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।

এফবিসিসিআইয়ের ২০১৯-২১ মেয়াদের পরিচালনা পর্ষদে সভাপতি ও সহসভাপতি পদে ভোটের ঠিক আগে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হলো। আজ সোমবার এ ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। অভিযোগ আছে, ভোটের আগে তফসিলে সহসভাপতি পদ সাতটি করার বিষয়টি ছিল না। উল্লেখ্য, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক পদে ভোটাভুটির দিন ছিল গত শনিবার। কিন্তু ৪২টি পরিচালক পদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় সবাইকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। গতবার এফবিসিসিআইতে চেম্বার অংশে ভোটাভুটি হয়নি। এবার কোনো রকমের ভোটাভুটি ছাড়াই এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হলো।

এফবিসিসিআই দেশের জেলাভিত্তিক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বা চেম্বার ও পণ্যভিত্তিক সমিতিগুলোর যৌথ ফেডারেশন। ওই সব সংগঠন ও সমিতির সদস্যরা এফবিসিসিআইয়ের ভোটার হন। তাঁরা ভোট দিয়ে পরিচালক নির্বাচন করেন। পরিচালকেরা ভোট দিয়ে সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচিত করেন। এফবিসিসিআইয়ের মোট পরিচালক পদ ৭২টি, যার ৩০টিতে বড় বড় সংগঠন থেকে সরাসরি পরিচালক মনোনীত হন। ৪২টিতে ভোট হয়।

এত দিন এফবিসিসিআইতে সহসভাপতি পদ ছিল দুটি। এবার নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, একটি জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি পদের বাইরে আরও ছয়টি সহসভাপতি পদ থাকবে। প্রজ্ঞাপনে সহসভাপতিদের কতজন চেম্বার ও কতজন অ্যাসোসিয়েশন থেকে নির্বাচিত হবেন, তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি।

এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘সহসভাপতি পদ সাতজন করার চিন্তাটি আমাদেরই। গতবার করিনি। কারণ, সবাই বলত নিজের স্বার্থে করেছি।’ তিনি বলেন, এফবিসিসিআই অনেক বড় সংগঠন। এ সংগঠনের সভাপতি ও সহসভাপতিদের প্রচুর সভা, অনুষ্ঠান ও অন্যান্য কাজে যোগ দিতে হয়। পদসংখ্যা একটু বেশি হলে কাজটা সহজ হয়। এটা কাউকে খুশি করার জন্য করা হয়নি।’

করপোরেটদের সদস্য পদ দেওয়ার বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, ফেডারেশনের কর্মীদের বিভিন্ন দেশে চেম্বারগুলো কীভাবে চলে, সে বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য পাঠানো হয়েছিল। তাঁরা দেখে এসেছেন বিভিন্ন দেশে করপোরেটরা সদস্য পদ পায়। তবে ভোটাধিকার দেওয়া হবে কি না, সেটা পরিচালনা পর্ষদ ঠিক করবে।

এফবিসিসিআই সূত্রে জানা গেছে, সহযোগী সদস্য পদ দেওয়া হবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যৌথ চেম্বারগুলোকে। ভোটাধিকার দেওয়ার বিষয়টি নির্ভর করবে এফবিসিসিআইয়ের ওপর। এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এফবিসিসিআই একটি সাধারণ সভা ডাকতে পারে।

দৌড়ে অনেকে

এবারের এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদে সভাপতি পদে এখনকার সহসভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। ফলে তাঁর সভাপতি হওয়া প্রায় নিশ্চিত। সহসভাপতি পদের জন্য বেশ কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এবার অ্যাসোসিয়েশন থেকে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও তিনজন সহসভাপতি হবেন। এ জন্য নাম শোনা যাচ্ছে বিজিএমইএর সদ্য বিদায়ী সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, এফবিসিসিআইয়ের এখনকার সহসভাপতি মুনতাকিম আশরাফ, মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ, হাবিব উল্লাহ ডন ও আবু নাসেরের। সহসভাপতি পদে চেম্বার থেকে হাসিনা নেওয়াজ, দিলীপ কুমার আগারওয়ালা ও মো. রেজাউল করিম রেজনু জোর চেষ্টা করছেন। এর বাইরেও অনেকে চেষ্টা করছেন।

আইন অনুযায়ী সভাপতি ও সহসভাপতি পদে পরিচালকদের মধ্যে ভোটাভুটি হওয়ার কথা। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে ভোটাভুটি দেখা যায়নি। সভাপতি ও সহসভাপতিরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কারা শেষ পর্যন্ত পদ পাবেন, তা নির্ভর করছে সরকারের ইঙ্গিতের ওপর।