ভ্যাটে ব্যবসায়ীদের সুবিধা বাড়ছে

নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে ব্যবসায়ীদের দিক থেকে আর বাধা চায় না সরকার। নতুন ভ্যাট আইনে ব্যবসায়ীদের আরও সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ভ্যাট হার ৫, সাড়ে ৭ এবং ১০ শতাংশ হচ্ছে। এমনকি এখন যাঁরা ৫ শতাংশের কম ভ্যাট দেন, তাঁদের ভ্যাট আর বাড়বে না। ব্যবসায়ীদের দাবিমতো সমঝোতার ভ্যাট আইন হচ্ছে। এনবিআর চেয়ারম্যান সরাসরি বলেছেন, নতুন আইন বাস্তবায়ন নিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতিবন্ধকতা আশা করেন না তিনি।

তবে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোন পণ্যে কত ভ্যাট হবে, তা যেন দ্রুত নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া প্রভাব মূল্যায়ন না করে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন কতটা বাস্তবসম্মত হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এফবিসিসিআই।

 আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) যৌথ আয়োজনে পরামর্শক সভায় এসব কথা বলা হয়। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই পরামর্শক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। সঞ্চালনা করেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি আগামী বাজেট কেমন হবে, সেই বিষয়ে ব্যবসায়ীদের ধারণা দেন।

দুই বছর আগে অর্থাৎ ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করার কথা ছিল। কিন্তু তখন ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে আইনটির বাস্তবায়ন দুই বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাই এবার আর বাধা চায় না সরকার।

কিছুদিন আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন, নতুন আইনে ভ্যাট হার হবে ৫, সাড়ে ৭ ও ১০ শতাংশ। গতকাল তিনি বলেছেন, যাঁরা এখন ৫ শতাংশের কম ভ্যাট দিচ্ছেন, তাঁদের ভ্যাটও আর বাড়ানো হবে না।

একই অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘নতুন আইনে কোন পণ্যে কত ভ্যাট হবে, তা এখনো জানি না। একাধিক হারে ভ্যাট হলে কীভাবে রেয়াত হবে, তা পরিষ্কার নয়। আমরা একাধিকবার নতুন আইনের প্রভাব মূল্যায়নের কথা বলেছি। কিন্তু তা করা হয়নি।’ এগুলো অমীমাংসিত রেখে নতুন আইন কতটা বাস্তবসম্মত হবে, তা পুনরায় ভেবে দেখার আহ্বান জানান তিনি।

এর জবাব এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘পণ্যভিত্তিক আলাদা ভ্যাটের হার এখনই প্রকাশ করা হলে ১৩ জুন বাজেট দেওয়ার মানে নেই। তাই এখনই প্রকাশ করতে চাই না। তবে বিষয়টি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত করা হবে।

করহার বাড়বে না

আগামী বাজেটে করহার বাড়বে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, করহার বৃদ্ধি করা হবে না। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে কর বাড়বে না। বড় দুর্যোগ না হলে আগামী ৫ বছরে করহার বরং কমানো হবে। তবে করের জাল বড় হবে। এ ছাড়া বছরের মাঝে প্রজ্ঞাপন দিয়ে করহার পরিবর্তনও হবে না।

তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনাদের নির্ভার করতে পারি, যেসব দাবি করেছেন, সেগুলো নিয়ে বেইনসাফ করব না। কোথাও এক টাকাও কর বাড়বে না। কিছু হলেও করের হার কমানোর চেষ্টা করা হবে।’

ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে মূল প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেন এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা আরও ১ লাখ টাকা বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা, করপোরেট করহার আড়াই শতাংশ কমানো, কাল্পনিক মুনাফার হার নির্ধারণ বন্ধ করা, করহার নির্ধারণের দায়িত্ব ট্যারিফ কমিশনকে দেওয়া, ছোট ব্যবসায়ীদের লেনদেন কর ৩ শতাংশ করা, কম মূল্য দেখিয়ে আমদানি বা আন্ডার ইনভয়েসিং রোধে কমিটি গঠন ইত্যাদি।

শেষে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, পোশাক খাত যেসব সুবিধা পেয়ে বড় হয়েছে, একই ধরনের সুবিধা অন্য খাতেও দিতে চায় সরকার। তবে কোনো কারখানা সেটির অপব্যবহার করলে তা ধরিয়ে দেওয়া ব্যবসায়ীদের দায়িত্ব। সালমান এফ রহমান আরও বলেন, সরকার ও সরকারি কর্মচারীদের মনোভাব পরিবর্তন হচ্ছে। এখন ব্যবসায়ীদের মনোভাবে পরিবর্তন জরুরি।

হয়রানি বন্ধ করা

অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে কর কর্মকর্তাদের হয়রানি বন্ধ করার দাবি জানানো হয়। জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অন্যায় করলে কেউ পার পাবে না। কেউ অন্যায় করলে আমার কাছে নালিশ করবেন, সাত দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেব।’