এক সপ্তাহে লেনদেন বেড়েছে ১২%

টানা প্রায় তিন মাসের দরপতনের পর গত সপ্তাহে শেয়ারবাজারে সূচক ও লেনদেনের উত্থান ঘটেছে। গত সপ্তাহ শেষে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের সপ্তাহের চেয়ে ২১ পয়েন্ট বেড়েছে। আর আগের সপ্তাহের চেয়ে লেনদেন বেড়েছে ১৬৭ কোটি টাকা বা প্রায় সোয়া ১২ শতাংশ।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টানা পতন ঠেকাতে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তারই আলোকে নতুন করে আর কোনো কোম্পানির মূলধন বৃদ্ধির আবেদন গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। এ মূলধন বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে শেয়ারবাজারের বাইরে প্লেসমেন্ট বাণিজ্যের অনানুষ্ঠানিক একটি বাজার গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধনের আগে আর কোনো কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও আবেদন গ্রহণ না করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে বিএসইসি। এর বাইরে আরও কিছু সিদ্ধান্তের কথা বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হলেও সেগুলোর বিষয়ে এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শেয়ারবাজারের পতন ঠেকাতে সরকার ও বিএসইসির পক্ষ থেকে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজারে। এখন বাজারকে স্থিতিশীল করতে হলে বাজারের স্বার্থে নেওয়া সব সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

ডিএসইর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহজুড়ে ঢাকার বাজারে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৬১ শতাংশেরই দাম বেড়েছে, কমেছে ৩১ শতাংশের দাম। আর অপরিবর্তিত ছিল ৭ শতাংশের দাম। গত সপ্তাহের শেষ দুই দিনে বাজারে সূচকের বড় উত্থান ঘটে। তাতেই সপ্তাহ শেষে বাজার আগের সপ্তাহের চেয়ে ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসে।

জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান বলেন, শেয়ারবাজারের একটানা দরপতন থামাতে সম্প্রতি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের পরামর্শক্রমে বিএসইসির পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজারে। প্লেসমেন্ট বন্ধের সিদ্ধান্তের ফলে বাজার থেকে অর্থ অন্যত্র আর স্থানান্তর হবে না। এর ফলে বাজারে লেনদেন বাড়বে। সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়িত হলে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশাবাদী ডিএসইর এই পরিচালক।

ঢাকার বাজারে গত সপ্তাহে মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে ছিল নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিস। কোম্পানিটির শেয়ারের দাম প্রায় ৯ টাকা বা ২৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪৮ টাকা। মূল্যবৃদ্ধিতে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানি জিবিবি পাওয়ার। মাত্র চার কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম প্রায় ১৭ শতাংশ বেড়েছে।

এদিকে ২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য গঠিত ৯০০ কোটি টাকার তহবিলটিকে ঘূর্ণমান তহবিলে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি এটির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া তহবিলটির সুবিধাভোগী বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বাজারের ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও যাতে এ তহবিল থেকে সুবিধা নিতে পারে তার জন্য সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তহবিল ব্যবস্থাপনা কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তহবিলটি থেকে যদি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কম সুদে ঋণসুবিধা পান, তাহলে তা বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সরকারও আর্থিকভাবে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।