বারবার লোকসানে উবার

অ্যাপভিত্তিক ট্যাক্সি সেবাদাতা কোম্পানি উবারের জনপ্রিয়তা বাড়লেও লোকসান কমেনি। ছবি: রয়টার্স
অ্যাপভিত্তিক ট্যাক্সি সেবাদাতা কোম্পানি উবারের জনপ্রিয়তা বাড়লেও লোকসান কমেনি। ছবি: রয়টার্স

আবারও লোকসানে পড়তে হয়েছে অ্যাপভিত্তিক ট্যাক্সি সেবাদাতা কোম্পানি উবার টেকনোলজিস ইনকরপোরেশনকে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই কোম্পানির লোকসানের পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি ডলার।

গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে উবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, খাবার পরিবহন খরচ এবং চালকদের বেতন বেড়ে যাওয়ায় এ প্রান্তিকে লোকসানের মুখ দেখেছে কোম্পানি। কোম্পানিটি বলছে, এ সময়ে আয় ২০ শতাংশ কমে হয়েছে ৩১০ কোটি ডলার। অবশ্য ১০০ কোটি ডলার থেকে ১১০ কোটি ডলার লোকসান হতে পারে—এমনটা আগেই জানিয়েছিল উবার। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

বারবার লোকসানের মুখ দেখলেও এখনো নিরাশ নন উবারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দারা খোসরোশাহী। নির্বাহীদের নিয়ে এক বৈঠক করে ২০১৯ সালকে ‘বিনিয়োগের বছর’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্যবসায়িক উন্নতির স্বার্থে ভোক্তাদের সুবিধা কিছুটা কমিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ওই বৈঠকের পর পুঁজিবাজারে উবারের শেয়ারের দর ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে যায়।

উবারের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৪৫ ডলার। তবে এই মুহূর্তে আইপিও মূল্যের চেয়ে অন্তত ১০ শতাংশ কমে লেনদেন হচ্ছে উবারের শেয়ার। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা আনতে কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে হবে যে উবারও লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারে। উবারকে ঘিরে গ্রাহকের উৎসাহ এবং রাইড শেয়ারিং অ্যাপের জগতে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকাকে পুঁজি করে ব্যবসায় টিকে আছে কোম্পানিটি।

এ মাসের শুরুতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) মূল্য নির্ধারণের পর বিশ্লেষকদের সঙ্গে আলোচনায় খোসরোশাহী বলেন, ‘আমাদের গল্প খুবই সাধারণ। আমরা বৈশ্বিক খেলোয়াড়। মাপকাঠিতে দ্রুত বেড়ে উঠে দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকতে চাই আমরা।’ বিনিয়োগকারীদের স্বস্তি দিতে নতুন এই কোম্পানি তাদের আর্থিক লক্ষ্য পূরণে সফল হয়েছে বলেও জানান তিনি।

গত বছরের তুলনায় এ বছরের প্রথম তিন মাসে উবারের ব্যয় বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। মে মাসের শুরুতে বাজারে আইপিও ছাড়ে উবার। এতেই ব্যয় বেড়ে যায় তাদের। গত ১১ মে লেনদেনের প্রথম দিনই ব্যাপক দরপতনের মুখে পড়ে উবারের শেয়ার। শেয়ারের দর কমে ৪১ দশমিক ৫১ ডলারে দাঁড়ায়। বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করতে না পারার কারণেই মূলত এ পতন হয়েছে বলে ধারণা করেন বিশ্লেষকেরা। এ ছাড়া মোট বুকিং, ড্রাইভার খরচসহ কোম্পানিটির অন্যান্য খরচ বেড়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ। এ ছাড়া বাজারে নতুন রাইডারদের নিয়োগ দেওয়া নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে তাদের।

১০০ কোটি ডলার লোকসানের কারণে প্রতি শেয়ারে উবারের লোকসান দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ২৬ ডলার। গত বছরের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) উবারের লোকসানের পরিমাণ ছিল ৮৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার। আয় হয়েছিল ২৯৭ কোটি ডলার।

এর আগে ২০১৭ সালে ৯ মাসে উবারের লোকসান হয় ২২০ কোটি ডলার। ২০১৮ সালের শুরুতে দায়িত্ব নেন নতুন নির্বাহী দারা খোসরোশাহী। ওই বছর প্রতিষ্ঠানটির লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮০ কোটি ডলার।

বিশ্বের অনেক শহরের মতো ঢাকাতেও বেশ জনপ্রিয় উবার। উবার ছিল সিলিকন ভ্যালি গ্রুপের অধীনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্টার্টআপ কোম্পানি। এর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছেন গোল্ডম্যান স্যাকস গ্রুপ এবং ই-কমার্স জায়ান্ট আমাজনের প্রধান নির্বাহী জেফ বেজোস।