দরিদ্রবান্ধব নগর উন্নয়ন বিষয়ে প্রাক-বাজেট সংলাপ

দরিদ্রবান্ধব নগর উন্নয়ন বিষয়ে প্রাক-বাজেট সংলাপ অনুষ্ঠানে বক্তারা। মহাখালী, ঢাকা, ২০ মে। ছবি: সংগৃহীত
দরিদ্রবান্ধব নগর উন্নয়ন বিষয়ে প্রাক-বাজেট সংলাপ অনুষ্ঠানে বক্তারা। মহাখালী, ঢাকা, ২০ মে। ছবি: সংগৃহীত

অপর্যাপ্ত সরকারি বরাদ্দ, অপ্রতুল জনবল, বর্তমান চাহিদার সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ বিধিমালা, ত্রুটিপূর্ণ উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রভৃতি কারণে শহরের দরিদ্রদের চাহিদানুযায়ী সেবা দিতে পারছে না পৌরসভাগুলো। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় নগর উন্নয়ন এবং নগর দারিদ্র্য হ্রাসকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা, সর্বজনীন প্রবৃদ্ধি অর্জনে কৌশল নির্ধারণ এবং বৈষম্য হ্রাসে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ নিশ্চিত করা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ।

সোমবার বিকেলে রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে দরিদ্রবান্ধব নগর উন্নয়ন বিষয়ে প্রাক-বাজেট সংলাপ অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞেরা এসব কথা বলেন। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক, মিউনিসিপ্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ম্যাব) ও পাওয়ার অ্যান্ড পারটিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) যৌথ উদ্যোগে এ সংলাপের আয়োজন করা হয়।

সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান। অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এস এম গোলাম ফারুক, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শহীদ উল্লাহ খন্দকার, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল, পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সচিব শামসুল আলম। ব্র্যাকের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহের সভাপতিত্বে এই সংলাপের সঞ্চালনা করেন পিপিআরসির নির্বাহী সভাপতি হোসেন জিল্লুর রহমান।

পরিকল্পনামন্ত্রী মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, ‘নগর দরিদ্রদের জন্য বর্তমান সরকার জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। যার মধ্যে আছে বহুতল ভবন নির্মাণ ও জমি বরাদ্দ এবং গৃহঋণ। ঢাকা এনভায়রনমেন্টালি সাসটেইনেবল ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্ট, দেশের সব সিটি করপোরেশনের রাস্তা, ফুটপাত, নর্দমা উন্নয়ন, গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, দুর্যোগ–ঝুঁকি হ্রাসে ভবন সুরক্ষা উন্নীতকরণ ইত্যাদি প্রকল্প বর্তমানে চলমান রয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই প্রকল্পগুলোর জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হবে।’

সংলাপে বিশেষজ্ঞ মতামত দেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক সলীমুল হক, ম্যাবের সভাপতি মো. আবদুল বাতেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মাদারীপুর পৌরসভার মেয়র খালিদ হোসেন, ব্র্যাকের নগর উন্নয়ন কর্মসূচির প্রধান হাসিনা মোশরফা প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে শহরের দরিদ্রবান্ধব উন্নয়নের ভবিষ্যৎ ও চ্যালেঞ্জবিষয়ক একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন ম্যাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মাদারীপুর পৌরসভার মেয়র খালিদ হোসেন। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের ৩২৭টি পৌরসভার ২ কোটি ১৬ লাখের ওপরে বাসিন্দা। অথচ এই বিপুল জনগোষ্ঠীর সেবা দিতে স্থায়ী কর্মচারী আছেন মাত্র ৪৩ হাজার, আর অস্থায়ী কর্মচারী আছেন ২২ হাজার। পৌরসভাগুলোর সেবা কার্যক্রম জোরদার করতে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পৌরসভাগুলোর বাজেট বাড়ানো, পৌর বিধিমালা যুগোপযোগী করা, পৌর কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সরকারের রাজস্ব খাত থেকে দেওয়া, নগর দরিদ্রদের আবাসনব্যবস্থার প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা, পানি সরবরাহ এবং অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নে বিশেষ নজর দেওয়া।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘কিছু পরিমাণে বাজেট বাড়ালেই সমাধান হবে না। শহরায়ণের ঢেউ এখন গ্রামকেও সংকুচিত করে ফেলছে। তাই উন্নয়ন কৌশল নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। আলাদাভাবে দরিদ্রদের উন্নয়ন পরের কথা, সাধারণ উন্নয়নকাজও ঢিমেতালে চলে।’

ম্যাবের সভাপতি আবদুল বাতেন বলেন, ‘সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের চেষ্টা করেও আমরা কুলাতে পারছি না। জাতীয় বাজেটের ২ শতাংশও বরাদ্দ না থাকলে স্থানীয় সরকারগুলো কাজ করবে কীভাবে?’

ব্র্যাকের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, শহরের দরিদ্র মানুষের জন্য সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যৌথভাবে গৃহায়ণ কর্মসূচিতে অর্থায়ন করতে পারে। এ ছাড়া শহরে ক্রমবর্ধমান মানুষের চাপ এবং অগ্নিকাণ্ডের দুর্ঘটনার দিকে আরও বেশি নজর দেওয়া দরকার। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি