সুপার ধনীদের হাতে ৯০ শতাংশ সম্পদ

আবুল বারকাত
আবুল বারকাত

গত চার দশকে দেশের সমাজ-অর্থনীতিতে বহুমুখী দারিদ্র্য যেমন বেড়েছে তেমনি বিপুল বিত্ত-সম্পদ গুটি কয়েক মানুষের হাতে পুঞ্জীভূত হয়েছে। সেই ধনী গ্রুপে বর্তমানে সাড়ে ৪৩ লাখ মানুষ আছেন। তাঁদের মধ্যে স্বল্পসংখ্যক আবার সুপার ধনী, যাঁদের ১০ শতাংশ সমগ্র ধনিক শ্রেণির মোট সম্পত্তির ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। যদিও তাঁরা ধনী হয়েছেন লুণ্ঠন, দখল, বেদখল, জোর জবরদস্তি-মারপ্যাঁচের মাধ্যমে।

আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরার সময় সমিতির সভাপতি আবুল বারকাত এই কথা বলেন। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আজ শনিবার পঞ্চমবারের মতো বিকল্প বাজেট ঘোষণা করা হয়। সেখানে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য দেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামালউদ্দিন আহমেদ।

সমিতির পক্ষে আবুল বারকাত ১২ লাখ ৪০ হাজার ৯০ কোটি টাকার বিকল্প বাজেট প্রস্তাব করেছেন। আগামী অর্থবছরের জন্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রায় ৫ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিতে পারেন। সেই হিসাবে অর্থমন্ত্রীর চেয়ে দ্বিগুণ বড় বাজেট দিয়েছে অর্থনীতি সমিতি। সমিতির প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১০ লাখ ২ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। যার মধ্যে ৬৯ শতাংশ প্রত্যক্ষ কর ও ৩১ শতাংশ হবে পরোক্ষ কর। অর্থাৎ মোট বাজেট বরাদ্দের প্রায় ৮১ শতাংশের জোগান দেবে সরকারের রাজস্ব বিভাগ।

অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেটে খাতওয়ারি সর্বোচ্চ ২ লাখ ৮৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে। তারপর আছে জনপ্রশাসন, পরিবহন ও যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাত। সমিতি বলছে, বরাবরের মতো বাজেটের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ ও দুর্বল দিক হলো সময়মতো এবং মানসম্মত বাস্তবায়ন। সে জন্য বাজেট বাস্তবায়ন নীতিমালা প্রতি মন্ত্রণালয় বা সরকারি প্রতিষ্ঠানকে সুচারুভাবে প্রতিপালন করতে হবে। অন্যথায় উপযুক্ত শাস্তির বিধান থাকতে হবে।

কৃষি ফসলের উৎপাদন অঞ্চল গঠন ও কৃষককে কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য দেওয়ার প্রস্তাব করে আবুল বারকাত বলেন, চলতি বছর বোরো ধানে কৃষকের প্রকৃত লোকসান হবে মণপ্রতি ৫০০ টাকা। বিষয়টি নিয়ে সরকারের চিন্তিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের ক্রয়মূল্য ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ১ হাজার ২০০ টাকা করার প্রস্তাব করেন তিনি।

শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে অর্থনীতি সমিতির সভাপতি বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থায় বিদ্যমান বৈষম্য সমাজ জীবনকে প্রগতি বিমুখ করছে। শুধু তা–ই নয়, ১৯৭৫ সালের পর গত ৪৩ বছরে অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে এখন বাংলাদেশে প্রতি ৩ জন ছাত্রের ১ জন মাদ্রাসাগামী—এটি শিক্ষা ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ব্যর্থতার প্রত্যক্ষ ফল। এ ধরনের অবৈজ্ঞানিক ও বৈষম্যমূলক শিক্ষাব্যবস্থা একদিকে যেমন দারিদ্র্য-বঞ্চনা-বৈষম্য পুনরুৎপাদন করছে অন্যদিক তা ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতা পরিপুষ্ট করছে। প্রবণাতাটি মারাত্মক। আমরা আশা করছি, আগামী বাজেটে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট উত্থাপিত বাস্তব বিষয়াদি নিয়ে গভীর বিশ্লেষণসহ সমাধান-উদ্দিষ্ট পথ নির্দেশনা থাকবে।’