পুরান ঢাকা থেকে শিল্প সরাতে নতুন উদ্যোগ

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি
>নবাবগঞ্জ ও সিরাজদিখানে মোট ১,০০০ একর জমিতে দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন পেয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ।

ঢাকার কাছে দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন পেয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এ দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ঢাকার ভেতরে থাকা প্লাস্টিক, হালকা প্রকৌশল, রাসায়নিকসহ অন্যান্য শিল্প সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের একটি হবে ঢাকার নবাবগঞ্জ ও অপরটি হবে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে। ৫০০ একর করে দুই অর্থনৈতিক অঞ্চলের আকার হবে ১ হাজার একর। ঢাকার কাছে সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে যাওয়া এ দুই অর্থনৈতিক অঞ্চলে অন্যান্য দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্যও জমি থাকবে।

এ বিষয়ে গত ৫ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে বেজা। জানতে চাইলে সংস্থাটির নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য প্রস্তাবিত জমি কাছাকাছি। একটি থেকে অন্যটির দূরত্ব দুই কিলোমিটারের মতো। অর্থনৈতিক অঞ্চল দুটি হলে ঢাকার শিল্প যেমন সরানো যাবে, তেমনি ঢাকার কাছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও জমির চাহিদা মেটানো যাবে। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, আগামী দুই বছরের মধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল দুটি বিনিয়োগের উপযোগী করতে পারব।’

বেজার তথ্য অনুযায়ী, নবাবগঞ্জে অর্থনৈতিক অঞ্চলটি হবে কৈলাইন ইউনিয়নের দৌলতপুর মৌজায়। স্থানটি ঢাকার জিরোপয়েন্ট থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-বান্দুরা সড়কের ১০০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত। জমিটি নিচু। সেখানে কোনো ঘরবাড়ি নেই। ওই জমি বন্যামুক্ত করতে প্রায় ১২ ফুট গভীরতায় মাটি ভরাটের প্রয়োজন হতে পারে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

সিরাজদিখান অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাবিত জমিও ঢাকার জিরোপয়েন্ট থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-বান্দুরা সড়কের পাশে অবস্থিত। এটি চিত্রকুটি ইউনিয়নের খারশুল ও মরিচা মৌজায়। সেখানেও কোনো ঘরবাড়ি নেই। জায়গাটি বন্যামুক্ত রাখতে প্রায় ১৪ ফুট গভীরতায় মাটি ভরাটের প্রয়োজন হতে পারে।

ব্যবসায়ীদের দাবি, পুরান ঢাকায় এখন রাসায়নিক ব্যবসা করেন ১ হাজার ২০০ ব্যবসায়ী। সেখানে প্লাস্টিকের কারখানা ও গুদাম রয়েছে প্রায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০টি। এ ছাড়া ধোলাইখাল, নারিন্দা ও টিপু সুলতান রোড ঘিরে অনেক হালকা প্রকৌশল শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। পুরান ঢাকার চকবাজারে গত ফেব্রুয়ারি মাসে লাগা আগুনে অন্তত ৭০ জনের মৃত্যুর পর কারখানা সরিয়ে নেওয়ার দাবি জোরালো হয়।

পুরান ঢাকার শিল্প সরিয়ে নিতে কয়েকটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। যদিও ওই সব প্রকল্প তেমন একটা এগোয়নি, বরং সময়ক্ষেপণ হয়েছে। যেমন, ২০১০ সালে নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জনের মৃত্যুর পর পুরান ঢাকার রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিসিকের মাধ্যমে রাসায়নিক শিল্পপল্লি প্রকল্প নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। প্রকল্প তৈরি ও অনুমোদনেই সময় লাগে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত। এখন সেই পরিকল্পনা বাতিল করে নতুন করে ৩০০ একর জমিতে রাসায়নিক পল্লি করার চিন্তা করছে বিসিক। প্লাস্টিক শিল্পনগর প্রকল্পটির মেয়াদ ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন। হাতে আর দেড় মাস সময় থাকলেও জমি অধিগ্রহণ এখনো শেষ হয়নি।

২০১৬ সালে নেওয়া বিসিক মুদ্রণ শিল্পনগর প্রকল্প ২০১৮ সালে শেষ হওয়ার কথা। জানুয়ারি মাসের সর্বশেষ হিসাবে, প্রকল্পের অগ্রগতি ২৪ শতাংশ। বৈদ্যুতিক পণ্য ও হালকা প্রকৌশল শিল্পনগর প্রকল্প ২০১৬ সালে নেওয়া। শেষ হওয়ার কথা আগামী মাসে (জুন)। এটির অগ্রগতি ২৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরাই চেয়েছিলাম বেজা এমন একটা উদ্যোগ নিক। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের কাছেও গিয়েছিলাম।’

বেজার উদ্যোগে অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে বিসিকের নেওয়া প্রকল্পগুলোর কী হবে, জানতে চাইলে জসিম উদ্দিন বলেন, বিসিকের প্রকল্প চলমান। সেগুলো আর শেষ হয় না। বিপিজিএমইএ সভাপতি চান, বেজা যেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের স্বল্পমূল্যে জমি দেয়। নইলে ছোটদের পক্ষে কারখানা সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না।

এদিকে বিসিক বলছে, তাদের এখনকার প্রকল্পগুলো থাকবে। পাশাপাশি বেজা যে জমি অধিগ্রহণ করবে, সেটা তারা ইজারা নিয়ে ছোট কারখানাগুলোকে দেবে। বিসিকের চেয়ারম্যান মো. মোশতাক হাসান বলেন, শিল্পনগর প্রতিষ্ঠার সক্ষমতা দেশে একমাত্র বিসিকের আছে। বেজার সেই সক্ষমতা নেই। তারা শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক একটি কার্যালয় নিয়ে কাজ করে। তিনি আরও বলেন, ‘বিসিকে আগে কাজ হয়নি, কারণ চিন্তা ছিল লুটপাটের। সেটা দূর করেছি। এখন আমরা বড় চিন্তা করছি। ক্ষুদ্র শিল্পের পাশাপাশি বড় বড় শিল্পনগর করে বড়দেরও জমি দেওয়া হবে।’