আমানতকারীদের দেখার কেউ নেই: ইব্রাহিম খালেদ

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ

দেশের ব্যাংক খাতের মূল সমস্যা হলো খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণ কমলে সুদহার এমনিতেই কমে যাবে। অথচ সরকার এদিকে নজর না দিয়ে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ করতে বলছে। আর ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে নতুন নতুন সুযোগ দিচ্ছে। বিষয়টা এমন যে ঘোড়ার আগে গাড়ি দৌড়াবে। সরকার যে নীতি নিচ্ছে, তা সংগতিপূর্ণ হচ্ছে না।

ঋণখেলাপিদের সঙ্গে ব্যাংকমালিকদের যোগসাজশের কারণে ব্যাংক খাতে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর ফলে পুরো খাতেই একধরনের অস্থিরতা চলছে। এ জন্য পেশাদার ব্যাংকারদের পক্ষে সঠিকভাবে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এখন আমানতকারীদের স্বার্থ দেখার কেউ নেই। এ দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। এ সংস্থাটিও এখন আর সে ভূমিকা রাখতে পারছে না। সরকারের উচিত হবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা দেওয়া। তাহলে গ্রাহকদের আস্থা বাড়বে, অনেক সংকটও কেটে যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দুর্বল করা হলে জনগণ যে ব্যাংকে অর্থ সঞ্চয় করবে, সেটি ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা থাকে না। পৃথিবীর কোথাও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্তৃত্ব খর্ব করা হয় না। ভারতে মোদি সরকার রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া থেকে রিজার্ভের কিছু অর্থ অন্য খাতে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। এর প্রতিবাদে গভর্নর পদত্যাগ করলেন। পরে সরকার তার অবস্থান থেকে সরে আসে।

আবার ঋণখেলাপিরা সরকার থেকে একের পর এক সুবিধা আদায় করছে। এর ফলে তারা তো ব্যাংকারদের পাত্তা দেবে না। ভালোমন্দ ঋণগ্রহীতা বিচারের ক্ষেত্রে ব্যাংকের হাতে অনেক অস্ত্র আছে। তিন-তিনবার পুনঃ তফসিল করেও যারা ঋণ শোধ করতে পারবে না, তাদের ভালো বলার সুযোগ নেই। নতুন বিভিন্ন সুবিধার ফলে ভালো গ্রাহকদের প্রতি শুধু অবিচার নয়, অত্যাচার করা হয়েছে।

খেলাপি ঋণ ১ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। এর অর্থ হলো ব্যাংক খাতের অবস্থা উদ্বেগজনক পর্যায়ে। নতুন ঋণ নীতিমালা শিথিলের কারণে জুন মাসে খেলাপি ঋণ আবার হয়তো কমে যাবে। তবে তা দীর্ঘমেয়াদি হবে না।

আর ব্যাংকে টাকার সংকটের পেছনে দায়ী আস্থাহীনতা। ব্যাংকগুলোতে যেভাবে অনিয়ম হচ্ছে, এ কারণে ব্যাংকে আগের মতো টাকা জমা হচ্ছে না। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের মতো বড় প্রকল্পের ৮০ শতাংশ খরচই হচ্ছে বিদেশি মুদ্রায়। এ কারণে টাকা দিয়ে ব্যাংকগুলোকে ডলার নিতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের লক্ষ্য ঠিক করতে হবে, বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের সঙ্গে বড় প্রকল্পের নির্মাণকাজের সমন্বয় করতে হবে। না হলে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের সংকট কাটবে না। দেশি টাকারও সংকট দূর হবে না।

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ: সাবেক ডেপুটি গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক