ডিজিটাল কেনাবেচায় সাশ্রয়

ঈদের কেনাকাটা মানেই বাড়তি আনন্দ। আর সেটা যদি হয় নগদ টাকাবিহীন, তাহলে তো কথাই নেই। বিভিন্ন ধরনের কার্ডই এনে দিয়েছে আনন্দময় কেনাকাটার এই সুবিধা। এর পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিং ও কিউআর কোডনির্ভর কেনাকাটা তো রয়েছেই। ডিজিটাল সেবানির্ভর এ ধরনের কেনাকাটায় ভোক্তারা যেমন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন, তেমনি তাঁদের অধিক হারে আকৃষ্ট করতে বিক্রেতারাও দিচ্ছে নানা রকমের ছাড়। ফলে এ বছরের ঈদকেন্দ্রিক ডিজিটাল কেনাকাটা বেশ জমে উঠেছে।

দেশীয় ব্র্যান্ড আড়ং, ইয়েলো, লারিভ, ক্যাটসআই, অঞ্জন’স, সেইলরসহ বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস এখন অনলাইনেও পণ্য বিক্রি করছে। তাদের অনলাইনে পোশাক বিক্রির টাকা কার্ডে বা মুঠোফোনের মাধ্যমে পরিশোধ করেন ক্রেতারা। আবার দারাজ, আজকের ডিল, ইভ্যালি, বাগডুমসহ অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতেও ঈদকেন্দ্রিক কেনাকাটা অনেক বেড়েছে। এসব প্ল্যাটফর্মে নগদের চেয়ে কার্ডে বা মুঠোফোনে বেশি অর্থ পরিশোধ হচ্ছে। ফলে বলা যায়, ঈদকেন্দ্রিক কেনাবেচায় অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে ডিজিটাল মাধ্যমগুলো।

ফ্যাশন হাউসমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্যাশন উদ্যোক্তা সমিতির সাবেক সভাপতি আজহারুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশি দশে কেনাকাটায় বিকাশে অর্থ পরিশোধ করলে ২০ শতাংশ অর্থ ফেরত পাচ্ছেন গ্রাহক। আবার ইউসিবি, ঢাকা ব্যাংক ও লঙ্কাবাংলা কার্ডেও ভালো অফার রয়েছে। এ কারণে ভোক্তাদের কেনাকাটা কিছুটা বেড়েছে। তাদের ৪০ শতাংশ কেনাকাটা এসব ডিজিটাল মাধ্যমে হচ্ছে।’ দেশি দশে রয়েছে ১০টি ফ্যাশন হাউস। সেগুলো হচ্ছে সাদাকালো, কে ক্র্যাফট, অঞ্জন’স, রং বাংলাদেশ, নাগরদোলা, বিবিয়ানা, বাংলার মেলা, নিপুণ, দেশাল ও সৃষ্টি।

প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদের আগে কেনাকাটায় বিশেষ সুযোগ দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। তবে তা সবার জন্য নয়, যাঁরা ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করেন, তাঁরাই কেবল কেনাকাটায় বিশেষ ছাড় পাচ্ছেন। এখন বাংলাদেশে উৎসব ঘিরে পণ্যের দামে বিশেষ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়ের আয়োজনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ব্যাংকগুলোর ইস্যু করা কার্ড।

বাংলাদেশে কেনাকাটা বা লেনদেনে নগদ অর্থের পরিবর্তে কার্ডের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। আর কার্ডে কেনাকাটায় পণ্যের দাম কমাতে সহযোগিতা করছে ব্যাংকগুলো। এ ছাড়া ঈদে ঘরে ফেরা এবং বিদেশভ্রমণের ক্ষেত্রে আকাশপথে বিমানভাড়ায়ও ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে।

জানা গেছে, বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ডধারীদের জন্য নির্দিষ্ট শোরুম থেকে কেনাকাটার বিপরীতে ১০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় রয়েছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো নতুন গ্রাহক আকর্ষণের পাশাপাশি পুরোনো গ্রাহকদের ‘ঈদ উপহার’ দিচ্ছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে আড়ং ও অ্যাপেক্সে কেনাকাটায় মিলছে ৩০ শতাংশ ছাড়। ১২ শতাংশ ছাড় মিলছে আগোরা, মীনাবাজার ও স্বপ্নে কেনাকাটায়। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) গ্রাহকেরা কার্ডে কেনাকাটায় আড়ং, অ্যাপেক্স, দেশি দশ, রিচম্যান, ইনফিনিটি, আগোরা ও ইউনিমার্টে পাচ্ছেন ১০ শতাংশ ক্যাশ ব্যাক সুবিধা। আরও কিছু ব্র্যান্ডে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত সুবিধা পাচ্ছেন ব্যাংকটির গ্রাহকেরা।

এনআরবি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে আড়ংয়ে কেনাকাটায় মিলছে ২৬ শতাংশ ছাড়। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কেনাকাটায় মিলছে ২০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড়। ব্র্যাক, ডাচ্-বাংলা, ইস্টার্ণ ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংকের গ্রাহকেরাও কার্ডের মাধ্যমে কেনাকাটায় পাচ্ছেন বিশেষ ছাড়। দেশীয় দি সিটি ব্যাংকের সব আমেরিকান এক্সপ্রেস কার্ডধারীদের জন্য তারকা রেস্তোরাঁয় মিলছে একজনের সঙ্গে আরও একজনের বিনা মূল্যে খাওয়ার সুবিধা। এ ছাড়া বাংলাদেশ বিমানে ভ্রমণের ক্ষেত্রেও ছাড় পাচ্ছেন ব্যাংকটির গ্রাহকেরা। তাদের কার্ডে কেনাকাটায় রয়েছে আরও নানা সুবিধা।

>

কার্ডে কেনাকাটা
দেশে দেড় কোটির বেশি ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড রয়েছে
এ ছাড়া রয়েছে ১০ হাজার ৩৫৫টি এটিএম বুথ ও ৪৫ হাজার ৮৯৬টি পয়েন্ট অব সেলস

সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, উন্নত দেশগুলোতে বিভিন্ন উৎসবে কম দামে কেনাকাটা করা যায়। বাংলাদেশে গ্রাহকদের সে স্বাদ দিতে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ছাড় দিয়ে যাচ্ছে, যা ঈদের কেনাকাটাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।

বর্তমানে দেশে দেড় কোটির বেশি ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। এসব কার্ডের মাধ্যমে গত ডিসেম্বরে লেনদেন হয়েছে ১৩ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। সারা দেশে এটিএম বুথ রয়েছে ১০ হাজার ৩৫৫ টি। কেনাকাটার জন্য পয়েন্ট অব সেলস রয়েছে ৪৫ হাজার ৮৯৬ টি।

এদিকে ডিজিটাল কেনাকাটার বড় অংশ এখন রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নিয়ন্ত্রণে। বিশেষ করে বিকাশ ও রকেটের মাধ্যমে। এবার ঈদকে ঘিরে বিকাশের গ্রাহকেরা সারা দেশের বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে ২০ শতাংশ পর্যন্ত এবং কিছু হাউসে কেনাকাটায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাচ্ছেন।

বিকাশ কর্তৃপক্ষ জানায়, রমজান মাসে এ পর্যন্ত ব্যাংকের হিসাব থেকে দুই লাখ বার নিজের বিকাশ হিসাবে টাকা জমা করেছেন গ্রাহকেরা। আর গ্রাহকেরা ঈদের কেনাকাটায় ছয় লাখ বার অর্থ পরিশোধ করেছেন, যেটা গত ঈদে ছিল চার লাখ বার।

এ বছর পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে প্রায় ৬৫০টি ফ্যাশন হাউস ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ডের ৪ হাজার ৩০০ টির বেশি দোকানে ২০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক সুবিধা দিচ্ছে বিকাশ। অনেক ই-কমার্স সাইট রয়েছে এই তালিকায়। সারা দেশে ছোট ছোট প্রায় ছয় হাজার মার্চেন্ট পয়েন্টে মিলছে ১ হাজার টাকার পেমেন্টে ৫০ টাকা ক্যাশব্যাক সুবিধা। সুপারশপগুলোতে ১ হাজার টাকার পণ্য কিনলে পাওয়া যাচ্ছে ১০০ টাকা ক্যাশব্যাক।

বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস অ্যান্ড পিআর শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব সুবিধার ফলে গ্রাহকদের অর্থ পরিশোধ করতে কোনো খরচ লাগছে না। একই সঙ্গে তাঁরা অর্থ ফেরতও পাচ্ছেন। আবার এ কারণে পণ্যও বেশি বিক্রি হচ্ছে। এ ধরনের ছাড়ে আমাদের গ্রাহক, ক্রেতা সবাই খুশি।’