ভারতের সরকারি তথ্য নিয়ে সন্দেহ

ভারতের অর্থনীতিবিদ ও বিনিয়োগকারীরা দেশটির দাপ্তরিক তথ্য-উপাত্তের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছেন। তাই দেশটির চলমান লোকসভা নির্বাচনে যে দলই জিতুক না কেন, আগামী দিনে তাদের এ নিয়ে বড় সমস্যায় পড়তে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। রয়টার্স সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

তবে সরকারি তথ্য-উপাত্ত নিয়ে এই সন্দেহ নতুন কিছু নয়। বহু বছর ধরেই ভারতের অর্থনীতিবিদ ও বিনিয়োগকারীরা সন্দেহ প্রকাশ করছেন সরকারি তথ্য-উপাত্তে পূর্ণাঙ্গ চিত্র উঠে আসছে কি না, তা নিয়ে। সম্প্রতি তথ্য সংশোধন ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশে বিলম্ব হওয়ায় সন্দেহ নতুন উচ্চতায় উঠেছে। সরকারও স্বীকার করেছে, তথ্য সংগ্রহ-প্রক্রিয়ায় ঘাটতি আছে।

ভারতের পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয়ের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারতে জিডিপি ও মোট দেশজ প্রবৃদ্ধির হিসাবে যেসব কোম্পানির তথ্য যোগ করা হয়, তার ৩৬ শতাংশের হদিস নেই। অথবা তাদের ভুলভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। আবার গত ডিসেম্বর মাসে সরকার কর্মসংস্থানের তথ্য প্রকাশ না করে স্থগিত রাখে। কিন্তু ভারতীয় গণমাধ্যমের কাছে কিছু নথি ফাঁস হয়ে যায়। এতে দেখা যায়, দেশটিতে বেকারত্বের হার ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

বিনিয়োগকারীরা এখন সরকারি তথ্যে আস্থা না রেখে বিকল্প উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করছেন। অর্থনীতির পরিমাপের জন্য তাঁরা নিজেরাই মানদণ্ড নির্ধারণ করে নিয়েছেন। অনেক অর্থনীতিবিদ বলেছেন, ভারত সরকার ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার যখন ৬ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত করে, তখন অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন।

ভ্রান্ত তথ্যের কারণে ভারতের বিদ্যুৎ খাতের বিনিয়োগকারীরা বিপাকে পড়েছেন। ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে তাঁরা বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে ভেবে বিনিয়োগ করে এখন দেউলিয়া হয়ে গেছেন।

বাংলাদেশের জন্য সতর্কবাণী

বাংলাদেশের সরকারি তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও অনেক সময় প্রশ্ন উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার সানেমের ত্রৈমাসিক অর্থনৈতিক পর্যালোচনায় বলা হয়, সরকারি তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা না থাকলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।

সরকারি তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতার বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘১৯৭০-এর দশকে কেউ তথ্য নিয়ে মাথা ঘামাত না। কিন্তু এখন আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। আরও এগোতে গেলে তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের জন্য তথ্যের ওপরই নির্ভর করবেন। তাই তথ্যের যেমন বিশ্বাসযোগ্যতা দরকার, তেমনি কার্যকারিতাও দরকার।’ ভারতের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য সতর্কবাণী হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।