এক লাফে ৫১ ধাপ উন্নতি!

বিশ্বব্যাংকের সহজে ব্যবসা সূচক বা ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে এ বছর বড় ধরনের উন্নতির আশা করছে সরকার। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) জানিয়েছে, এ বছর বেশ কিছু সংস্কার করা হয়েছে। আগামী অক্টোবর মাসে বিশ্বব্যাংক যখন সহজে ব্যবসা সূচক প্রকাশ করবে, তখন বাংলাদেশের অবস্থান অনেকটাই এগিয়ে যাবে।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান গত শনিবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, যেসব সংস্কার হয়েছে তাতে বাংলাদেশ এবার ১২৫তম অবস্থান পাবে।

বিশ্বব্যাংকের পরবর্তী সূচকে উন্নতির জন্য সংস্কারের শেষ সময় ছিল গত ৩০ এপ্রিল। এখন বিশ্বব্যাংক সেবাগ্রহীতাদের ওপর জরিপ করে বাংলাদেশের অবস্থান ঠিক করবে। তাই কাগজে-কলমে নয়, সংস্কারের সুফল সেবাগ্রহীতারা পেলেই বাংলাদেশের উন্নতি হবে।

বিশ্বব্যাংক ২০০৮ সালে যে ডুয়িং বিজনেস প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তাতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১৫তম। এরপর থেকে বাংলাদেশের অবস্থান শুধু পেছাচ্ছে। সর্বশেষ গত ৩১ অক্টোবর প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান দাঁড়ায় ১৮৯টি দেশের মধ্যে ১৭৬তম।

মোটা দাগে ১০টি ভিত্তির ওপর বিশ্বব্যাংক ডুয়িং বিজনেসের র‍্যাঙ্কিং করে। এগুলো হলো ব্যবসা শুরুর অনুমোদন, ভবন নির্মাণের অনুমতি, বিদ্যুৎ–সংযোগ, সম্পত্তি নিবন্ধন, ঋণ প্রাপ্তি, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা, কর প্রদান, বৈদেশিক বাণিজ্য, চুক্তির বাস্তবায়ন ও দেউলিয়া ঘোষণার প্রক্রিয়া।

বাংলাদেশ সরকার ডুয়িং বিজনেসে উন্নতির জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেয় ২০১৬ সালে। ওই বছরের ১৯ নভেম্বর সোনারগাঁও হোটেলে সচিবদের নিয়ে এক সভায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম এ সূচকে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে দুই অঙ্ক, অর্থাৎ কমপক্ষে ৯৯তম অবস্থানে নিয়ে আসার লক্ষ্যের কথা জানান। সে অনুযায়ী কাজ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত তেমন উন্নতি হয়নি। যদিও বিডাও আশা করছে, এ বছর বাংলাদেশ ১৩০তম অবস্থানে যেতে পারবে।

যেসব সংস্কার

বিডা জানিয়েছে, সহজে ব্যবসা সূচকে উন্নতির জন্য ব্যবসা শুরু করতে অনুমোদনের প্রক্রিয়াগত কাজ করার সময় সাড়ে ১৯ দিন থেকে কমিয়ে ১১ দিনে আনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্যয়ও কমানো হয়েছে। কোম্পানির নাম অনুমোদন, সনদ দেওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে ফি বা মাশুল কমানো হয়েছে। ফলে ব্যবসা শুরুর অনুমোদনগত প্রক্রিয়ায় ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দেশের মাথাপিছু আয়ের ৮ দশমিক ৬ শতাংশ, যা আগে ২১ শতাংশ ছিল। একইভাবে ব্যবসা শুরুর প্রক্রিয়া ৯টি থেকে কমিয়ে ৭টি করা হয়েছে।

বিডা আরও জানায়, কারখানা করার জন্য নির্মাণকাজের অনুমতি পেতে ২৮১ দিন সময় লাগত। এখন সেটা কমিয়ে ৭৬ দিনে আনা হয়েছে। অনুমোদনের প্রক্রিয়া ১৬টি ধাপ থেকে কমিয়ে ৬টিতে আনা হয়েছে। ফলে এ ক্ষেত্রে ব্যয় একটি পণ্যাগার বা ওয়্যারহাউসের নির্মাণের মোট ব্যয়ের ১ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কমে শূন্য দশমিক ২ শতাংশে নেমেছে।

বিদ্যুৎ–সংযোগ প্রাপ্তির ভোগান্তিও কমানো হয়েছে। বিদ্যুৎ–সংযোগ পেতে ১৪৮ দিন লাগত। এখন সেটা কমে ১০৭ দিন লাগছে। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা এড়াতে প্রক্রিয়া ৯টি থেকে কমিয়ে ৭টি করা হয়েছে।

ভূমি নিবন্ধনেও সময় এখন কম লাগছে। জমির নামজারি বা মিউটেশনের সময় কমে ৫৬ দিনে নেমেছে। আগে যা ১০৬ দিন ছিল। জমির সীমানা, নকশা ও অন্যান্য তথ্য নিয়ে ইলেকট্রনিক তথ্যভান্ডার করা হয়েছে।

বৈদেশিক বাণিজ্য

বিডার দাবি, রপ্তানিতে বন্দরে নথিগত কাজ শেষ করতে সময় ১৬৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৩৬ ঘণ্টা, আমদানিতে ২১৬ ঘণ্টা থেকে ৭২ ঘণ্টায় নামিয়ে আনা হয়েছে। একই ভাবে বন্দরের রপ্তানির প্রক্রিয়াগত ব্যয় ৪০৮ মার্কিন ডলার থেকে কমিয়ে ২০০ ডলারে এবং আমদানিতে ব্যয় ৯০০ ডলার থেকে ২০০ ডলারে আনা হয়েছে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ‘আমরা যদি বেশ ভালোভাবে আগাই, এটা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ইতিবাচক সংকেত দেবে। দেশীয় বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে। সংস্কারের ক্ষেত্রে সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলনও দেখা যাবে।’