বিনিয়োগসক্ষমতা বাড়ল ব্যাংকের

শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা অনেক বাড়ানো হয়েছে। নীতিমালা শিথিল করে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বাড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল বৃহস্পতিবার এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারসহ বিভিন্ন অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে নীতিমালা শিথিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এখন থেকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন সিকিউরিটিজে ব্যাংকের বিনিয়োগকে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের মোট বিনিয়োগ হিসাবায়নে ধরা হবে না। কোনো ব্যাংক তালিকাভুক্ত নয় এমন কোনো কোম্পানিতে মূলধন বিনিয়োগ করলে এখন থেকে তা আর ওই ব্যাংকের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হিসাবে ধরা হবে না। এ ছাড়া অরূপান্তরযোগ্য ক্রমবর্ধমান প্রেফারেন্স শেয়ার, অরূপান্তরযোগ্য বন্ড, ডিবেঞ্চার ও বেমেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডে ব্যাংকের বিনিয়োগকে এখন থেকে ব্যাংকের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হিসাবের বাইরে রাখা হবে। নতুন এ নির্দেশনা গতকালই দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে ৯ মে বাংলাদেশ ব্যাংকে ত্রিপক্ষীয় এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম। ওই বৈঠকেই শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কথা তুলে ধরে বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হয়, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানে ব্যাংকের মূলধন বিনিয়োগকে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা বা এক্সপোজার লিমিটের বাইরে রাখা হলে তাতে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়বে। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারির কথা জানানো হয়।

শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ হিসাব থেকে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানি, বিভিন্ন ধরনের বন্ড ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকে বাদ দেওয়ার দাবি জানানো হয়। এত দিন এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কিন্তু শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক সময়ের টানা দরপতনের পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ হিসাবে শিথিলতা আনার বিষয়ে একমত পোষণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যাংকের বড় ধরনের মূলধন বিনিয়োগ আছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান, পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট সিডিবিএলসহ বিভিন্ন সরকারি তহবিলে ব্যাংকগুলোর মূলধন বিনিয়োগ রয়েছে। কৌশলগত বিনিয়োগ হিসেবে বিভিন্ন ব্যাংক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের মূলধন বিনিয়োগ করেছে। এখন এই বিনিয়োগকে হিসাবে ধরা না হলে তাতে শেয়ারবাজারে ব্যাংকগুলোর সম্মিলিত বিনিয়োগ সক্ষমতা অনেক বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সক্ষমতা তৈরির পর ব্যাংকগুলো আদৌ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াবে কি না, তা নির্ভর করছে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব সিদ্ধান্তের ওপর।

এ ছাড়া স্পেশাল পারপাস ভেহিক্যালস ও অলটারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড বা সমজাতীয় তহবিলের মাধ্যমে অবকাঠামোগত প্রকল্পে অর্থায়ন সুবিধাও বাড়ানো হয়েছে।

তহবিল সুবিধা পাবে বাজারসংশ্লিষ্টরা

 ২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পর ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তা দিতে গঠিত ৯০০ কোটি টাকার (বর্তমান আকার ৮৫৬ কোটি টাকা) তহবিল থেকে এখন থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিতে পারবে শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। গতকাল এ-সংক্রান্ত চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর ফলে এখন থেকে ওই তহবিল থেকে কম সুদে ঋণ নিয়ে বাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউসসহ বাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। বর্তমানে তহবিলটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)।