মুনাফা বাড়াতে গিয়ে বিপাকে ব্যাংক

>

দ্বিতীয়বার পুনঃ তফসিলের মাধ্যমে নিয়মিত করা ঋণের বিপরীতেও ঋণমান অনুযায়ী নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

পুনঃ তফসিলের মাধ্যমে ঋণ নিয়মিত করার পরও সংশ্লিষ্ট ঋণের বিপরীতে মানভেদে পুরো ঋণের অর্থ নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসেবে রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর তাতেই বিপদে পড়েছে সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এসব ব্যাংক নির্দিষ্ট হারে ডাউন পেমেন্ট নিয়ে বেশ কিছু মন্দ মানের ঋণ পুনঃ তফসিলের মাধ্যমে নিয়মিত করে নেয়। যাতে করে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশনিং কম করতে হয় এবং মুনাফা বাড়িয়ে দেখানো সম্ভব হয়। কিন্তু এবার তাতে বাদ সেধেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে জানিয়ে দেয়, পুনঃ তফসিল সুবিধায় দীর্ঘদিনের অনিয়মিত ঋণও নিয়মিত করা যাবে ঠিকই, কিন্তু প্রভিশনিং করতে হবে ঋণ নিয়মিত হওয়ার আগের মান অনুযায়ী। অর্থাৎ পুনঃ তফসিলের মাধ্যমে নিয়মিত হওয়ার আগে যদি কোনো ঋণ পুরোপুরি মন্দ মানের থাকে, তাহলে ওই ঋণের বিপরীতে শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হবে।

জানা গেছে, বেসরকারি খাতের স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ২০১৮ সালের আর্থিক হিসাব চূড়ান্তের আগে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বড় অঙ্কের ঋণ দ্বিতীয়বারের মতো পুনঃ তফসিল করে। ঋণগুলো নিয়মিত করে আর্থিক স্বাস্থ্য ভালো করতেই এ উদ্যোগ নেয় ব্যাংকটি। বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ঋণ পুনঃ তফসিলের অনুমোদনও দেয়। ফলে এসব ঋণ নিয়মিত হয়ে যায়। সাধারণত নিয়মিত ঋণের বিপরীতে ১ শতাংশ হারে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) রাখতে হয়। কিন্তু স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ঋণ নিয়মিত করার পরও সেই সুবিধা পাচ্ছে না। ব্যাংকটিকে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হচ্ছে ঋণ নিয়মিত হওয়ার আগের মান অনুযায়ী। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়ে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক।

শুধু স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক নয়, দ্বিতীয়বার পুনঃ তফসিলের মাধ্যমে নিয়মিত করা ঋণের বিপরীতেও নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হবে—কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছে সরকারি-বেসরকারি কমপক্ষে ২৫টি ব্যাংক।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিয়মিত ঋণে ১ শতাংশ প্রভিশন রাখলেই হয়। তবে দেখা যায় আর্থিক বছর শেষ হওয়ার আগে আগে মুনাফা বাড়িয়ে দেখাতে অনেক ব্যাংক পুরোনো খেলাপি ঋণ নিয়মিত করে নেয়। এ প্রবণতা বন্ধে দ্বিতীয়বার পুনঃ তফসিল করা ঋণের বিপরীতেও প্রভিশন রাখতে বলা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর ভিত্তি মজবুত করতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তের কারণে সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিকসহ রাষ্ট্রমালিকানাধীন সব কটি ব্যাংকের সঞ্চিতি সংরক্ষণের চাহিদা বেড়ে যায়। এসব ব্যাংক পরের তিন বছরে বাড়তি সঞ্চিতি সংরক্ষণের শর্তে গত বছরের আর্থিক হিসাব চূড়ান্ত করেছে। আর বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে মার্কেন্টাইল, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ওয়ান, ন্যাশনাল, প্রিমিয়ার, সাউথইস্ট, স্ট্যান্ডার্ড, ট্রাস্ট ব্যাংক একই সুবিধা নিয়েছে। আর ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলোর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি, সোশ্যাল ইসলামী ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকও এ সুবিধা নিয়ে মুনাফা বাড়িয়ে দেখিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক চিঠি দিয়ে ব্যাংকগুলোকে বলেছে, ব্যাংকের মোট ঋণ ও অগ্রিম, অন্যান্য সম্পদ, বিনিয়োগ হিসাব, আন্তশাখা লেনদেন হিসাব, আদালতের আদেশে নিয়মিত দেখানো ঋণ ও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক খেলাপি করে দেওয়া ঋণের বিপরীতে চাহিদা অনুযায়ী নিরাপত্তা সঞ্চিতি রেখে আর্থিক হিসাব চূড়ান্ত করতে হবে।

 এ বিষয়ে জানতে একাধিক বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছর ঋণ পুনঃ তফসিল করে ব্যাংকগুলোর কোনো লাভ হয়নি। আগের মতোই নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হয়েছে। ফলে অনেককে বিলম্বে প্রভিশন রাখার অনুমোদন নিতে হয়েছে। তবে এতে সাময়িকভাবে ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা খারাপ হলেও দীর্ঘ মেয়াদের জন্য ভালো হয়েছে।’