পাইকারিতে ছোলা ডাল তেলে স্বস্তি

পাইকারি বাজারে রোজার পণ্যের দাম এবার বেশ সহনীয়। তবে মোড়কজাত বা প্রক্রিয়াজাত হয়ে খুচরায় বিক্রি হওয়া কিছু পণ্যের দাম একটু বাড়তি। তা সত্ত্বেও এবার আমদানিনির্ভর ছোলা, মসুর ডাল, মটর ডাল, চিনি, ভোজ্যতেল ও খেজুরের দাম গতবারের চেয়ে কম। ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার রোজার বাজারে পণ্যের দামে স্বস্তি দিচ্ছে মূলত বিশ্ববাজারের দাম। বিশ্ববাজারে ছোলা, ডাল, তেল, চিনি ও খেজুরের দামে বেশ কিছুদিন ধরেই স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। এসব পণ্যের মধ্যে কিছু কিছু পণ্যের দাম বিশ্ববাজারে কমেছে। পাশাপাশি বন্দর ব্যবস্থাপনাও এবার পণ্যের দাম কম রাখতে পরোক্ষভাবে সহায়তা করেছে। কারণ, রোজার পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে জাহাজজট বা পণ্য খালাসের জটের কারণে আমদানিকারকদের বাড়তি খরচ করতে হয়নি বন্দরে।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববাজারের পড়তি দর এবং চাহিদার তুলনায় আমদানি বেশি থাকায় এবার আমদানিনির্ভর রোজার পণ্যের দামে অস্থিরতা নেই। গত বছরের চেয়ে বেশির ভাগ পণ্যের দাম এখন কম।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববাজারে পড়তি দরের পাশাপাশি এবার বন্দর ব্যবস্থাপনাও ভালো ছিল। তাই আমদানি করা পণ্যের দাম সহনীয় রয়েছে। ডলারের বিনিময়মূল্য যদি গত বছরের মতো থাকত, তাহলে পণ্যের দাম আরও কমত।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববাজারে দাম যেভাবে কমেছে, তাতে দেশের বাজারে রোজার পণ্যের দাম আরও কম হওয়া উচিত।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত বছরের তুলনায় বাজারে খোলা চিনির দাম কমেছে প্রায় আড়াই শতাংশ। এর প্রধান কারণ বিশ্ববাজারে চিনির দাম কম। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, বিশ্ববাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ২৮ সেন্ট বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৩ টাকা দরে। আর দেশের খুচরা বাজারে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫০ টাকায়। টিসিবির হিসাবে, গত বছরের চেয়ে এবার সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ৩ থেকে ৬ শতাংশ কম। সয়াবিন ও পামতেলের চাহিদার পুরোটাই আমদানি হয়। দেশের ৯টি শিল্পগোষ্ঠী অশোধিত ও শোধিত আকারে ভোজ্যতেল আমদানি করে বাজারজাত করছে।

প্রতিবছর রোজার সময় ছোলার দাম বাড়তে থাকে বিশ্ববাজারে। তবে এবার কমেছে। এর কারণ, ডালজাতীয় পণ্য আমদানিতে ভারতের তিন মাসের (জানুয়ারি-মার্চ) নিষেধাজ্ঞা। বিশ্বে ডালজাতীয় পণ্যের শীর্ষপর্যায়ে ভোক্তার দেশ ভারত।

বিশ্ববাজারে দাম কম থাকায় দেশের পাইকারি বাজারে এবার ছোলার দাম তুলনামূলক কম। খাতুনগঞ্জে কেজিপ্রতি ছোলা মানভেদে ৬০ থেকে ৬৭ টাকায় বিক্রি হয়েছে। চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে মানভেদে এসব ছোলা কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রমজান মাসে খেজুরের চাহিদা বেড়ে হয় ১৮ হাজার টন। সেখানে গত জানুয়ারি-এপ্রিল মাসে আমদানি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩২ হাজার টন। মানভেদে প্রতি কেজি খেজুর খাতুনগঞ্জে ২০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হয় সোমবার। খেজুর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের আছদগঞ্জের ফারুক ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, খেজুরের দাম গত বছরের মতোই।