আসবাব তৈরিতে রোবট ব্যবহার করছে হাতিল

আসবাবে রং দেওয়া বা বার্নিশ করা কাঠমিস্ত্রির কাজ। এত দিন মানুষ তা-ই জেনে এসেছে। কিন্তু আসবাব কোম্পানি হাতিলের কারখানায় গেলে মানুষের সেই প্রথাগত ধারণা ধাক্কা খাবে। কারণ, সেখানে মানুষ নয়, আসবাবে বার্নিশ করছে রোবটের মতো একটি যন্ত্র। মানুষ শুধু তা দেখভাল করছে। শুধু তা-ই নয়, কাঠ প্রক্রিয়াজাত করা থেকে কাপড়ও কাটছে যন্ত্র। এতে সময় অনেক কম লাগছে। উৎপাদনপ্রক্রিয়াও সহজ হয়েছে।

গতকাল ঢাকার অদূরে সাভারের জিরানিতে হাতিলের কারখানা ঘুরে এ দৃশ্য দেখা যায়। হাতিলের অটোমেটেড কারখানা সাংবাদিকদের সরেজমিনে দেখানোর জন্য গতকাল এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কোম্পানিটি। সরেজমিনে দেখা যায়, ইউভি কিউরিং নামের এক দীর্ঘ যন্ত্রে কাঠ ঢুকিয়ে দেওয়া হলে অপর প্রান্ত দিয়ে তা ৯ মিনিট পর প্রক্রিয়াজাত হয়ে বেরোচ্ছে। সেই যন্ত্রের ভেতরেই কাঠ যেমন পলিশ হয়ে যাচ্ছে, তেমনি রংও হচ্ছে। বেরোনোর পর দেখা গেল, খড়খড়ে কাঠ মসৃণ হয়ে গেছে। আরেক জায়গায় দেখা গেল, কম্পিউটারের মাধ্যমে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী কাপড়ও কাটা হচ্ছে যন্ত্রে। মানুষকে হাত লাগাতে হচ্ছে না। কোম্পানির কর্মকর্তারা জানান, এতে কাপড়ের অপচয় হয় না বললেই চলে।

হাতিলের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়, আড়াই বছর ধরে কারখানাটিকে বিশ্বমানে উন্নীত করার চেষ্টা করা হয়েছে। জার্মানি, ইতালি, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে কারখানাটির উৎপাদন কার্যক্রমে। হাতিল কর্তৃপক্ষের দাবি, এটি দক্ষিণ এশিয়ায় কাঠের আসবাব তৈরির সবচেয়ে আধুনিক কারখানা।

হাতিলের চেয়ারম্যান সেলিম এইচ রহমান বলেন, হাতিলের জন্ম ৩০ বছর আগে। দেশের আসবাবশিল্পকে কুটিরশিল্প থেকে বৃহৎ শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে হাতিলের বড় ভূমিকা আছে। হাতিল বাংলাদেশের হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি, যারা নিজ নামেই পণ্য বিক্রি ও রপ্তানি করছে।

কোম্পানিটির ব্যবসায়িক উপদেষ্টা দেওয়ান আতিফ রশিদের মতে, হাতিল একটি ‘কোয়ালিটি ড্রিভেন’ কোম্পানি। সব সময়ই প্রতিষ্ঠানটি প্রযুক্তিগত উন্নয়নসহ সব ধরনের আধুনিক সুবিধা যুক্ত করার চেষ্টা করে। এ সময় হাতিলের পরিচালক শফিকুর রহমান ও বিপণন মহাব্যবস্থাপক ফিরোজ আল মামুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সাভারের জিরানিতে ২০ একর জায়গা ওপর গড়ে তোলা হয়েছে হাতিলের বেশ কয়েকটি কারখানা। সবকটি কারখানায় মিলিয়ে শ্রমিক আছে ২ হাজার ৩০০ জন। অটোমেটেড বা স্বয়ংক্রিয় কারখানা হওয়ার কারণে শ্রমিকের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অন্যান্য কারখানার চেয়ে কম বলে জানান কোম্পানির কর্মকর্তারা। যন্ত্রের ব্যবহারে কর্মসংস্থান কমছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলেন, যন্ত্রের ব্যবহারের কারণে শ্রমিকের সংখ্যা কমলেও কোনো শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়নি। যে শ্রমিক আগে বার্নিশের কাজ করতেন, তাঁকে প্রশিক্ষণ দিয়ে অন্য কাজে লাগানো হয়েছে।

কর্মকর্তারা আরও বলেন, যুগের প্রয়োজনে কারখানায় যন্ত্রের ব্যবহার বাড়বে। সেই পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেদের খাপখাইয়ে নিতে হলে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। তাই আমরা আমাদের শ্রমিকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলছি। যন্ত্রের ব্যবহার বাড়লে শ্রমিকের চাহিদা সামগ্রিকভাবে কমবে ঠিকই, তবে যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দক্ষ শ্রমিক লাগবে।

হাতিলের কর্মকর্তারা জানান, দেশের আসবাব রপ্তানির ৭০ শতাংশই করছে এ প্রতিষ্ঠানটি।