পোশাক ও কৃষিপণ্যই কেবল সুখবর দিচ্ছে

চামড়া ও চামড়াজাত, পাট ও পাটজাত, হোম টেক্সটাইল ও প্রকৌশল পণ্যের মতো বড় খাতের রপ্তানি আয় কমে গেছে। ব্যতিক্রম কেবল তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য ও হিমায়িত খাদ্য। খাত তিনটির কল্যাণে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) রপ্তানি আয়ে ১১ দশমিক ৬১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তাতে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৯৩ কোটি মার্কিন ডলারে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) হালনাগাদ পরিসংখ্যানে গতকাল বৃহস্পতিবার পণ্য রপ্তানি আয়ের এমন চিত্রই উঠে এসেছে। বড় খাতের রপ্তানি কমে যাওয়ায় প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ১০ মাস শেষে সেই প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশের মতো কমে ১১ দশমিক ৬১ শতাংশ হয়েছে।

চলতি অর্থবছরে ৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। সেটি অর্জনের জন্য শেষ ২ মাসে মোট ৫০৭ কোটি ডলার রপ্তানি আয় দরকার। চলতি অর্থবছরের কোনো মাসেই ৩০০ কোটি ডলারের কম রপ্তানি হয়নি। ফলে অপ্রত্যাশিত কিছু না ঘটলে রপ্তানি আয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, ১০ মাসের মোট পণ্য রপ্তানির ৮৩ দশমিক ৯৬ শতাংশই তৈরি পোশাক খাতের দখলে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ২ হাজার ৮৪৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ২ হাজার ৫০৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল।

জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর জে্যষ্ঠ সহসভাপতি ফয়সাল সামাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোশাক রপ্তানিতে সাড়ে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক। তবে সেটি টেকসই হবে কি না, তা নিয়েই আমরা চিন্তিত। কারণ, কারখানাগুলোর ক্রয়াদেশের অবস্থা খুব একটা ভালো না। তা ছাড়া শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব কারখানাগুলোতে পড়তে শুরু করেছে।’ তিনি বলেন, ‘বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অনেকে ক্রেতা প্রতিষ্ঠান চীনের ক্রয়াদেশে বাংলাদেশে সরিয়ে আনার চিন্তাভাবনা করছে। ফলে সুযোগটি ধরতে হলে দেড় থেকে ২ শতাংশ প্রণোদনা দরকার। ইতিমধ্যে অর্থমন্ত্রীকে প্রস্তাবটি দিয়েছি। আগামী বাজেটে সুবিধাটি দিলে যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় বাজারে পোশাক রপ্তানি বাড়বে।’

তৈরি পোশাকের মতো প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ভালো করছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৭৯ কোটি ডলারের প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৫ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া আলোচ্য সময়ে ৪৪ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি হয়। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি। হিমায়িত খাদ্যের মধ্যে ৩১ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের চিংড়ি রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৩৮ শতাংশ কম।

পোশাক, প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য ও হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিতে ভালো করলেও দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়ছে না। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৮৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের চামড়া ও চামড়াপণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ কম। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৬৯ কোটি ডলারের পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২১ দশমিক ৮৩ শতাংশ কম। হোম টেক্সটাইল রপ্তানি ৩ দশমিক ৭৪ কমেছে, রপ্তানি হয়েছে ৭২ কোটি ডলারের পণ্য।