আরসিবিসির পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলা

রিজার্ভ চুরি
রিজার্ভ চুরি

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ফিলিপাইনের বিচার বিভাগ দেশটির রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের মামলা করেছে। সিএনএন ফিলিপাইন সূত্রে এই খবর পাওয়া গেছে।

দেশটির বিচার বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি মার্ক পেরেট বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, আরসিবিসির সাবেক কোষাধ্যক্ষ রাউল ভিক্টর ট্যান, জাতীয় বিক্রয় পরিচালক ইসমাইল রেয়েস, আঞ্চলিক বিক্রয় পরিচালক ব্রিগিত ক্যাপিনা, গ্রাহক সেবা বিভাগের প্রধান রোমুয়ালদো আগারাডো ও জ্যেষ্ঠ গ্রাহক সম্পর্ক ব্যবস্থাপক অ্যাঞ্জেলা রাথ টরেস—এই পাঁচজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তাঁরা সবাই আরসিবিসির রিটেইল ব্যাংকিং গ্রুপের সদস্য ছিলেন।

তদন্তকারী আইনজীবী তাঁদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার আইন ভঙ্গ করার যথেষ্ট প্রমাণ পেয়েছেন। সে জন্য তাঁদের আপিল অগ্রাহ্য করে এই মামলা করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘ইচ্ছাকৃতভাবে দেখেও না দেখার ভান করে থাকার মানে হলো অপরাধ সম্পর্কে ধারণা থাকা সত্ত্বেও ব্যবস্থা না নেওয়া। বিশেষ করে সন্দেহজনক অপরাধমূলক কার্যক্রম ঘটারসমূহ আশঙ্কা আছে—এ ব্যাপারে ধারণা থাকার পরও যৌক্তিক তদন্ত না করা। এই সন্দেহজনক রেমিট্যান্স লেনদেনের ব্যাপারে তাঁদের গা সওয়া মনোভাব মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এতে আমাদের ব্যাংকিং–ব্যবস্থার সততা ধাক্কা খেয়েছে’।

মামলাটি ফিলিপাইনের মাকাতি রিজিওনাল ট্রায়াল কোর্টে দায়ের করা হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এই আদালত অর্থ পাচারে আরসিবিসির সংশ্লিষ্ট শাখা ব্যবস্থাপক মারিয়া সান্তোস দেগুইতোর সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়।

হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি করা টাকা ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জুপিটার স্ট্রিটের এই শাখার চারটি ভুয়া হিসাবে পাঠায়। মারিয়া সান্তোস দেগুইতো সেই টাকা তোলার ব্যবস্থা করেন। সেই ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার পরবর্তীকালে ফিলিপিনো মুদ্রা পেসোয় রূপান্তরিত করা হয়। এরপর তা ফিলিপাইনের কয়েকটি ক্যাসিনোতে ঢুকে যায়। পরবর্তীকালে যা লাপাত্তা হয়ে যায়। এর মাত্র দেড় কোটি ডলার বাংলাদেশ ব্যাংক ফেরত পেয়েছে।

আটটি মামলার প্রতিটিতে দেগুইতোর চার থেকে সাত বছরের কারাদণ্ড হয়। এ ছাড়া তাঁর ১০ কোটি ৩ লাখ ডলার জরিমানা হয়।

>

অর্থ পাচার আইন ভঙ্গ করার যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে
অপরাধ সম্পর্কে ধারণা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা ব্যবস্থা নেননি
ফিলিপাইনের মাকাতি রিজিওনাল ট্রায়াল কোর্টে মামলা দায়ে

মার্ক পেরেট বলছেন, আইনজীবীরা এই পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেয়েছেন। যে হিসাবে টাকা এসেছে, সেগুলোর ওপর সাময়িক স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা কলকাঠি নেড়েছেন। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংক পাচারের ব্যাপারে অবহিত করার পরও এই পাঁচজন এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন।

এ বছরের ৩১ মার্চ বাংলাদেশ নিউইয়র্কের এক আদালতে আরসিবিসির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করে। এর কিছুদিন পর আরসিবিসি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাল্টা মানহানির মামলা করে।
তবে আরসিবিসির প্রত্যাশা, শিগগিরই এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রত্যাহার করা হবে। কারণ, তৃতীয় পক্ষের তদন্তে দেখা গেছে, টাকা পাচারের ব্যাপারে এই পাঁচজনের ধারণা ছিল না।